মঙ্গলবার, মে ২১, ২০২৪

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

নির্বাচন কর্মকর্তার বাসা থেকে উদ্ধার আ.লীগ নেতা বাবার জিম্মায়

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেনের বাসা থেকে উদ্ধার করা আওয়ামী লীগ নেতা মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমনকে তাঁর বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবালের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। সোমবার সকালে একটি মুচলেকা নিয়ে লিমনকে তাঁর বাবার জিম্মায় দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপকমিশনার রফিকুল আলম।

এর আগে রোববার দিবাগত রাত ১২টার সময় লিমনকে নির্বাচন কর্মকর্তার বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। রাত ৯টায় নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লিমন এ বাসায় ঢুকলে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতারা তাঁকে অবরুদ্ধ করেন। আবুল হোসেন আগামী বুধবার অনুষ্ঠেয় রাজশাহী সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা। লিমনের মামা আবদুল হামিদ সরকার টেকন এই নির্বাচনে নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী। তিনি এ ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলরও।

এ অবস্থায় নির্বাচন কর্মকর্তার বাসায় লিমনের যাওয়াটিকে স্বাভাবিকভাবে নিচ্ছেন না দলীয় নেতাকর্মীরা। এ জন্য দলীয় নেতাকর্মীরাই তাঁকে অবরুদ্ধ করেন।

রাতে লিমনকে অবরুদ্ধ করে বাড়ির বাইরে রাস্তায় বসে ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নানা শ্লোগান দিচ্ছিলেন। তারা লিমনকে গ্রেপ্তার এবং দল থেকে বহিষ্কারের দাবি করছিলেন। পরিস্থিতি শান্ত করতে সেখানে গেলে শারীরীকভাবে লাঞ্ছিত হন লিমনের বাবা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মীর ইকবাল। এ অবস্থায় কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে পুলিশ লিমনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এই রাতে লিমন পুলিশের হেফাজতেই ছিলেন। সকাল পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এরপর মুচলেকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

রাতে বাসা অবরুদ্ধ করে রাখার সময় রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাসিক দত্ত বলছিলেন, লিমনসহ মোট তিনজন নির্বাচন কর্মকর্তার বাসায় এসেছিলেন। তাদের কাছে একটি ব্যাগ ছিল। তারা নির্বাচন কর্মকর্তার বাসায় ঢুকলে লিমন বাথরুমে ঢুকে যান। তাকে বাথরুম থেকে বের করার সময় সঙ্গে আনা ব্যাগ নিয়ে অন্য দুজন দ্রুত পালিয়ে যান।

রাসিকের দাবি, ভোটের তিন দিন আগে নির্বাচন কর্মকর্তাকে ঘুষ দিতে ওই ব্যাগে টাকা আনা হয়েছিল। সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ঘুষ দিয়ে লিমন তার কাউন্সিলর প্রার্থী মামার বিজয় নিশ্চিত করতে এসেছিলেন। পাশাপাশি নৌকার পরাজয় করতে ঘুষ দেওয়া হচ্ছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘এ বিষয়টি আমি নিউজে-ফেসবুকে দেখেছি। বিষয়টি এখনও অস্পষ্ট। রাতের বেলা লিমন কেন নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে গেলেন, আবার নির্বাচন কর্মকর্তা কেন গভীর রাতে তাকে অ্যালাউ করলেন সেটি তারাই বলতে পারবেন। আমি এর চেয়ে আপাতত কোন মন্তব্য করতে পারছি না।

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমনের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। সোমবার দুপুরে তার মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। লিমনের কাউন্সিলর প্রার্থী মামা আবদুল হামিদ সরকার টেকন ফোন ধরেননি। তাই তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

লিমনের বাবা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মীর ইকবাল বলেন, ‘এখন কথা বলার মতো মানসিকতা নেই। আমি নিজেও শারীরীকভাবে অসুস্থ। এসব বিষয় নিয়ে দু’চারদিন পর কথা বলব।’

রাতেই এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘লিমন আমার পূর্বপরিচিত। তিনি একটি বিষয়ে কথা বলার জন্য এসেছিলেন। বাসার বাইরে দাঁড়িয়েই তিনি কথা বলতে চাচ্ছিলেন। আমিই তাঁকে বাসার ভেতরে নিয়ে এলাম। কারণ, আমার বাসায় আমি ছাড়া কেউ থাকে না। লিমন ঢোকামাত্র কিছু ছেলে এসে তাকে আটকে রাখে। ঘুষ দেওয়ার জন্য লিমন এসেছিলেন এটা সত্য নয়।’

লিমন কি বিষয়ে আলাপ করতে এসেছিলেন তা জানতে চাইলে আবুল হোসেন বলেন, ‘তিনি এসে জানতে চেয়েছিলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি না। আমি বললাম, নির্বাচন তো সুষ্ঠুই হবে।’

রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র রফিকুল আলম বলেন, ‘লিমনকে জনরোষ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল। তারপর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি যেসব তথ্য দিয়েছেন সেগুলো যাচাই করা হবে। নির্বাচন কর্মকর্তার বাসায় কোন টাকা পাওয়া যায়নি। এ জন্য কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। মুচলেকা নিয়ে তাকে তার বাবার কাছে দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

সর্বাধিক পঠিত

Social Media Auto Publish Powered By : XYZScripts.com