স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপরেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ উদ্বিগ্ন বলে তিনি জানিয়েছেন। এটি বাংলাদেশের স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যমের ওপর অন্য দেশের হস্তক্ষেপ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেছেন, তিনি আশা করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর ব্যাখা দেবে।
মঙ্গলবার বিকালে রাজশাহী জেলা ও মহানগর যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নিয়ে কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। দেশটির ভিসানীতি একটি বিচ্ছিন্ন বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘ম্যালা কথা মার্কিন ভিসানীতি নিয়ে। এটি নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না। তারা কারে ভিসা দিবে, কারে দিবে না। কারে ৫ বছর দিবে, কারে ১ বছর দিবে বা কারে দিবে না- এটি তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। দেখলেন না, ভারতে কীভাবে সেলফি তুলল জো বাইডেন? আবার নিউইয়র্কে কীভাবে নৈশভোজে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানালো? সেখানেও তো ছবি তুললো, সাথে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও আছে। ছবিই তো কথা বলে। এখানে যারা ছবি আঁকো কিংবা চিত্রশিল্পী যারা, তারা তো বলে ছবিই কথা বলে। আমাদের সাথে সম্পর্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত চমৎকার।’
তিনি বলেন, ‘ভিসানীতি একটি বিচ্ছিন্ন বিষয়। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের একটি কথায় আমি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেছেন, “ভিসানীতির আওতায় গণমাধ্যমও আসবে।” আমাদের দেশের গণমাধ্যম অত্যন্ত স্বাধীন এবং স্বচ্ছভাবে কাজ করে। আমাদের দেশের গণমাধ্যম অত্যন্ত শক্তিশালী। স্বাধীন ও শক্তিশালী গণমাধ্যম সব সময় গণতন্ত্রের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। আপনারা অন্য কাকে ভিসা দিবেন, না দিবেন- কিচ্ছু আসে যায় না। আপনারা কোন আওয়ামী লীগ নেতাকে ভিসা দিলেন কিংবা দিলেন না, কোন বিএনপি নেতাকে ভিসা দিলেন কি দিলেন না, এতে কিচ্ছু আসে যায় না, আমরা কিছু মনে করি না। এটি আপনাদের ব্যাপার। কিন্তু কেন গণমাধ্যমের ওপর ভিসানীতি কার্যকর হবে, সেটি আমার বোধগম্য নয়।’
মন্ত্রী বলেন, ‘এটি গণমাধ্যমের সাথে সাংবাদিক থেকে কলামিষ্ট যারা যুক্ত আছেন, তারা মনে করছেন এটি আমাদের স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ। অন্য কোন দেশ আমাদের স্বাধীন গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ করা সমীচিন নয়। এটি গণমাধ্যমের কর্মীরা, গণমাধ্যমের সাথে সংশ্লিষ্টরা এটি মেনে নিতে পারে না। আশা করব, তারা বিষয়টি ব্যাখা করবেন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘একাত্তরে যখন মুক্তিযুদ্ধ হয়, তখনও ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ভারত মহাসাগরে সপ্তম নৌবহর এসে চোখ রাঙিয়েছিল। আজকেও কেউ কেউ চোখ রাঙায়। কিন্তু আমাদের আছেন শেখ হাসিনা, যার ধমনীতে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহমান। এই রক্ত রক্তচক্ষুর সামনে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ’১৪ সালেও ষড়যন্ত্র হয়েছিল। বিএনপি বলেছিল- ভোট করলে সরকার এক মাস টিকবে। আমরা ৫ বছর ছিলাম। ’১৮ সালে বলেছিল, সরকারকে টান দিয়ে ফেলে দেবে। টান দিতে গিয়ে তারা নিজেরাই পড়ে গিয়েছিল। আমরা এখনও পৌনে ৫ বছর ক্ষমতায়। এখন বলছে, নির্বাচন করতে পারে, কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে দেব না। ওতো সহজ না। আওয়ামী লীগ এত সহজে পরাজিত হওয়ার দল নয়।’
ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, ‘ভূরাজনীতিতে এখন বিএনপি হচ্ছে ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা। যারা বাতাস দিয়ে দিয়ে আপনাদের লাফাচ্ছে, তারা আপনাদের দুধ দেবে না। ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা যেমন দুধ পায় না, আপনারাও পাবেন না। বিএনপি বলেছে, আগামী মাসে ফাইনাল খেলা। আমরা প্রস্তুত আছি। কোথায় খেলবেন বলেন, আমরা যাব। আমরা যাব না, যুবলীগকে পাঠাব। আমরা ফার্স্ট টিম পাঠাব না, সেকেন্ড টিম পাঠাব। সঙ্গে যুব মহিলা লীগকেও পাঠাব। আগে তাদের সঙ্গে খেলে আসেন। কিন্তু খেয়াল রাখেন, খেলা শুরুর আগেই আপনাদের খেলোয়াড়রা যেন দলবদল করে না ফেলেন। খেলার আগেই যদি আপনাদের খেলোয়াড়রা দলবদল করে ফেলেন, তাহলে খেলতে পারবেন না।’
এর আগে সকালে সম্মেলন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। প্রধান বক্তা ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের স্থানীয় এবং কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।