সোমবার, মে ৬, ২০২৪

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

রাজশাহীর ছয় আসনেই থাকতে পারে বিএনএমের প্রার্থী!

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর ছয়টি সংসদীয় আসনেই প্রার্থী দিতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনে নতুন নিবন্ধন পাওয়া দল- বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)। তবে এরমধ্যে অন্তত দুটি আসনে জয় চায় দলটি। আসন দুটিতে বিএনপি থেকে আসা দুজন নেতা প্রার্থী হচ্ছেন বলে জানা গেছে।
কয়েকমাস আগেও রাজশাহীতে বিএনএমের কোন নাম শোনা যায়নি। এ পর্যন্ত দলটিকে রাজশাহীতে কোন কর্মসূচিও পালন করতে দেখা যায়নি। নির্বাচনের আগে হঠাৎ আলোচনায় আসা এই দলটির রাজশাহীর নেতারা বলছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদে বিএনএমই হতে যাচ্ছে সংসদের প্রধান বিরোধীদল। এ লক্ষ্য নিয়েই তারা কাজ করছেন। এক্ষেত্রে বিভিন্ন মহল থেকে ভাল পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া যাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন দলটির স্থানীয় এক নেতা। তবে নাম প্রকাশ করে গণমাধ্যমে বক্তব্য দিতে রাজি হননি তিনি।
বিএনএম সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীর ছয়টি আসনের মধ্যে দুটিতে জয়ের আশা করছেন নেতারা। আসন দুটি হলো- রাজশাহী-১ ও রাজশাহী-৩। রাজশাহী-১ আসনে প্রার্থী হতে পারেন এ আসনের তিনবারের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী প্রয়াত বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছোট ভাই মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন। তিনি বিএনপি সরকারের সামরিক সচিব ছিলেন। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন তিনি। হঠাৎ গুঞ্জন উঠেছে, তিনি নাকি ইতোমধ্যে বিএনএমের সদস্যপদ নিয়েছেন। তবে উপজেলা বিএনপির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করেননি তিনি। শরিফ উদ্দিনের বিএনএমে যাওয়ার সমালোচনা করে ফেসবুকেও পোস্ট দেখা গেছে।
রাজশাহী-১ আসনে ২০০৮ সাল থেকে তিনবার এমপি হয়েছেন আওয়ামী লীগের ওমর ফারুক চৌধুরী। এবার তার আসনটি দখলে নিতে চাচ্ছে বিএনএম। এ জন্য প্রথমে একজন স্কুলশিক্ষককে প্রার্থী ঠিক করেছিল বিএনএম। পরে তাকে বাদ দিয়ে বিএনপি পরিবারের শরিফ উদ্দিনকে ভাবা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে বৃহস্পতিবার শরিফ উদ্দিনকে কয়েকদফা ফোন করা হয়। তবে তিনি ধরেননি। সাড়া পাওয়া যায়নি মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়েও। তাই তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তানোর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘কয়েকমাস ধরে শরিফ উদ্দিন সাহেব এলাকায় আসেন না। বাতাসে একটা কথা ঘুরে বেড়াচ্ছে যে তিনি বিএনএমে যোগ দিয়েছেন। জানার জন্য আমি তাকে ফোন করেছিলাম। তিনি ধরেননি। বিএনপি একটা বড় দল। কে যাবেন, কে আসবেন সেটা তাদের ব্যক্তিগত বিষয়।’
রাজশাহী-৩ আসনে ২০১৪ সাল থেকে এমপি রয়েছেন আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিন। এবার আয়েনের আসনটিও দখলে নিতে চাচ্ছে বিএনএম। এ আসনে বিএনএমের প্রার্থী হতে যাচ্ছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু। ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি এ আসনে দুজনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছিল। তাদের একজন ছিলেন মন্টু। বিএনএমের আগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। সম্প্রতি ঢাকায় দলটির এক সংবাদ সম্মেলনে তাকে দেখা গেছে। তবে মন্টু এখনও বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেননি বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মতিউর রহমান মন্টু বলেন, তিনি এখন বিএনএমের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। মন্টু জানান, তিনি ঢাকা যাচ্ছেন। রাজশাহী-৩ আসন থেকে নির্বাচন করতে বিএনএমের মনোনয়ন ফরম তুলবেন। আগামী রোববারের দিকে প্রার্থী ঘোষণা করা হতে পারে। তিনি বিএনপি কেন ছাড়লেন তা ফোনে বলবেন না। দেখা হলে সামনাসামনি বলবেন।
জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন বলেন, ‘মতিউর রহমান মন্টু বিএনএমে যোগ দিয়েছেন। তিনি সুযোগসন্ধানী। প্রথমদিকে নাম শুনে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। মৌখিকভাবে তিনি এটি অস্বীকার করেন। পরে ঢাকায় বিএনএমের সংবাদ সম্মেলনে তাকে দেখা গেছে।’ মামুন বলেন, ‘তিনি একজন সাবেক ছাত্রনেতা। তার কাছ থেকে এটা অপ্রত্যাশিত। রাজশাহী বিএনপির ইতিহাসে একজন বেঈমান হিসেবে তার নাম লেখা থাকবে।’
বিএনএম সূত্রে জানা গেছে, বুধবার থেকে দলটি মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে। ইতোমধ্যে রাজশাহীর কেউ কেউ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বৃহস্পতিবার সারাদিনে অন্যদের মনোনয়ন ফরম তোলার কথা। রাজশাহী-১ আসনে কোন কারণে মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিন মনোনয়ন ফরম না তুললে এখানে একজন স্কুলশিক্ষককে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। দলটির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক তাযকিয়া বিনতে নাজীব গ্রেসীও প্রার্থী হতে পারেন। তার বাড়ি রাজশাহীর তানোরে। থাকেন ঢাকায়।
রাজশাহী-২ (সদর) আসনে প্রার্থী করা হতে পারে আবদুল বারী নামের এক ব্যক্তিকে। তিনি হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী। রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপি থেকে আসা মতিউর রহমান মন্টু ছাড়াও বয়েজ উদ্দিন নামের আরেকজন মনোনয়ন ফরম তুলেছেন। তিনি একজন খামারী। এছাড়া এখানে কামরুল হাসান মাসুদ নামের আরেকজনের নাম আলোচনায় রয়েছে।
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে প্রার্থী হচ্ছেন হাটগাঙ্গোপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম। রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে প্রার্থী হচ্ছেন বিএনএমের জেলার সাধারণ সম্পাদক ও হরিরামপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম। রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন সাইফুল ইসলাম রায়হান ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবদুস সামাদ। সব আসনে বিএনএমের একক প্রার্থীই থাকবে।
দলটির জেলার সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দলের মনোনয়ন ফরম বিক্রি চলছে। রাজশাহীর ছয় আসন থেকেই প্রার্থীরা মনোনয়ন ফরম তুলছেন। সব আসনেই প্রার্থী থাকবে। নির্বাচনে প্রার্থীরা যেন জিতে আসতে পারেন, সে লক্ষ্য নিয়েই আমাদের কাজ চলছে।’
দুটি আসনে বিএনপি থেকে আসা দুজনের নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রাজশাহী-৩ আসনে মতিউর রহমান মন্টু নির্বাচনে অংশ নেবেন। তিনি আমাদের দলের নেতা। রাজশাহী-১ আসনের জন্য মেজর জেনারেল (অব.) শরিফ উদ্দিনের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘শুনলাম তিনি কেন্দ্রে যোগ দিয়েছেন। এটা কেন্দ্রের বিষয়। আমি বলতে পারব না।’

সর্বাধিক পঠিত