সোমবার, মে ২০, ২০২৪

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

কুমারখালীর হাতেজান নেছা বয়স্ক বিদ্যালয় জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে

কুমারখালী (কুষ্টিয়া) সংবাদদাতা : কুষ্টিয়ার খোকসা ও কুমারখালীতে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে হাতেজান নেছা বয়স্ক বিদ্যালয়। ৬টি শিক্ষাকেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতি বছর দুই শতাধিক নিরক্ষর বয়স্ক নারী ও পুরুষ শিক্ষার আলোয় হচ্ছে আলোকিত। বয়স্কদের এই স্বাক্ষর জ্ঞানে জ্ঞানান্বিত করছে শহরতলীর চড়াইকোল গ্রামের এ্যাডভোকেট আকমল হোসেন শিক্ষা ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সামাজিক সংগঠনের শিক্ষা বিভাগ।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় বয়স্ক পুরুষ আর দুপুরে বয়স্ক নারীরা বিনা খরচে বাংলা, আরবী, অংক ও ইংরেজি বিষয়ে পড়ালেখা করে চলেছেন।
কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের চড়াইকোল এলাকায় রেলক্রসিং সংলগ্ন গ্রাম্য মনোরম-ছিমছাম পরিবেশে আধুনিক দৃষ্টিনন্দন বৃহৎ ভবনে অবস্থিত এই সংগঠনের প্রধান ক্যাম্পাস ও কার্যালয়। অন্যান্য শিক্ষা কেন্দ্রগুলো হচ্ছে নন্দলালপুর কলম মোড়, এলংগী পাড়া, কুমারখালী পাবলিক লাইব্রেরির দ্বিতীয় তলা এবং হয়তাপাড়ায়। এছাড়াও পাশ্ববর্তী খোকসা উপজেলায় একটি কেন্দ্র রয়েছে থানাপাড়া মহল্লায়।
সরেজমিনে কয়েকটি কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, চমৎকার শ্রেণিকক্ষে ভানু নেছা, ফাতেমা বেগম, মজিরন নেছা, হাজেরা খাতুন, আব্দুল হাকিম, লোকমান শেখ, মমতাজ বেগম প্রমূখ বয়স্ক শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট পোষাক শরীরে জড়িয়ে পাঠ শিখছেন। শিক্ষকেরা সাচ্ছন্দে করাচ্ছেন পাঠদান। দাদা-দাদী, নানা-নানীর বয়সী শিক্ষার্থীরা ভাঙ্গা ভাঙ্গা ভাবে উচ্চারণ করছে বাংলা ও আরবী শব্দ। এদের সকলের বয়স ৪৫ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে।
এসময় ৭০ বছর বয়োজ্যেষ্ঠ মমতাজ বেগম জানান, আমরাতো বাংলা, আরবি মাসলাসহ অনেক আমরাতো কিছু জানতাম না, কিছু শিক্ষার জন্য আসছি, অনেক কিছু জানতে পেরেছি। কেমননা আমরাতো পিছিয়ে ছিলাম। আমরা চাই এমন শিক্ষা সেবা চলমান থাকুক।
অপর শিক্ষার্থী ভানু নেছা বলেন, এখান থেকে নিয়মিত ভাতা, শিতের কাপড়ের পাশাপাশি সহিভাবে নামাজ পড়া, বাংলা, আরবি সঠিকভাবে শিখতে পেড়েছি।

শিক্ষা বিস্তারে অনন্য কৃতিত্বের অধিকারী এই হাতেজান নেছা বয়স্ক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে জানা যায়, ২০২২ সালে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। অত্র গ্রামের মানবিক সন্তান, খ্যাতনামা বিশিষ্ট আইকর আইনজীবি আকমল হোসেন তাঁর নিরক্ষর মায়ের অনুরোধে এই কার্যক্রম শুরু করেন। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি সাধারণ শিক্ষা ও ধর্মীয় শিক্ষা বিস্তার করার লক্ষে এমন শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করে সামাজিক দায়িত্ব পালনে এগিয়ে এসেছেন বলেও জানান।
বর্তমানে ছয়টি কেন্দ্রে প্রতিদিন দুই শিফটে পাঠদান করানো হচ্ছে। প্রতিটি শিফটে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ জন। ৯জন শিক্ষক শিক্ষিকা রুটিন মাফিক ক্লাস পরিচালনা করেন। যাদের মাসিক সম্মানী ভাতা ৫-১২ হাজার টাকার মধ্যে। শিক্ষার্থীদের যাবতীয় শিক্ষা উপকরনসহ বৃত্তির মাধ্যমে সহায়তার ব্যবস্থাও করা হচ্ছে। বিধবা প্রতিবন্ধী ও হতদরিদ্র শিক্ষার্থীদের প্রতি মাসে তিন শত থেকে পাঁচ শত টাকা করে সহায়তা প্রদানও অব্যহত রয়েছে। প্রতিটি কেন্দ্রে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা বাংলা ইংরেজির পাশাপাশি দৈনন্দিন জরুরী মাসয়ালা মাসায়েলসহ মাসনুন দোয়া পরিপালনে বেশ পারদর্শির পরিচয় দিচ্ছেন। শুদ্ধভাবে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করার আলাদা যোগ্যতা অর্জন করছেন তারা। অন্যদিকে অত্র ফাউন্ডেশনের অন্যতম দ্বীনি প্রতিষ্ঠান এবতেদায়ী মাদরাসা শুরু থেকেই উপজেলার মধ্েয শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছে।
কথা হয় প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ আব্দুল মালেকের সাথে। তিনি জানান, আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির ২০২২ সালে পথচলা শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যেই এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অত্র এলাকার পুরুষ এবং মহিলা ধর্মীয় ঙ্গানের পাশাপাশি যাবতীয় শিক্ষা গ্রহন করছে। শিক্ষা গ্রহনের সকল উপকরন প্রতিষ্ঠান থেকে দেওয়া হয়ে থাকে এছাড় এসকল বয়স্ক, বিধাব, পুঙ্গদের মাসিক ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। আমি মনে করি এটি দেশের একটি ব্যতিক্রমধর্মী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
সাত সদস্েযর একটি যোগ্য পরিচালনা কমিটির তত্বাবধায়নে হাতেজান নেছা বয়স্ক বিদ্যালয় ও এ্যাডভোকেট আকমল হোসেন শিক্ষা ফাউন্ডেশন পরিচালিত হচ্ছে। এই কমিটির অন্যতম সদস্য নন্দলালপু ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও সমাজ হিতৌষী মোঃ নজরুল ইসলাম জানান, আকমল হোসেন ফাউন্ডেশন কর্তৃক এই প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার পাশাপাশি ধর্মীয় ঙ্গান, ধর্মীয় উচ্চানের মধ্য দিয়ে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ুক।
তিনি আরো বলেন, অচিরেই কর্মক্ষম নারীদের স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে সেলাই প্রশিক্ষণ এবং স্কুল কলেজ পড়ুয়া দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কম্পিউটার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
বিনা খরচে জ্ঞানের আলো ছড়ানো হাতেজান নেছা বয়স্ক বিদ্যালয় সম্পর্কে কুমারখালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী এজাজ কায়সার বলেন, আমি জানতে পারলাম হাতেজান নেছা বয়স্ক বিদ্যালয় এটি ৭টি কেন্দ্রের মাধ্যমে বয়স্কদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এটি অত্যান্ত একটি ভালো উদ্যোগ, কারন যারা আগে পড়ালেখা করতে পারেনাই তাদেও জন্য এটা একটা বড় সুযোগ কারন তারা এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অক্ষর ঙ্গান সম্পূর্ণ করতে পারবে। সেসময় তিনি এই প্রতিষ্ঠানের সাফল্য কামনার পাশাপাশি আরোও কেন্দ্র বাড়ানোর পরামর্শ দেন।
সামাজিক কুসংস্কার আর ধর্মীয় বেদাতী গোড়ামি দুর হোক, শিক্ষা আর জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত আকমল হোসেন শিক্ষা ফাউন্ডেশন দ্বীপ্ত প্রত্যয়ে এগিয়ে যাক এটাই সবার প্রত্যাশা সকলের।

 

সর্বাধিক পঠিত