সোমবার, মে ২০, ২০২৪

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

রাতে চাষির সর্বনাশ, অধরা দুর্বৃত্ত

বাঘা প্রতিনিধি: বাঘার সাহাপুর গ্রামের জিয়ারুল ইসলামের বাগানে ছিল প্রায় অর্ধশত আম গাছ। এর মধ্যে ২৫টি গত ২৭ জুলাই রাতে কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। এর আগে ২০ জুলাই আশরাফপুর গ্রামের আবদুল মান্নানের ১ হাজার ২০০ কলাগাছ কেটেছে। কারা এতে জড়িত, তারা জানতে পারেননি। আবদুল মান্নানের ভাষ্য, পলাশী ফতেপুর মাঠে জমি লিজ নিয়ে কলাগাছ লাগিয়েছিলেন। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ করলেও মামলা হয়নি।

রাজশাহীর বাঘায় ২০০৭ সাল থেকে ১৬ বছরে রাতে এভাবে বিভিন্ন প্রজাতির অন্তত চার হাজার গাছ কেটে চাষিদের ক্ষতি করেছে দুর্বৃত্তরা। মামলায় কয়েকজন অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশ ঘটনায় জড়িতরা শনাক্ত হয়নি। অনেক ঘটনায় ভয়ে অভিযোগ দেননি ভুক্তভোগী। সর্বশেষ গতকাল শুক্রবার হাবাসপুর মাঠে দিলীপ ও দুলালের ছয়টি আম গাছ কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। তাদের মামা চিত্তরঞ্জন সরকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে থানায় অভিযোগ দেবেন তারা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১১ ডিসেম্বর হাবাসপুরের ১৫ চাষির ৪০০ আম গাছ কেটে দেয় দুর্বৃত্তরা। চাষি অমিত কুমার বলেন, থানায় অভিযোগের পর পুলিশ নাম জানতে চেয়েছিল। তবে রাতের ঘটনা হওয়ায় কারও নাম বলতে পারেননি। চিত্তরঞ্জন সরকার জানান, এর পাঁচ দিন আগে পাঁচজনের ১৩০টি আম গাছ কেটে দেয়। তারা গাছ তুলে চাষাবাদ করছেন।

৫ ডিসেম্বর কুশাবাড়িয়ার হিরো আলীর ৫৫টি কলাগাছ, ৫ নভেম্বর টলটলিপাড়া ও ভেড়ালীপাড়ায় একটি আম গাছ এবং আটজন চাষির ফসল কেটে ও উপড়ে নষ্ট করে। চাষি সাইদুল ইসলাম জানান, তাঁর ক্ষেতের হলুদ ছাড়াও সাত চাষির ২১টি পেয়ারা, পাঁচটি পেঁপে, ৭৫টি মরিচ ও ১০টি বেগুন গাছ কেটে ফেলে।

২০১৯ সালের ১২ আগস্ট রাতে কুশাবাড়িয়া-গোচর মাঠের পাঁচ চাষির ৮২টি আম গাছ কেটে দেয়। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক জানান, তাঁর ২০টি ও চারজনের ৬২টি আম গাছ ছিল। থানায় অভিযোগ দিলেও কেউ শনাক্ত হয়নি। ২০১৮ সালের ৩১ আগস্ট আটঘরি স্কুলপাড়ার তিন ভাইয়ের ১০টি গাছের ক্ষতি করে। ১২ আগস্ট আাড়াপাড়ার সান্টু ইসলামের ২১টি আম গাছ কেটে ফেলায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

১১ জুলাই জোতকাদিরপুরের আশাদুজ্জামানের ১০০টি কলাগাছ, ২ জানুয়ারি দিনে চাঁদপুরের জলিল ভূঁইয়ার ৫০টি মেহগনি গাছ কাটে। তাদের ভাষ্য, জমির বিরোধে গাছ কেটেছে প্রতিপক্ষ। ২০১৭ সালের ২৯ মার্চ তুলশীপুরের ওবাইদুর রহমানের ১৬টি ও ৮ এপ্রিল পান্নাপাড়ার শাহিদুরের ৩১টি আম গাছ কাটে।

কিশোরপুরের আব্দুস সাত্তার জানান, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাতে পাঁচজনের বাগানের ১২৫টি আম গাছের মুকুল কেটে দিলে অন্তত ৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ২০১৬ সালের ১৭ এপ্রিল সরেরহাটের আমিরুলের ৪৬টি আম গাছ কাটে। ২০১৫ সালের ১৫ মার্চ আব্দুল কুদ্দুসের পাহারাদারকে আটকিয়ে পেয়ারা, বাউকুল ও মিষ্টি কুমড়ার গাছ কেটে দেয়। তিনি জানান, চাঁদার টাকা না দেওয়ায় ফসল নষ্ট করে। পরে সালিশে নিষ্পত্তি হয়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ১৪ দল ও ১৮ দলের কোন্দলে তুলশীপুর, হরিপুর ও গঙ্গারামপুর এলাকার দেড় সহস্রাধিক গাছ কাটে। সে সময় পাঁচটি মামলা হয়। স্থানীয় গৌতম চন্দ্র জানান, তাঁর মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ২০১৩ সালের ২০ আগস্ট বাউসা সরকারপাড়ার মুনজু সরকারের ৪০টি আম, ৩০০ বাউকুল, ৬০টি মেহগনি গাছ কেটে দেয়। তিনি জানান, গ্রেপ্তার তিনজন গাছ কাটার কথা স্বীকার করে। ৫ সেপ্টেম্বর কিশোরপুরের তিনজনের ৯টি আম গাছ কাটে দুর্বৃত্তরা।

বলিহার গ্রামের সুকুমার সরকার জানান, ২০০০ থেকে ২০০৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত তাঁর গ্রামের বিমল চন্দ্রের ৫০০টি, কার্তিকের ১৩টি ও ব্রজগোপালের আটটি আম গাছ এবং দিলীপের ৩৪টি লিচু গাছ কেটে দেয়। বিমলের ছেলে বিশ্বজিৎ সরকার বলেন, ২০১৪ সালে বাবা মারা যাওয়ার আগে থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি করেছেন। সাক্ষী জোগাড় করতে না পারায় মামলা হয়নি।

২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে সোনাদহ গ্রামের মমিনুলের ১১০টি ও ২০০৭ সালের অক্টোবরে চকসিংগা গ্রামের কার্তিকের ২৫টি আম গাছ কাটে দুর্বৃত্তরা। মমিনুলের মামলায় দু’জন গ্রেপ্তার হলে পরে মীমাংসা হয়েছে। পাকুড়িয়ার আমচাষি সফিকুল ইসলাম বলেন, রাতে দুর্বৃত্তের হানার ভয়ে অনেকে আম গাছে আগ্রহ হারাচ্ছেন। আবাদী ফসল নিয়েও আতঙ্কে আছেন।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সফিউল্লাহ সুলতান বলেন, উপজেলায় যোগদানের পর জানতে পেরেছেন, গাছ কাটার ঘটনা বেশ পুরোনো। এতে চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যেসব গাছের গোড়া ও কিছু ডাল রয়েছে, সেগুলোয় কলম করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খায়রুল ইসলাম বলেন, চরাঞ্চলের কলাগাছ কাটার বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সাহাপুরে আম গাছ কাটার অভিযোগ পাননি। তাঁর যোগদানের আগে কী হয়েছে, তা জানা নেই।

সর্বাধিক পঠিত