বুধবার, মে ২২, ২০২৪

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ছে

বোরোর ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি চালে মানভেদে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছে ভোক্তারা। তাদের জিজ্ঞাসা, বোরোর ভরা মৌসুমে কেন চালের দাম বাড়বে?

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মিলাররা ধান কিনে মজুত করছেন। তারা চাল উৎপাদন করে বাজারে ছাড়ছেন না। সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে হাওরসহ দেশের অনেক এলাকার জমির ধান পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এতে মোট চালের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হতে পারে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বে খাদ্যশস্যের দাম বাড়তি। সবকিছু মিলিয়ে অসাধু চক্র চালের বাজার অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে দ্রুত অবৈধ মজুতদার মিল মালিক ও চাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকাল সোমবার তাদের বাজারদরের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি চালে মানভেদে দুই থেকে চার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গতকাল রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি নাজিরশাইল ও মিনিকেট ৫৮ থেকে ৭০ টাকা, মাঝারি মানের চাল পাইজাম ও লতা ৫০ থেকে ৫৬ টাকা এবং মোটা চাল ইরি ও স্বর্ণা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ আগে তা যথাক্রমে ৫৮ থেকে ৬৮ টাকা, ৪৬ থেকে ৫৬ টাকা ও ৪৫ থেকে ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

ডলারের সংকট মোকাবিলায় এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে ডলারের সংকট মোকাবিলায় এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে
চাল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মোকামে ধান-চালের দাম বেড়েছে। তাই খুচরা বাজারেও দাম বেড়েছে। রাজধানীর বাবুবাজার, বাদামতলী চাল আড়ত মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি নিজামউদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, সাধারণ মিলমালিকদের পাশাপাশি এখন বড় বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো রীতিমতো প্রতিযোগিতা করে ধান-চাল কিনছে। তাহলে কেন দাম বাড়বে না? এছাড়া হাওরে পাহাড়ি ঢলে, ঝড়-বৃষ্টিতে দেশের অন্যান্য জায়গায়ও ফসল নষ্ট হয়েছে। এসবের প্রভাবে এবার ধানের বাজার চড়া। ফলে চালের দামও বাড়ছে।

আমাদের নওগাঁ প্রতিনিধি তন্ময় ভৌমিক জানান, দেশে চালের অন্যতম বড় মোকাম নওগাঁর হাট-বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ ধান প্রায় ১০০ টাকা বেড়েছে। স্থানীয় ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, মিলমালিকেরা সিন্ডিকেট করে বাজার থেকে ধান কিনছেন, কিন্তু মজুতকৃত ধান থেকে চাল উৎপাদন করছেন না। ফলে খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা নওগাঁয় চালের পাইকারি ও খুচরা বাজারে প্রতি ৫০ কেজি বস্তায় বেড়েছে ৩০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা।

নওগাঁয় চলতি বোরো মৌসুমে ১ লাখ ৮৯ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ধান পাওয়ার আশা যখন করছিলেন কৃষকেরা, তখন দুই দফায় কালবৈশাখী ও বৃষ্টিতে প্রায় ১ লাখ হেক্টর জমির আধা পাকা ধান জমিতে নুয়ে পড়ে ক্ষতি হয়। এরপর অশনি ও অশনি-পরবর্তী দুই দফায় ভারী বৃষ্টিতে আবারও ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এর প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মোফাজ্জল হোসেন বলেন, দেশে খাদ্যের এত ঘাটতি হয়নি যে হঠাৎ করে চালের বাজার এমন অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। প্রশাসনিক নজদারির অভাবে নওগাঁয় হাজার হাজার মেট্রিকটন ধান অবৈধভাবে মজুত করেছেন প্রভাবশালী চাল ও মিলমালিকেরা। এই প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করলেই বাজার নিয়ন্ত্রণ আসবে।

নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেইনিত্যপণ্যের দাম বাড়ছেই
রায়গঞ্জ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা দীপক কুমার কর জানান, টানা বৃষ্টিতে রায়গঞ্জে নিম্নাঞ্চলের ধানক্ষেত তলিয়ে গেছে। জলমগ্ন এসব জমির কাঁচা-পাকা ধান কেটেও বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। লাগাতার বৃষ্টি ও রোদ না থাকার কারণে বাড়ির উঠানেই এসব ধান পচে নষ্ট হচ্ছে।

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা গোলাম মোস্তফা জানান, তাড়াশে বিরূপ আবহাওয়ার দরুন অধিকাংশ কৃষক খেতের পাকা বোরো ধান ঘরে তুলতে পারেননি। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লুত্ফুননাহার লুনা বলেন, চলতি বোরো মৌসুমে ২২ হাজার ৩৬০ হেক্টর খেতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ১৮ হাজার হেক্টর খেতের ধান কাটতে পেড়েছেন কৃষকেরা।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তাদের কাছে যে তথ্য এসেছে, তাতে দেখা গেছে, অতিবৃষ্টি, ঝড় ও পাহাড়ি ঢলে মোট ৭৮ হাজার ৯৮৭ টন চাল নষ্ট হয়েছে। তবে বাস্তবে এই ক্ষতির পরিমাণ আরো বেশি হবে বলে সূত্রটি মনে করছে। এ বছর ২ কোটি ১১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৬৩ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ২ কোটি ৮ লাখ ৮৫ হাজার ২৬৩ টন। তাই এখন পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টিতে যে পরিমাণ ফসল নষ্ট হয়েছে, তাতে মোট চাল উৎপাদনে বড় ধরনের কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু একটি অসাধু ব্যবসায়ী চক্র ইতিমধ্যে চালের বাজার অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে।

বাংলাদেশে বিনিয়োগের এখনই সময়: বাণিজ্যমন্ত্রীবাংলাদেশে বিনিয়োগের এখনই সময়: বাণিজ্যমন্ত্রী
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সম্প্রতি সুনামগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সামনে নির্বাচন, তাই সরকার চালের দাম বাড়তে দেবে না। কিন্তু বাজারে চালের দাম বাড়ছে। গতকাল সচিবালয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার তাঁর অফিসকক্ষ থেকে বোরো ২০২২ মৌসুমে অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ ও বাজার মনিটরিং নিয়ে আয়োজিত এক অনলাইন মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, কৃত্রিম সংকট তৈরি করা না হলে এ দেশে খাদ্যসংকট হবে না। তিনি বলেন, অবৈধ মজুতদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে যা করণীয়, তার সবই করা হবে। প্রয়োজনে শুল্ক কমিয়ে চাল আমদানি করে ভোক্তাকে স্বস্তিতে রাখা হবে।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন করপোরেট হাউস বাজার থেকে ধান-চাল কেনা শুরু করেছে। তারা কৃত্রিম কোনো সংকট তৈরি করছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হবে। তিনি ধান-চালের বাজারে নজরদারি বাড়াতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে চালের বাজার অস্থিতিশীল করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বাধিক পঠিত

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com