সোমবার, মে ২০, ২০২৪

নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল

আর ও খবর

ডায়াবেটিসে মুখের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় অবহেলা নয়

ডা. মো. সিকান্দার আবু জাফর : মানুষের মুখ বিভিন্ন রোগের সূচনা স্থল। সে কারণে মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সচেতন হওয়া দরকার। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মুখের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাড়তি যত্ন নেওয়া আবশ্যক। ডায়াবেটিস সেগুলোর একটি। ডায়াবেটিস রোগীদের বেলায় মুখবিবরের যত্ন নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা দাঁত ও মাঢ়ীর সমস্যায় উচ্চঝুঁকিতে থাকে। রক্তে শর্করার পরিমাণ বেশি থাকায় ডায়াবেটিস আক্রান্তরা অন্যদের তুলনায় মুখবিবরের নানা রোগ সৃষ্টিতে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে বাড়তি শর্করা থাকায় শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায় এবং শরীরে যে-কোনো ধরনের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়েÑ এই কারণে তাদের জন্য মুখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখা বেশ কষ্টকর। তাই ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মুখবিবরের প্রতি বাড়তি খেয়াল রাখতে হয়।

সাধারণত সুস্থ শরীরে নিয়মিত খাবার গ্রহণের পর খাবারের চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়া খাদ্যকণা দাঁত, মাঢ়ী ও মুখবিবরের অন্যান্য অংশে আস্তরণ হিসেবে জমা হয়। ওই আস্তরণে মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে মিনিটের মধ্যে ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস-সহ বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর জীবাণু জন্মায়। দাঁতের ওপর জমা হওয়া এই পুরু সাদাটে রংয়ের আস্তরণকে ডেন্টাল প্ল্যাক বলা হয়। ২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ডেন্টাল প্ল্যাক শক্ত হলদে আবরণে পরিণত হয়Ñ যাকে ক্যালকুলাস বলা হয়। ক্যালকুলাস প্রথমে দাঁত ও মাঢ়ীর মাঝামাঝি অবস্থান নেয় এবং পরবর্তীতে ক্রমাগত আকারে বড় হতে থাকে। খাবার খাওয়ার সময় পেষণক্রিয়া চলাকালে চোয়ালের অতিরিক্ত পীড়নের ফলে ক্যালকুলাস দাঁত ও হাড়ের সন্ধি বরাবর গভীরে জমা হতে থাকে এবং ক্যালকুলাসের ক্রমাগত আঘাতের কারণে মাঢ়ীতে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। মাঢ়ী লালচে হয়ে ফুলে ওঠে, সামান্য চাপে মাঢ়ীতে ব্যথা অনুভূত হয়। খাবার খাওয়ার সময় অথবা যে-কোনো ধরনের আঘাতে মাঢ়ী থেকে রক্ত পড়ে, ক্ষতিকর জীবাণুর সংক্রমণের ফলে মাঢ়ী থেকে প্রায়ই পুঁজ পড়ে, খারাপ স্বাদ ও দুর্গন্ধ তৈরি হয়, দাঁত থেকে মাঢ়ী দূরে সরে যায়Ñ দাঁতের বন্ধন আলগা হয়ে যায়, দাঁতগুলো ক্ষয় হয়ে পরস্পর মধ্যে ফাঁক তৈরি হয়। ধীরে ধীরে দাঁত পড়ে যায়। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের বেলায়ও এগুলোর ব্যতিক্রম কিছু ঘটে না।

ডায়াবেটিস আক্রান্তদের রক্তে শর্করা বেশি থাকায় লালারসেও শর্করার উপস্থিতি থাকে এবং মুখবিবরের পরিবেশ বেশ শুষ্ক হয়। এই অবস্থায় লালারস স্বাভাবিকভাবে মুখবিবর ধুয়ে পরিষ্কার রাখার ক্ষমতা হারায়। লালারসের ব্যাকটেরিয়ানাশক ক্ষমতাও খর্ব হয়। উপরন্তু লালারসের শর্করা মাঢ়ী ও দাঁতে বাড়তি আঠালোভাব তৈরি করে দ্রুত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার বংশবৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আর মাঢ়ীতে ক্ষত তৈরি হলে সেখানে জীবাণুর বংশবৃদ্ধির উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয় এবং ক্ষত সারতে দেরি হয়। অনেকক্ষেত্রে এতে করে সমস্যার ধারাবাহিকতা বজায় থাকে এবং বড় রকমের ক্ষতি হয়। তাই ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ওই সমস্যাগুলো আরও তীব্রতর হয়।

এ ছাড়া মুখের শুষ্কভাব তৈরি হওয়ার কারণে মুখে কিছু ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটে। এর ফলে ওরাল থ্রাশ দেখা দেয়। তখন মুখবিবরের পরিবেশ আরও খারাপ হয়। ডায়াবেটিস আক্রান্তদের মধ্যে যারা নকল দাঁত ব্যবহার করেন, তাদের বেলায় মুখে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা আরও বেশি। কারণ- মাঢ়ী ও নকল দাঁতের মধ্যে যে ফাঁক থাকে সেখানে খাদ্যকণা বেশি জমে। এজন্যই তাদের ছত্রাকের সংক্রমণের হার অন্যান্য ডায়াবেটিস আক্রান্তদের তুলনায় বেশি।

এ ধরনের সমস্যা থেকে বাঁচতে ডায়াবেটিস আক্রান্তদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি মুখের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে হবে। নিয়মিত ফ্লুরাইডসমৃদ্ধ টুথপেস্ট ব্যবহার দিনে দুবার দাঁত ও মাঢ়ী পরিষ্কার করতে হবে। দিনে অন্তত একবার দুই দাঁতের মাঝে ফ্লসিং করতে হবে। ছয় মাস পর পর বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের নিবন্ধনধারী একজন মুখ ও দন্ত রোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেয়ে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যেমন- স্কেলিং, পলিশিং করাতে হবে। মুখের শুষ্কভাব দূরীকরণের জন্য পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে। খাবার গ্রহণের পর কুলি করা অত্যন্ত জরুরিÑ এতে মুখে জমে থাকা খাদ্যকণা বহুলাংশে কমে যায়। চিনিসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণের পর কুসুম গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করলে আঠালোভাব দূর হয়। যিনি নকল দাঁত ব্যবহার করেন, তিনি অবশ্যই নিয়মিত নকল দাঁত খুলে পরিষ্কার করবেন। মনে রাখতে হবে- ‘মুখের স্বাস্থ্য সার্বিক স্বাস্থ্যের দর্পণস্বরূপ।’-সহকারী তথ্য অফিসার
আঞ্চলিক তথ্য অফিস, রাজশাহী।

সর্বাধিক পঠিত