বুধবার, ফেব্রুয়ারি ৫, ২০২৫

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

লিটনের ইশতেহারে ১০৫ প্রতিশ্রুতি

স্টাফ রিপোর্টার: কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে জোর দিয়ে নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। আওয়ামী লীগ মনোনীত এই প্রার্থী ও সদ্য সাবেক মেয়র লিটন এবার তাঁর ইশতেহারে ১০৫টি প্রুতিশ্রুতি দিয়েছেন। এবার মেয়র নির্বাচিত হতে পারলে পাঁচ বছরে এসব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছেন।

শনিবার সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডা. কাইছার রহমান মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করেন লিটন। গত পাঁচ বছরে মেয়র হিসেবে রাজশাহীর জন্য কী কী করেছেন তার বিবরণও তিনি তুলে ধরেন এই সংবাদ সম্মেলনে। পরে এবারের ইশতেহারের প্রতিশ্রুতিগুলো পড়ে শোনান তিনি। এ সময় দলীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

লিটনের ইশতেহারের প্রথমেই রয়েছে ব্যাপক কর্মসংস্থানের মাধ্যমে বেকারত্ব হ্রাস ও উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা; রাজশাহী মহানগরীকে সমগ্র বরেন্দ্র অঞ্চলভিত্তিক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা; শিক্ষা ও সংস্কৃতি সমৃদ্ধ মহানগরীর বিশেষত্ব অর্জন করা; সিটি করপোরেশনের ভৌগোলিক আয়তন ৯৬ বর্গকিলোমিটার থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ বর্গকিলোমিটার করা এবং রাজশাহী শহরের পাশে জেগে উঠা পদ্মার চরে রিভার সিটি নির্মাণ করা।

এর আগে ২০১৮ সালের নির্বাচনি ইশতেহারে লিটন রাজশাহীতে কৃষি বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করতে চেয়েছিলেন। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়নি। এবারও নির্বাচনি ইশতেহারে একই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন লিটন। এবার উচ্চমাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার জন্য একটি গার্লস ক্যাডেট কলেজ, রাজশাহীতে সঙ্গীত, নাট্য ও নৃত্যকলার সমন্বয়ে একটি ললিতকলা একাডেমি এবং একটি আর্কাইভ, আর্ট গ্যালারি ও সিটি মিউজিয়াম স্থাপন করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন লিটন।

এবার ইশতেহারে নগরবাসীর প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অনলাইনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীর হার্ট ফাউন্ডেশনকে একটি পূর্ণাঙ্গ হৃদরোগ হাসপাতালে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া এবং সাধারণ রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া সদর হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ হাসপাতালে উন্নীত করে পুণরায় চালু করার উদ্যোগ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। লিটন প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, রাজশাহী থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত ট্রেন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে। ডুয়েল গেজে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে রাজশাহী-আব্দুলপুর রেলপথ। রাজশাহী-খুলনা-মোংলা-পোর্ট সংযোগ গড়ে তুলতে আরো একটি আন্তঃমহানগর যাত্রী ও মালবাহী ট্রেন চালু করা হবে। এর ফলে বহির্দেশীয় বাণিজ্যে আমদানি-রপ্তানি সহজ হবে। রাজশাহী থেকে গোদাগাড়ীর সুলতানগঞ্জ ঘাট হয়ে ভারতের ধূলিয়ান ও মায়া পর্যন্ত নৌবন্দর চালু করে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং নতুন যোগাযোগ স্থাপন করা হবে। রাজশাহী থেকে কলকাতা পর্যন্ত ট্রেন, বাস ও বিমান চলাচল শুরু করা হবে। এছাড়াও রাজশাহী থেকে রহনপুর হয়ে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চল দিয়ে নেপাল পর্যন্ত ট্রেন যোগাযোগের উদ্যোগ নেওয়া হবে। রাজশাহী বিমানবন্দর থেকে কার্গো বিমান চালুর মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য ও অন্যান্য দেশে রাজশাহী অঞ্চলের কৃষিজাতপণ্য ও শিল্পজাতপণ্য রপ্তানির ব্যবস্থা করা হবে। এর জন্য কনটেইনার অবকাঠামো গড়ে তোলা হবে। রাত্রিকালীন বিমান ওঠানামার জন্য বিমানবন্দরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ ও আলোকায়নের ব্যবস্থা করা হবে। সিটি অ্যাপস চালু করে নগর পরিসেবা সংক্রান্ত বিষয়ে নগরবাসীর পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

এছাড়া সরকারি সহায়তায় স্বল্প আয়ের মানুষের আবাসন সমস্যা নিরসনের জন্য ৫০০ থেকে ৬০০ বর্গফুটের বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। রাজশাহীর পর্যটন মোটেলকে স্টার মানে উন্নীত করা হবে। নতুন নতুন স্টার মানের হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে সমন্বয়ের মাধ্যমে স্থাপন করা হবে। নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে বহুমুখী সুবিধাসম্পন্ন নাগরিক কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে। এখানে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের স্থায়ী কার্যালয় থাকবে। এর পাশাপাশি অডিটোরিয়াম ও কমিউনিটি সেন্টারের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া আরও নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় সামিল হয়ে রাজশাহী মহানগরীকে যোগ্য অংশীদার হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেই লক্ষ্যে আমার নির্বাচনী ইশতেহারে উন্নয়ন প্রকল্পের রূপরেখার প্রতি সবার সমর্থন ও অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করি। এই অঙ্গীকার সামনে নিয়ে আমি মেয়র পদপ্রার্থী। নিজেকে এই অঙ্গীকারের বিশ্বাসযোগ্য ও আস্থাভাজন বলে মনে করি। রাজশাহীর মহানগরীর সর্বাত্মক উন্নয়ন, পরিবেশ এবং সৌন্দর্য তার সাক্ষী।’

এর আগে ২০১৮ সালে নির্বাচনি ইশতেহারে ৮২টি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন লিটন। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলেও অনেক কিছুই বাস্তবায়ন হয়নি। সে বিষয়ে সাংবাদিকরা জানতে চাইলে লিটন বলেন, ‘করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর কোন উন্নয়নমূলক কাজ করা যায়নি। তাছাড়া ডলার ও নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সারাবিশ^ই একটা অস্থির সময় পার করেছে। সে জন্য সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। তবে এবার হবে।’

সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন, এবার নির্বাচনি ইশতেহারে লিটন যেসব বিষয় এনেছেন তার অনেক কিছুই সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে তিনি করবেন। জবাবে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মেয়র হিসেবে তার কাজ করার সুযোগ আছে। যেখানে যেভাবে তদবির করে কাজ করা লাগবে, সেটি তিনি করবেন রাজশাহীর উন্নয়নের স্বার্থে। এ জন্যই সিটি করপোরেশনের বাইরের বিষয় নিয়েও তিনি কাজ করতে চেয়েছেন। এসব অঙ্গীকার পূরণ করা কঠিন মনে করেন না তিনি।

সর্বাধিক পঠিত

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com