স্টাফ রিপোর্টার : দীর্ঘদিন যাবত কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) চার কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ। এদের মধ্যে একজনকে সাসপেন্ড এবং আরেক জনের বেতন ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। বুধবার (২০ সেপ্টেম্বর) রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আরিফ আহম্মদ চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
শোকজ নোটিশপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা হলেন, পুরকৌশল বিভাগের জুনিয়র সেকশন অফিসার মো. আব্দুল ওয়াহেদ খান (টিটু), রুয়েটের কেমিক্যাল এন্ড ফুড প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ডাটা প্রসেসর মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, রুয়েট মেডিকেল সেন্টারের অফিস সহায়ক মো. মন্টু ও ফলিত বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অফিসের অফিস সহায়ক মো. এনামুল হক।
এরমধ্যে, কর্মস্থলে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থেকে বিশ্ববিদ্যালয় বিধি ভঙ্গ করায় আব্দুল ওয়াহেদ খান টিটুর বেতন-ভাতা স্থগিত করা হয়েছে। আর মন্টু ও মামুন দু’জনেই দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ থাকার কারণে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানা গেছে। মো. এনামুল হকের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি। তবে, তাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
রুয়েট সূত্রে জানা যায়, টিটু ২০০৪ সালে রাজশাহী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের আহবায়ক ছিলেন। পরে ২০১৩ সালে মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকে পদস্থ হন। জানা যায়, রাজশাহীর প্রভাবশালী এক নেতার সুপারিশে রুয়েটে চাকরি হয় টিটুর। ২৪ জুলাই ২০১৭ সালে রুয়েটে যোগদানের পর অনিয়মিতভাবে অফিস করতে থাকেন টিটু। পরবর্তীতে, ২০১৮ সালের দিকে হঠাৎ একেবারেই রুয়েটের পুরকৌশল বিভাগ থেকে নিখোঁজ হন তিনি। তবে অটোমেশন পদ্ধতিতে বেতন-ভাতা ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করায় টানা পাঁচ বছর অফিসে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত তুলছেন বেতন-ভাতা। আর রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে নিয়মিত ইনক্রিমেন্টও পেয়েছেন। পাঁচ বছর পর টিটুর এমন স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়টি রুয়েট কর্তৃপক্ষের নজরে আসায় তাকে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে।
এছাড়া, শোকজ নোটিশপ্রাপ্ত ডাটা প্রসেসর মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন রুয়েটে কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন বলে জানা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডজন খানেক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী রুয়েটে চাকরি করেও নিজ কর্মস্থলে আসেন না দিনের পর দিন। এদের মধ্যে পাঁচ থেকে ছয়জন শিক্ষক দেশের বাইরে আছেন এবং তাদেরও অতিসত্ত্বর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজ নিজ কর্মস্থলে এসে যোগদানের জন্য চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকায় তারাও ঠিকমতো অফিস করেন না। এদের মধ্যে অ্যাপ্লাইড সায়েন্সের ডিন অফিসের অফিস সহায়ক আব্দুল্লাহ আল মামুন আওয়ামী লীগের কর্মী। আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতার সর্বদা সান্নিধ্যে থাকায় দল ও নেতার দাপট দেখিয়ে তিনি অফিসে অনিয়মিত। তবে, একের পর এক কর্মকর্তা-কর্মচারী শোকজের ঘটনা ঘটায় বর্তমানে রুয়েটে অনিয়মিত মুখেরও দেখা মিলেছে বলেও জানিয়েছে রুয়েট কর্তৃপক্ষ।
সার্বিক বিষয়ে রুয়েটের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আরিফ আহম্মদ চৌধুরী বলেন, যাদের নোটিশ দেয়া হয়েছে তারা সকলেই অনিয়মিত ছিলো। দীর্ঘদিন তাদের অনুপস্থিতির কারণে তাদের কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘দলের কিংবা রাষ্ট্রের প্রভাব খাটিয়ে কেউ পার পাবেনা। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে, সবাইকে তার নিজ নিজ জায়গা থেকে শতভাগ নিয়ম মাফিক কাজ করতে হবে। তবেই রুয়েট তথা বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।’