রবিবার, মে ১৯, ২০২৪

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

নৌকার বিজয় নিয়ে ঘরে ফিরতে চায় ১৪ দল 

স্টাফ রিপোর্টার: বৃহস্পতিবার প্রচারণার শেষ দিনে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ নির্বাচনী প্রচার মিছিল করেছে রাজশাহী ১৪ দল। আওয়ামী লীগ ওয়ার্কার্স পার্টিসহ ১৪ দলের নেতাকর্মীরা এবারও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ‘জিতবে আবার নৌকা’ স্লোগানে প্রকম্পিত করেছেন রাজশাহী নগরী।
ঢাকঢোল, ব্যান্ড পার্টি নিয়ে গানের তালে তালে বের হওয়া নৌকার মিছিল নিমেষেই রূপ নেয় জনসমুদ্রে। মিছিল থেকে শেখ হাসিনার নৌকা প্রতীকের জয় নিশ্চিত করেই ঘরে ফেরার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ১৪ দলের নেতাকর্মীরা।
এর আগে নগরীর বড় মসজিদ চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচনি জনসভা। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন রাজশাহী-২ আসনে নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা।
প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। সভাপতিত্ব করেন মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বদরুজ্জামান খায়ের।
জনসভায় নৌকার প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ২০০৮ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীবাসীর জন্য আমাকে যে দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন, তা আমি এ পর্যন্ত যথাযথভাবে পালন করেছি। আমার প্রতি নেত্রীর আস্থা নষ্ট হয়, এমন কোন কাজ কখনোই করিনি।
যে কারণে টানা চতুর্থ বারের মতো তিনি নৌকা প্রতীক দিয়ে আমাকে আপনাদের মাঝে পাঠিয়েছেন। রাজশাহীবাসী গত তিনবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানিত করেছে। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছিলেন বলেই গত ১৫ বছরে রাজশাহীর এই পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে।
আগামী ৭ তারিখে আবারো নির্বাচন। এ নির্বাচন আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নির্বাচনে একটি পক্ষ জননেত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে এবং আরেকটি পক্ষ শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় রাজশাহীবাসী কখনোই কারো ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দেয়নি।
তাই আপনাদের কাছে আমাদের আহ্বান, ৭ তারিখের নির্বাচনে আরেকবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিন।
১৫ বছরে নিজের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, আমি মহান সংসদে যতবার দাঁড়িয়েছি, রাজশাহীর মানুষের কথা বলেছি। মহান সংসদে আমার দাবির প্রেক্ষিতে রাজশাহী বিমানবন্দরকে চালু করা হয়েছে। এবার আমি নির্বাচিত হলে রাজশাহী বিমানবন্দর হবে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।
আমি এই সংসদে দাঁড়িয়ে দাবি করেছি বলেই রাজশাহী থেকে ঢাকা ননস্টপ ট্রেন চালু হয়েছে। আমি এবার নির্বাচিত হলে রাজশাহীর রেল যোগাযোগকে আরো উন্নীত করা হবে। মহান সংসদে দাঁড়িয়ে হাইটেক পার্কের কথা বলেছিলাম বলেই রাজশাহীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী হাইটেক পার্ক উপহার দিয়েছেন।
জাতীয় সংসদে সারা উত্তরবঙ্গের মানুষের জন্য বলেছিলাম বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে একটি রেল সেতু নির্মাণ করতে হবে। আমার সেই বক্তব্য এবং তাদের প্রেক্ষিতে আজকে বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে রেল সেতু নির্মিত হচ্ছে। সংসদে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা দাবি করেছিলাম, সেই দাবির প্রেক্ষিতে আজকে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন হওয়ার পথে।
রাজশাহীতে এমন কোন স্কুল কলেজ খুঁজে পাওয়া যাবে না যেখানে আমার হাতের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। রাজশাহী কলেজে ইন্টারমেডিয়েট ব্যবস্থা ছিল না। আমার হাত দিয়ে সেটি চালু হয়েছে। শহীদ কামারুজ্জামান কলেজসহ রাজশাহীর চারটি কলেজকে আমি সরকারিকরণ করেছি।
রাজশাহীতে আরও দুইটি সরকারি স্কুল বাস্তবায়িত হওয়ার পথে। রাজশাহী রেশম কারখানা আমি চালু করেছি। এবার নির্বাচিত হলে রাজশাহীর এই ঐতিহ্যকে ভালোভাবে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব ইনশাল্লাহ।
এমপি বাদশা বলেন, ২০১৮ সালে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারীদের বেতন ভাতা আটকে ছিল। তারা ঈদ করতে পারবে কি পারবে না এ নিয়ে যখন শংকিত ছিল তখন আমি তাদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি আমার উন্নয়নের বরাদ্দের টাকা থেকে তাদের বেতন ভাতা পরিশোধ করে ঈদ করার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। এসব এখন অনেকেই ভুলে গেছে। সিটি কর্পোরেশনে প্রথমদিকে উন্নয়ন বরাদ্দ ছিল না।
ত্রিশটি কাউন্সিলরকে ডেকে আমি এক কোটি টাকা করে দিয়েছিলাম ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে উন্নয়নের জন্য। যারা বলে রাজশাহীর জন্য আমি কিছুই করিনি তারা মিথ্যাবাদী। রাজশাহীর বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমি যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছি, তা অন্য কেউ দেয়নি।
রাজশাহী শহর রক্ষা বাঁধও আমার হাত দিয়ে নির্মিত। এমন অনেক অর্জনের কথা বলা যাবে। আমি উন্নয়ন করেছি ঢাক ঢোল পেটানোর জন্য নয়। আমি উন্নয়ন করেছি মানুষের সেবার জন্য। জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে সহযোগিতা করেছেন; আমি তার সহযোগিতা আপনাদের কাছে পৌঁছে দিয়েছি মাত্র।
আমার নিজের উন্নয়ন বলতে কিছু নেই। যা উন্নয়ন দেখছেন এর একমাত্র রুপকার বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনা। নির্বাচনের আর কয়েক দিন বাকি। আমি শুধু একটি কথাই বলতে চাই।
এবার যদি আপনারা আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন, তাহলে আগামী দিনে রাজশাহীতে কর্মসংস্থানের জন্য ইপিজেড হবে। এর জন্য আমার যা যা করার, তাই করবো। যেখানে যেখানে যাওয়ার সেখানে যাবো।
জনসভায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, আমিও এই আসনে নৌকা প্রতীক চেয়েছিলাম। নৌকা প্রতীক পাইনি বলে নৌকার সঙ্গে বেইমানি করিনি। যতদিন জীবিত আছি, ততদিন আমাদের কেউ নৌকা প্রতীকের বাইরে নিয়ে যেতে পারবেনা।
ফজলে হোসেন বাদশার ওপরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবারো আস্থা রেখেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে আস্থা রাখেন আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি তারা প্রধানমন্ত্রীর আস্থার বাইরে যেতে পারি না। আমাকে অনেক আওয়ামী লীগের নেতারা টেলিফোন করে বলেছেন, ভাই যে নৌকার জন্য মার খেয়েছি, পুলিশের তারা খেয়েছি, নির্যাতিত হয়েছি, হাত পায়ের রগ কেটে ফেলা হয়েছে সেই নৌকার বাইরে আমরা কখনোই যেতে পারি না। হয়তো অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হতে হচ্ছে; কিন্তু নিশ্চিত থাকেন, আমরা নৌকার বাইরে ভোট দিব না।
এটি জননেত্রী শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ। আমাদের মা বোনেরা সকলে একত্রিত হয়েছেন। তারা শেখ হাসিনাকে ভালবাসেন বলেই নৌকার সঙ্গে বেইমানি করেননি। যারা বেইমানি করেছে তারা কখনোই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের দীক্ষায় দীক্ষিত নয়। আমরা কোন ব্যক্তিকে চিনি না, কোন প্রার্থীকে চিনি না। আমরা ৩০০ আসনেই জননেত্রী শেখ হাসিনাকে চিনি।
ডাবলু সরকার আরও বলেন, গত ১৫ বছরে মহান জাতীয় সংসদে ফজলে হোসেন বাদশা যতবার দাঁড়িয়েছেন ততবার রাজশাহীর মানুষের কথা বলেছেন। আমরা দেখেছি তার দাবি ও বক্তব্যের প্রেক্ষিতে রাজশাহীর মানুষ এমন অনেক কিছু অর্জন করেছে, যা বলে শেষ করা যাবেনা। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহীর মানুষকে দুই হাত উজাড় করে দিয়েছেন।
আজকে যে উন্নত সুন্দর চমৎকার শহর দেখছেন, সেটিও জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান। সুতরাং শেখ হাসিনা যে পথ দেখাবেন আমরা যারা আওয়ামী লীগ করি তারা সেই পথে হাঁটবো এটিই স্বাভাবিক। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যারা প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগ করে, শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসে তারা আর যাই করুক ভোটকেন্দ্রে গিয়ে নৌকার বাইরে অন্য কোন প্রতীকে ভোট দিতে পারবে না।
সুতরাং আগামী সাত তারিখে নৌকার জয় সুনিশ্চিত। এ জয় আমরা না নিয়ে ঘরে ফিরে যাব না। আমরা আবারো জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এই আসনটি উপহার দিতে চাই।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগরের সহ-সভাপতি, রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মির ইকবাল, মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু, জেলার সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ রেজাউল ইসলাম বাবলু, জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক তোতা, নারী মুক্তি সংসদের সভাপতি অধ্যাপক তসলিমা খাতুন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইসতিয়াক আহমেদ লিমন, মহানগর যুবমৈত্রীর সভাপতি ও সিটি কর্পোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতি, সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমতিয়াজ, মহানগর আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ রবিউল ইসলাম রবি, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মোঃ মুকিদুজ্জামান জুরাত, উপ-দপ্তর সম্পাদক পংকজ দে, উপ-প্রচার সম্পাদক মোঃ সিদ্দিক আলম, সদস্য মোঃ আশরাফ উদ্দিন খান, সৈয়দ মন্তাজ আহমেদ, মোঃ ইসমাইল হোসেন, মোঃ মুজিবুর রহমান, মাসুদ আহমেদ, আশীষ তরু দে সরকার অর্পণ, মোঃ আলিমুল হাসান সজল, মোঃ খাইরুল বাসার শাহীন, ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক বিপন্ন সরকার, ২২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ নেওয়াজ সরকার সেডু, জাতীয় শ্রমিক লীগ রাজশাহী মহানগরের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ শরীফ আলী মুনমুন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ জেডু সরকার, রাজশাহী মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি শাহাদত হোসেন বাদশা, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ জাহেদ আলী জনি, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ তাসকিন পারভেজ সাতিল, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান, রাজশাহী মহানগর কৃষক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল গাফফার শামীম, বোয়ালিয়া থানা (পূর্ব) কৃষক লীগের সভাপতি মোঃ জিয়াউর রহমান লিটন, রাজশাহী মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোঃ মেহেদী হাসান রিমেল রিগেন, মহানগর ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ওহিদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক বিজয় সরকার প্রমুখ। জনসভা পরিচালনা করেন মহানগর ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক দেবাশীষ প্রামাণিক দেবু।

সর্বাধিক পঠিত