সোমবার, মে ২০, ২০২৪

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

‘আমরা আত্মহত্যা করলে কি আপনাদের টনক নড়বে?’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : ‘পঁয়ত্রিশ হাজার পরিবারের লাখো মানুষের চোখের পানি মূল্যহীন? আমাদের প্রতি দয়ামায়া হয় না? এতগুলো মানুষের ১০৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে যারা বসে আছে, তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হবে না? আমরা কোথায় যাব? কার কাছে গেলে আমানতের টাকা ফেরত পাব? এই টাকার জন্য এখন সংসার হারাতে বসেছি। এতগুলো মানুষ সবাই মিলে আমরা আত্মহত্যা করলে কি আপনাদের টনক নড়বে?’

রোববার দুপুরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা বলছিলেন সদর উপজেলার বাসুদেবপুর এলাকার গৃহবধূ খালেদা খাতুন।

খালেদা খাতুনসহ চাঁপাইনবাবগঞ্জের এনজিও মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থায় থাকা ৩৫ হাজার গ্রাহকের আমানতের ১০৫ কোটি টাকা ফেরতের দাবিতে সমবেত হয়েছিলেন ৭ শতাধিক গ্রাহক। এ সময় গ্রাহকেরা এনজিওর টাকা /আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে করা কয়েকটি মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও টাকা ফেরতের দাবি জানান।

খালেদা খাতুন বলেন, ‘জমি কেনার জন্য অনেক কষ্টে টাকা মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার বাসুদেবপুর শাখায় জমা রেখেছিলাম। টাকা নেওয়ার সময় তারা বলেছিল, যখন চাইবেন তখনই ফেরত দেওয়া হবে। কিন্তু জমি কেনার জন্য টাকা চাইতে গেলে তা ফেরত দিচ্ছে না। এখন এই টাকা না দেওয়ার জন্য আমার স্বামী ডিভোর্স দিতে চায়। সংসার হারার উপক্রম হয়েছে। প্রশাসনের কাছে বারবার গেলেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’

সদর উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের সূর্যনারায়ণপুর গ্রামের স্নাতক পড়ুয়া লতিফা খাতুন বলেন, ‘বাবার উপার্জনের ছয় লাখ টাকা মধুমতি এনজিওতে জমা রেখেছিলাম। কিন্তু বাবা অসুস্থ হওয়ার পর এখন চিকিৎসা করার জন্য টাকা তুলতে পারছি না। বারবার এনজিও অফিসে ঘুরেও দিব-দিচ্ছি বলে না দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। টাকার জন্য এখন অসহায় দিন যাপন করছি।’

জেলা শহরের বিজয় নার্সিং ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী সানজিদা খাতুন বলেন, ‘জমি বিক্রি করে টাকা জমা রেখেছিলাম এই এনজিওতে। সেখান থেকে মাসে মাসে টাকা তুলে বেতন দিতাম। কিন্তু কয়েক মাস থেকে টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়েছে এর মালিক পক্ষের লোকজন। এখন কলেজের বেতন দিতে পারছি না। মামলা হলেও আসামিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।’

নাচোল উপজেলার নেজামপুরের কাজল মুখার্জির স্ত্রী টুম্পা মুখার্জি বলেন, ‘২০১৯ সাল থেকে দিনমজুর স্বামীর জমানো টাকা রেখেছিলাম এখানে। জমি কেনার জন্য জমা টাকা না পেয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমার মতো এলাকার হাজারো মানুষের অবস্থা এমন।’

অন্যের জমিতে কাজ করে নিজের জমানো ও গরু বিক্রির ৭০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলেন স্বামী হারানো পান মুনি (৬৫)। তিনি জানান, টাকাগুলো আবার ফেরত পেলে ভাঙা ঘর ঠিক করবেন। কিন্তু কয়েক মাস থেকে টাকা দিতে নানা রকম টালবাহানা শুরু করেছে। এখন তো তাদের অফিসও বন্ধ রয়েছে।

মধুমতি সমাজ উন্নয়ন সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এসলাম হোসেন বলেন, এ বিষয়ে একাধিক মামলা চলমান। মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার ও টাকা ফেরতের বিষয় কী অবস্থায় রয়েছে; তা জানতেই গ্রাহকসহ এনজিওকর্মীরা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ বলেন, আদালতে মামলা চলমান। কয়েকজনের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে এবং কয়েকজন আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খাঁন বলেন, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি-এমআরএর অনুমোদন ছাড়া কোনো ধরনের ক্ষুদ্র ঋণের কার্যক্রম পরিচালনা অবৈধ। মধুমতির বিষয়ে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ২ এপ্রিল বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে টাকা ফেরতের দাবিতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন গ্রাহকেরা। আগের দিন ১ এপ্রিল একই দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন গ্রাহকেরা। এ ছাড়া গত ৯ মার্চ শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে একটি মানববন্ধন করে ইউএনওকে অভিযোগ দেন তাঁরা।

সর্বাধিক পঠিত