স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের হার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কয়েক সপ্তার তুলনায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর চাপ কমেছে। তবে প্রতিদিনই নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হলেও তুলনায় কম। এ অবস্থায় চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ¦র আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে হবে। ডেঙ্গুর পরীক্ষা নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না। জ¦র হয়েছে। তবে ডেঙ্গু পজেটিভ না আসলেও চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে।
রাজশাহীতে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি নিয়ে রোগীদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) মূল্য ছাড়াই ডেঙ্গুর পরীক্ষা করছে। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাপসাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা হচ্ছে ৬০ টাকায়। তবে বেরসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো থেকে জানানো হচ্ছে- ডেঙ্গু পরীক্ষা ফি ৩০০ টাকা। এছাড়া ডেঙ্গুর কয়েকটি পরীক্ষা রয়েছে। সেই পরীক্ষাগুলো করতে গেলে খরচ বেশি পড়বে।
সোমবার (৪ সেপ্টম্বর) বিকেলে রাজশাহী নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার ল্যাবএইড ডায়াগনস্টিকে গিয়ে রিসিপশনে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক ধরনের পরীক্ষা রয়েছে। দুই ধরনের ডেঙ্গু পরীক্ষা ৬০০ টাকা। পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গুর দুইটা টেস্ট ৬০০ টাকা। ইসলামী বাংক মেডিকেল হাসপাতাল ৩০০ টাকা। এছাড়া রাজশাহী রয়্যাল হাসপাতালে ৩০০ টাকায় ডেঙ্গু রোগ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ হাসপাতালে ৮৪ জন রোগী রয়েছে। ডেঙ্গুর এই মৌসুমে হাসপাতালটিতে ১ হাজার ৪৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। এই রোগীগুলোর মধ্যে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪৭ জন। এই রোগীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্তের আগে ঢাকায় যায়নি। এরমধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯৯৫ জন রোগী। মারা গেছেন ৫ জন।
দুই দিনের জ¦র নিয়ে ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য এসেছেন সাইফুল ইসলাম। তিনি বলেন, সকালে রাজশাহী হাসপাতালে আসার কথা ছিল ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য। কিন্তু আসতে পারিনি। হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা যাচ্ছে মাত্র ৬০ টাকা। কিন্তু বাইরে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে ৩০০ টাকা লাগছে। ডেঙ্গু পজেটিভ হলে আবার ওষুধ খেতে হবে।
রাসিকের নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে আসা সিজার হোসেন বলেন, এখানে ডেঙ্গু পরীক্ষায় কোনো টাকা নেয় না। পরীক্ষার পরে ফলাফলে তার নেগেটিভ এসেছে বলে জানান তিনি।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. এফ এম শামীম আহম্মেদ বলেন, বর্তমানে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। একমাস আগে যেখানে ১০০ জন রোগী ছিল। কিন্তু সেখানে এখন ৭৫ থেকে ৮০ জন রোগী রয়েছে। কিছু দিন থেকে এই অবস্থায় রয়েছে। যদিও হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ১০৩টি বেড রয়েছে। কোন রোগীকে চিকিৎসা নিতে এসে মেঝেতে থাকতে হয়নি।
তিনি আরো বলেন, ডেঙ্গুর এই মৌসুমে হাসপাতালটিতে ১ হাজার ৪৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। এই রোগীগুলোর মধ্যে স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪৭ জন। এই রোগীরা ডেঙ্গুতে আক্রান্তের আগে ঢাকায় যায়নি। জ¦র আসলে ডেঙ্গু পরীক্ষ করাতে হবে। একই সাথে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে। আমাদের হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মীরা ভালো কাজ করছে। তারা নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে আসছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফ.এ.এম. আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, রাসিকের মোট ১১টি স্থানে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। এরমধ্যে ১০টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও অপরটি রাজশাহী সিটি হাসপাতালে। এসব জাগায় বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। প্রতিদিন ২৪ থেকে ২৫ জন রোগী আসছে ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে।
তিনি আরো বলেন, যাদের পজিটিভ হচ্ছে তাদের প্রথমিক যে চিকিৎসা- সেটি দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বেশি সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হচ্ছে। আমরা সবাই এই বার্তা জানাচ্ছি- জ¦র আসার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে পরীক্ষা করাতে। ডেঙ্গুর পরীক্ষা নিয়ে কোনো ধরনের অবহেলা করা যাবে না।
রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, সরকার নির্ধারিত ফিতে রাজশাহীতে ডেঙ্গু পরীক্ষা করা হচ্ছে। ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা রেটে টেস্ট করা হচ্ছে। তবে ডেঙ্গু শনাক্তে অন্য কোন পরীক্ষা থাকলে খরচ বেশি হতে পারে।