শুক্রবার, মে ১৭, ২০২৪

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

তাহেরপুরে প্রতিদ্বন্দ্বী পাচ্ছেন না এমপিপত্মী

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী পাচ্ছেন না স্থানীয় এমপি আবুল কালাম আজাদের সহধর্মিনী খন্দকার শায়লা পারভীন। মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য এখানে শুধু শায়লা ও তাঁর ভাই তানভীর ইসলাম ফেরদৌস মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। যাচাই-বাছাইয়ে বোনের মনোনয়নপত্র বৈধ হলে সরে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছেন ভাই তানভীর।
তফসিল অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়েছে। ৯ মার্চ তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদেও উপনির্বাচন হবে। একই দিন রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌরসভাতেও মেয়র পদে উপনির্বাচনের কথা রয়েছে। তবে এ পৌরসভার বরখাস্ত হওয়া মেয়র আব্বাস আলীর করা এক রিটের কারণে এই উপনির্বাচন স্থগিত হয়ে যেতে পারে।
কাটাখালী পৌরসভার মেয়র ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মেয়রের পদ থেকে পদত্যাগ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে জিতে তিনি এমপি হয়েছেন। এখন তার সহধর্মিনী শায়লা পারভীন এ পৌরসভার মেয়র পদের উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। শায়লার বাবা আলো খন্দকার তাহেরপুর পৌরসভার প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন। চেয়ারম্যান থাকাকালে তিনি চরমপন্থীদের হাতে খুন হন। এরপর উপনির্বাচনে ২০০৩ সালে শায়লা পারভীন এই পৌরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। পরে আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। আবুল কালাম আজাদ মেয়রের পদ ছেড়ে দেওয়ায় শূন্যপদে উপনির্বাচন হচ্ছে।
এই উপনির্বাচনে পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত মেয়র বাবুল খান ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু বকর মৃধা মনসুর রহমানের প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ ছিল। তবে এমপিপত্মী প্রার্থী না হলেই তারা প্রার্থী হবেন বলে জানিয়েছিলেন। এমপিপত্মী শায়লা পারভীন ও তার ভাই তানভীর ইসলাম ফেরদৌস মনোনয়নপত্র তোলার কারণে তারা আর তোলেননি। বিএনপি এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে দলটির স্থানীয় কোন নেতা প্রার্থী হননি।
তানভীর ইসলাম ফেরদৌস বলেন, মেয়র প্রার্থী মূলত তার বোন খন্দকার শায়লা পারভীন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ে শায়লার প্রার্থীতা বৈধ হলে তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেবেন। কোন কারণে বোনের মনোনয়নপত্র বাতিল হলে তিনি প্রার্থী থাকবেন।
খন্দকার শায়লা পারভীন বলেন, ‘আমার নির্বাচন করার কোন আগ্রহ ছিল না। নেতাকর্মী-সমর্থক আর সাধারণ মানুষ বাড়িতে এসে বসে থাকছেন। নির্বাচন করার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাই বাধ্য হয়েই নির্বাচন করতে হচ্ছে।’
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার বাচ্চারা ছোট। শায়লা নির্বাচন করুক, এটা আমারও ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু দলের ভেতর থেকেই অনেক চাপ। সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে শায়লাই নির্বাচন করুক। তাই বাধ্য হয়েই মত দিতে হয়েছে।’
বাগমারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল মজিদ বলেন, ‘মেয়র পদে দুজন মনোনয়নপত্র তুলে জমা দিয়েছেন। তারা ভাই-বোন। শেষ পর্যন্ত একজন প্রার্থী থাকবেন বলেই মনে হচ্ছে। মেয়র পদে হয়তো ভোটগ্রহণের প্রয়োজন হবে না। ভোট হলে আমাদেরও ভাল লাগতো। কিন্তু অন্য কেউ কেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেন না তা বলতে পারব না।’
তিনি জানান, কাউন্সিলরের মৃত্যুর কারণে পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডেও উপনির্বাচন হচ্ছে। নয়জন মনোনয়নপত্র তুলেছিলেন। এদের মধ্যে চারজন জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা হবে ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। প্রত্যাহার করা যাবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
এদিকে একাধিক মামলার আসামি হওয়ার কারণে স্থায়ী বরখাস্ত হন পবার কাটাখালী পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলী। মেয়রের পদ শূন্য হওয়ায় এই পৌরসভাতেও ৯ মার্চ উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তবে তার আগেই উচ্চ আদালতে রিট করে রেখেছেন আব্বাস। সেই রিট এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। তাই নির্বাচন স্থগিত চেয়ে তিনি আবার আইনজীবীর মাধ্যমে বিষয়টি উচ্চ আদালতের নজরে এনেছেন। আদালত নির্বাচন স্থগিত করেছে বলে দাবি করেছেন আব্বাস আলী। যদিও নির্বাচন কমিশন কোন নির্দেশনা দেয়নি।
এ বিষয়ে সাবেক মেয়র আব্বাস আলী বলেন, ‘মেয়রের পদ থেকে বরখাস্তের আইন আছে, কিন্তু আইনের যথাযথ প্রয়োগ না করে আমাকে বরখাস্ত করা হয়। এ নিয়ে আমি হাইকোর্টে রিট করেছি। সেই রিটের শুনানি হয়নি, নিষ্পত্তিও হয়নি। রিট থাকা অবস্থায় উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করায় বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনা হয়েছে। হাইকোর্ট উপনির্বাচন স্থগিত করেছেন।’
জানতে চাইলে পবা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, ‘আমাদের জেলা কার্যালয়ে আইনজীবীর একটা সার্টিফায়েড কপি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে হাইকোর্ট দুইমাসের জন্য এই উপনির্বাচন স্থগিত করেছেন। কিন্তু এই কপি দিয়ে আমাদের কিছু করণীয় নেই।’
বুধবার দুপুর পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন নির্বাচন স্থগিতের ব্যাপারে কোন নির্দেশনা দেয়নি জানিয়ে শহিদুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, ‘মেয়র পদে নির্বাচন করতে নয়জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলে জমা দিয়েছেন। হাইকোর্ট থেকে নির্বাচন কমিশনে কোন নির্দেশনা গেলে কমিশনই নির্বাচন স্থগিত করবে। যতক্ষণ কমিশন কোন নির্দেশনা না দিচ্ছে, ততক্ষণ আমাদের নির্বাচনের কার্যক্রমের মধ্যেই থাকতে হবে।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই পৌরসভার মেয়র হতে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সামা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া পৌর জামায়াতের সাবেক আমীর আবদুল হাইও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে বিএনপির কোন নেতা এখানেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি।

সর্বাধিক পঠিত