- প্রকাশিত : ২০২৩-০১-২৯
- ৯১ বার পঠিত
স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর বিশাল জনসভায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে মানুষের শান্তি থাকে। দেশের উন্নতি হয়। আর বিএনপি থাকলে হয় লুটপাট। আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ এই দেশের মানুষের কথা ভাবে না। উন্নয়নে কাজ করে না।’
রোববার বিকালে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানের জনসমুদ্রে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী এসব কথা বলেন। রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ এই জনসভার আয়োজন করে। সরকার প্রধান এই জনসভা থেকে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য রাজশাহীর মানুষকে ওয়াদা করান। বিশাল জনসমুদ্র দুই হাত উচিয়ে আগামী নির্বাচনেও নৌকা মার্কায় ভোট দেবার প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রীকে।
বক্তব্যের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামানসহ জাতীয় চার নেতা এবং পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের সকল শহীদদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশ স্বাধীন করেছিলেন। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় সেটা করে যেতে পারেননি। আপনারা জানেন, ১৫ আগস্ট। জাতির পিতাকে হত্যা করে। একই সাথে হত্যা করে আমার মা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব। ছোট্ট ভাই রাসেলকেও। আমি আর আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। আমরা দেশে আসতে পারিনি। রিফুজি হিসেবে বিদেশে থাকতে হয়েছিল ছয়টি বছর। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতি। আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করে। আমি এই দেশে ফিরে আসি এমন একটি দেশে, যেখানে আমার কোন বিচার চাওয়ার অধিকার ছিল না। জাতির পিতার খুনিদেরকে ইন্ডেমনিটি দিয়ে বিচারের হাত থেকে রেহাই দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতায় বসানো হয়। সেই অবস্থায় আমি দেশে ফিরে আসি শুধু বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য ফেরানোর লক্ষ্য নিয়ে। সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে, যেভাবে আমার বাবা জাতির পিতা চেয়েছিলেন এই বাংলাদেশকে গড়তে।’
তিনি বলেন, ‘৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া, কেউ এ দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা দেয়নি, চিন্তাও করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার এসে বাংলাদেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবতর্নে কাজ শুরু করে। রাজশাহীতে জাতির পিতা স্বাধীনতার পর কলকারখানা চালু করে দেন। এরপর সবই বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ সরকার পর আমরা কাজ করি। পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে রক্ষার জন্য দীর্ঘ বাধ করে দিয়ে সেই ভাঙন আমরা রোধ করে দিই। এখানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। ইতিমধ্যে আমরা অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছি রাজশাহীর মানুষের জন্য।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা এখানে সুগার মিল, টেক্সটাইল মিল, জুটমিল করে দিয়েছিলেন। গোদাগাড়ীতে ডেইরিং ফার্ম। এমনকি রেশম শিল্প পর্যন্ত ধ্বংস করে দিয়েছিল পাঁচত্তর পরবর্তী সরকাররা। আমরা আমাদের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে এটা হয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকারে আসে। বিএনপি অনেক কথা বলে। তারা আমাদেরকে নোটিশ দেয়। আমরা নাকি পালানোর পথ পাব না। এই বিএনপি-জামায়াত জোট যারা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞেস করি, পালায় কে? আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না। পিঁছু হটে না। ওই জিয়াউর রহমান বাধা দিয়েছিল দেশে আসতে দেবে না। আমি বাধা অতিক্রম করেই দেশে ফিরে আসি। ২০০৭ সালে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে, তখনও আমাকে দেশে ফিরতে দেবে না। আমি জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম। আমার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস দেওয়া হয়েছিল। আমি বলেছিলাম, আমি যাব এই কেস মোকাবিলা করব। আমি দেশে ফিরে এসেছি শুধুমাত্র এই বাংলার মানুষের কথা চিন্তা করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি আজকে বলে, পালানোর সুযোগ পাবে না আওয়ামী লীগ, আমি তাদের বলতে চাই আওয়ামী লীগ পালায় না, পালায় আপনাদের নেতারা। বিএনপির নেতারা কে? বিএনপি নাকি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করবে। কাকে নিয়ে? দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত তাদের এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যে নাকি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্ট্যাম্প কাগজে মুচলেকা দিয়েছিল, আর কখনও রাজনীতি করবে না বলে দেশ থেকে ভেগে গিয়েছিল, সেই কথা কি আমাদের বিএনপি নেতাদের মনে নেই। দুর্নীতিতে সাজাপ্রাপ্ত খালেদা-তারেক। খালেদা জিয়া তারেক-কোকোর মাধ্যমে যে টাকা পাচার করেছিল মানি লন্ডারিং করে, তার ৪০ কোটি টাকা আমরা বাংলাদেশে ফেরত নিয়ে এসেছি। এর জবাব কি তারা দিতে পারবে?। আওয়ামী লীগ কখনও পালায় না, আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে কাজ করে। এই সংগঠন জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এই সংগঠন যখনই ক্ষমতায় এসেছে, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। ৪০ ভাগ দারিদ্রসীমা আমরা ২০ ভাগে নামিয়েছি। বয়স্কভাতা, বিধবাভাতা, দুস্থ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, সমস্ত ভাতা দিয়ে যাচ্ছি। মা- বোনদের মাতৃত্বকালীন ভাতা আমরা দেই। আমাদের এই দেশের একটা মানুষও গৃহহীন-ভূমিহীন থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষকে বিনাপয়সায় দুই কাঠা জমিসহ ঘর করে দিচ্ছি, যারা বাকি আছে তাদেরও করে দেব। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের দেশে কোন মানুষ গৃহহীন থাকবে না। কোন মানুষ না খেয়ে থাকবে না। এই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
রাজশাহীর উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই রাজশাহী সাব সময় অবহেলিত ছিল। আপনারা বিগত মেয়র ইলেকশনে আমাদের ভোট দিয়েছেন। আমি আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। কৃতজ্ঞতা জানাই। এই রাজশাহীতে কিছুক্ষণ আগে কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করলাম। ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত এই ১৪ বছরে শুধুমাত্র রাজশাহী জেলা ও মহানগরে ১০ হাজার ৬৬০ কোটি টাকার বিভিন্ন প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করে দিয়েছি। এই মহানগরে চার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করেছি। আজকে কিছুক্ষণ আগে এক হাজার ৩৩৩ কোটি টাকার ২৬টি প্রকল্প উদ্বোধন করলাম। ৩৭৫ কোটি টাকার ছয়টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলাম। এই প্রকল্পগুলি আপনাদের জন্য আমি উপহার হিসেবে দিয়ে গেলাম।’
তিনি বলেন, ‘রাজশাহীতে পানির অভাব। পরিশুদ্ধ পানি যেন রাজশাহীর মানুষ পায়, সেই ব্যবস্থা করতে করেছি। রাজশাহী ওয়াসা ভবন নির্মাণ করে দিচ্ছি। বিকেএসপির আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যেখানে খেলাধুলার ট্রেনিং নেওয়া হয়, আমরা রাজশাহীতেও বিকেএসপি আঞ্চলিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করে দিচ্ছি যাতে যুবসমাজ খেলাধুলায় আগ্রহী হয়। এই ধরনের কাজগুলো আগামীতেও করে যাব। আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাই। ডিজিটাল বাংলাদেশ আমরা করেছি। রাজশাহীতে আমরা বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক করে দিয়েছি। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে ছেলেমেয়েরা দেশে-বিদেশে কাজ পাবে। রাজশাহীতেও নভোথিয়েটার করে দিচ্ছি।’
আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই ২০০১ সালের কথা চিন্তা করেন। বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায়। প্রতিয়িত রাজশাহীতে খুন, হত্যা, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, নারী ধর্ষণ, নির্যাতন। এই রাজশাহীতে ফাহিমা, মহিমা, নাজুফা কীভাবে তাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছে ওই বিএনপি ক্যাডার বাহিনী এবং জামায়াত জোট। একটা বাচ্চা মেয়ে, গ্যাংরেপ করা হলো। তার বাবা মা নৌকায় ভোট দিয়েছিল সেই কারণে। আরে নৌকায় ভোট না দিলে দেশ স্বাধীন হতো না। দেশ স্বাধীন না হলে ওদের নেতা জিয়াউর রহমান মেজর থেকে মেজর জেনারেলের প্রমোশন পেত না। এটা তারা ভুলে যায়। দেশ স্বাধীন না হলে কোনদিন ক্ষমতায় আসতে পারতো না খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রী হতে পারত না। নৌকার ওপর এত রাগ কেন? নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ কি পায়? আজকে খাদ্যের নিরাপত্তা পাচ্ছে। পড়ালেখার নিশ্চয়তা পাচ্ছে। রোগে চিকিৎসা পাচ্ছে। কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়েছি বাড়ির কাছে। মা- বোন হেঁটে গিয়ে চিকিৎসা পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। বিনাপয়সায় ৩০ প্রকার ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। আগামীতে সেখানে যেন ডায়াবেটিস পরীক্ষা হয়, প্রেশার পরীক্ষা করা যায়, আমরা ইনসুলিন দেওয়ারও ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। সেইভাবেই আমরা মানুষের সেবা করি। নৌকায় ভোট দিয়েছেন বলেই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। আর রাস্তাঘাট, একই দিনে ১০০ সেতু, একই দিনে ১০০ সড়ক কোন সরকার করতে পেরেছে? কোন সরকার না। আওয়ামী লীগ সরকার, নৌকা মার্কার সরকার করে দেখিয়েছে।’
করোনাকালীন সময়ে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাকালীন সময় যখন সবকিছু বন্ধ, আমরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলাম বলে বিনাপয়সায় করোনা টেস্ট করার ব্যবস্থা, বিনাপয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি। পৃথিবীর ধনী দেশও তো দেয় নাই। এই আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে। কোন পরিবার যেন কষ্টে না থাকে সেদিকে বিবেচনা করেছি। এখন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ও করোনার কারণে বিশ^ব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি। যে জিনিস ছয় ডলারে কিনতাম, তা কিনছি ৬৮ ডলারে। যে জিনিস ২০০ ডলারে কিনতাম, তা কিনছি ৬০০ ডলারে। তারপরও আমরা থেমে থাকিনি। আমরা এক কোটি মানুষের জন্য টিসিবির কার্ড করে দিয়েছি। মাত্র ৩০ টাকা কেজিতে চাল কিনতে পারবেন। যারা নিম্নবিত্ত, তারা ১৫ টাকা কেজিতে চাল নিতে পারবেন। যারা একেবারে হতদরিদ্র তাদের বিনাপয়সায় ভিজিডি-ভিজিএফের মাধ্যমে বিনাপয়সায় ৩০ কেজি করে চাল দিয়ে যাচ্ছি। চাল, ডাল, তেল, চিনি প্রত্যেকটা জিনিস অতিরিক্ত দাম দিয়ে কিনে আনলেও আমরা কমমূল্যে সাধারণ মানুষকে দিচ্ছি যেন মানুষের কষ্ট না হয়।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা প্রত্যেকটা মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এমনকি প্রথমবার সরকারে এসে আমরা খাদ্য নিরাপত্তা থেকে শুরু করে কমিউনিটি ক্লিনিক, আমার বাড়ি আমার খামার করে দিয়েছি। ক্ষুদ্র সঞ্চয় ব্যবস্থা করে দিয়েছি। পল্লি সঞ্চয় ব্যাংক করে দিয়েছি। সেই সাথে সাথে মসজিদ-ভিত্তিক শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। মসজিদ-মন্দির যেন প্রাথমিক শিক্ষা দিতে পারে ধর্মীয় শিক্ষার সাথে সাথে। ইমাম-মোয়াজ্জিনদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করে দিয়েছি। আমরা ডিজিটাল কোরআন শরীফ করে দিয়েছি, যেখানে আরবীতে লেখা থাকবে, বাংলায় উচ্চারণ তর্জমাসহ সেটি আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে। ৫৬০টা মডেল মসজিদ করে দিচ্ছি। কোন সরকার করেছে? বিএনপি ছিল, খালেদা জিয়া-জিয়া এসব কেউ করেছে? কেউ করেনি। করে শুধু আওয়ামী লীগ।’
তিনি বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে ইমাম-মোয়াজ্জিনদের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা করেছি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ তহবিল থেকে। সাধারণ মানুষকেও আমরা অর্থ সহায়তা দিয়েছি। আওয়াসী লীগ জনগণকে দিতে আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে জনগণ পায়। এটা হলো বাস্তব কথা। আমরা চাই এই দেশ এগিয়ে যাক। দেশকে উন্নত করতে চাই। আমরা মানুষের জন্য কাজ করি। আর বিএনপি ওরা কি করে? মানুষ খুন করা, অগ্নিসন্ত্রাস। ৩ হাজার ৮০০ বাস, ২৯টা ট্রেন, লঞ্চ, প্রায় ৭০টা সরকারি অফিস, ছয়টা ভূমি অফিস তারা আন্দোলনের নামে পুড়িয়েছে। আমি জানি না, আপনারাই বিবেচনা করেন, কোন মানুষ জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারতে পারে? এই বিএনপি জামায়াত কীভাবে জীবন্ত মানুষগুলিকে পুড়িয়ে মেরেছে। শুধু সাধারণ মানুষ না। পুলিশকে মাটিতে ফেলে এই রাজশাহীতে পিটিয়েছে! অমানবিক চরিত্র তাদের। তারা মানুষ চেনে না। তারা মানুষের জন্য কিছু করে না। তাদের কাজ খালি নিজে লুটেপুটে খাবে।’
বিএনপির সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে আপনারা জানেন না, জিয়াউর রহমান যখন মারা গেল, তখন দেখা গেল কি? কিছু রেখে যায় নাই। একটা ভাঙা স্যুটকেশ আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া। পরে দেখা গেল, সে ভাঙা স্যুটকেশ কোথায়! খালেদা জিয়ার মূল্যবান শাড়ি ফ্রান্স থেকে কিনে আনে। এত টাকা চুরি করে বিদেশে পাচার করেছে যে, এখন যান আপনারা দেখবেন কীভাবে আয়েশী জীবনযাপন করেছে আর আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি সেই ডিজিটাল মাধ্যমে আমাদের গীবদ গায়, আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। আর মানুষকে উষ্কানি দেয়, এটাই তাদের কাজ। বাংলাদেশের মানুষের কোন ভাল তারা সহ্য করতে পারে না। এটা হলো বাস্তবতা। এরা অপকর্ম-লুটপাট অপকর্ম এগুলো করতে পারে। বাংলা ভাই সৃষ্টি করে এই রাজশাহীতে অস্ত্রসহ প্রকাশ্যে দিবালোকে তারা মিছিল করে, আর পুলিশ দেয় তাদের পাহারা। অবৈধ অস্ত্র নিয়ে মিছিল করে পুলিশ পাহারা দেয়। এই তো খালেদা জিয়ার ২০০১ থেকে ২০০৬। তাদের দুর্নীতি-অনিয়ম, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, যার ফলে বাংলাদেশে ইমার্জেন্সি ডিক্লেয়ার হয়। তাছাড়া কোন কারণ ছিল না। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণেই এটা হয়েছে। তারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ছাড়া কিছু বোঝে না। আওয়ামী লীগ সরকার থাকলে মানুষের শান্তি থাকে। দেশের উন্নতি হয়। আমরা যে ওয়াদা দেই, তা রক্ষা করি। ২০০৮ এর নির্বাচনে বলেছিলাম, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়ন করব। আমরা তা করেছি। আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। আগামীতে বাংলাদেশকে আরও উন্নত করকে চাই। প্রত্যেকটা যুবক কাজ পাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই রাজশাহীতে মানুষের কর্মসংস্থানই ছিল না। এখন ডিজিটাল সেন্টার, ট্রেনিং সবকিছু করে দিয়েছি। এখানে শিল্প-কারখানা হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হবে। এখানেও মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হবে। এখানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট হয় না। কারণ, এখানে কোন উচ্চমানের হোটেল নেই। অনেক বিত্তশালী আছে রাজশাহীর, তাদেরকে বলব যে আপনারা একটা উন্নতমানের হোটেল করেন। আমরা যেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এখানে করতে পারি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করি। রাজশাহী আমে ভরপুর। রাজশাহীর সিল্কসহ অনেক ঐতিহ্য ছিল। সেই ঐতিহ্যগুলি যেন আবার ফিরে আসে সেই চেষ্টা করছি। আমের ওপর গবেষণা হচ্ছে। বারোমাসি আম বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। আমের মৌসুমে ট্রেনে করে যাতে আম চলে যায়, সেই ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। রেলে যোগাযোগ আমরা বাড়িয়েছি। গ্যাসের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। শিল্পায়ন করে দিচ্ছি। কোন ছেলে বেকার থাকবে না, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’
আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু করে দিয়েছি। এর আগে যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু করে দিয়েছিলাম। সমস্ত বাংলাদেশের যোগাযোগ নেটওয়ার্ক এসে গেছে। বন্ধ থাকা এয়ারপোর্ট আমরা চালু করে দিয়েছি। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাক। দেশের উন্নতি হোক। করোনাকালীন সময়ে আমি আসতে পারিনি। আজকে আপনাদের মাঝে এসে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। গত নির্বাচনে নৌকা মার্কায় আপনারা ভোট দিয়েছেন। সে জন্য কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলব, আগামী নির্বাচন আসবে বছরের শেষে অথবা আগামী বছরের শুরুতে। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন কি না ওয়াদা চাই।’ এ সময় জনসভায় উপস্থিত সবাই দুই হাত তুলে আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের বিজয়ী করার প্রতিশ্রুতি দেন।
জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় অন্য নেতারা বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল।
নিউজটি শেয়ার করুন
এ জাতীয় আরো খবর..