স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রাজাবাড়ীহাটে অবস্থিত আঞ্চলিক দুগ্ধ ও গবাদি উন্নয়ন খামারের ৪০টি গরু নিলামের অনিয়মের সরেজমিন তদন্ত করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের গঠন করে দেওয়া কমিটি। তবে এই কমিটি খামারের কর্মকর্তাদের বাঁচাতে দায়সারা তদন্ত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি খামারে গিয়ে এই তদন্ত করে। তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন নাটোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. গোলাম মোস্তফা।
এর আগে গত মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সরকারি এ খামার থেকে ৪০টি গরু নিলামে বিক্রি করা হয়। এই নিলামে অংশ নিতে প্রায় ৪০০ জন ব্যাংক ড্রাফটের মাধ্যমে জামানত জমা দেন। কিন্তু এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্র কাউকেই নিলামে অংশ নিতে দেয়নি। কেউ অংশগ্রহণ করতে গেলে তাকে বাধা দেওয়া হয়। এভাবে সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন মূল্যের চেয়ে মাত্র ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা বেশি দিয়ে গরুগুলো কিনে নেয় সিন্ডিকেটটি। এই সিন্ডিকেটের হোতা ছিলেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সালমান ফিরোজ ফয়সাল।
ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা মঙ্গলবার বলেন, সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে সামান্য বেশি দরে গরু কিনতে খামার কর্তৃপক্ষই তাদের সহযোগিতা করেছে। তাদের সহযোগিতা ছিল বলেই প্রথমদফায় গরু কেনার পর একই স্থানে তারা দ্বিতীয় দফায় নিলাম করে গরুগুলো বিক্রি করেছেন।
সূত্র জানায়, মোট ৪০টি গরুর মধ্যে এই সিন্ডিকেটই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হাতিয়ে নেয় ৩০টি গরু। দ্বিতীয়বার নিলাম করার পর গরু বিক্রি করে যে লাভ হয়, সে টাকার অর্ধেক হারিয়ে গেছে বলে সিন্ডিকেটের অন্য সদস্যদের কাছে দাবি করেন সালমান ফিরোজ ফয়সাল। এভাবে লাভের টাকাও আত্মসাতের চেষ্টা করেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা। নিলামে আসা অন্য ১০টি গরুর মধ্যে ৫টি নেন খামারের কর্মকর্তারাই। কয়েকদিন ধরে এই গরুগুলো খামারেই রাখা ছিল। একটি সূত্র দাবি করেছে, বাকি ৫টি গরু জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ-প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে তা পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
নিলামে নামমাত্র মূল্যে কর্মকর্তাদেরই ৫টি গরু কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে খামারের উপপরিচালক ডা. আতিকুর রহমান তা অস্বীকার করেন। তবে নিলামের দিন খামারের অস্থায়ী চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী কামরুজ্জামান বাদশাকেই নিলামে গরু কিনতে দেখা গেছে। বাদশা ওই সিন্ডিকেটের হয়েই সব গরু কিনছিলেন। এ নিয়ে ১১ অক্টোবর গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে বিষয়টি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদারের নজরে আসে। পরে তাঁর নির্দেশনায় সেদিনই বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন অধিদপ্তরের প্রশাসন শাখার উপপরিচালক ডা. মো. মাহবুবুল আলম ভুঁঞা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে, নিলামের সময় কোন সিন্ডিকেট ছিল কি না মঙ্গলবার শুধু এটুকুই তদন্ত করেছে কমিটি। তদন্ত কমিটি অমিত হাসান নামের এক কৃষকের সঙ্গে কথা বলেছে। এই অমিত সিন্ডিকেটের বাইরে নিলামে অংশ নিলে তাকে বাধা দেওয়া হয়েছিল। তদন্ত কমিটির কাছে তিনি তা জানিয়েছেন। তবে সিন্ডিকেটকে সহযোগিতা করা এবং কর্মকর্তাদেরই ৫টি গরু কেনার বিষয়টি তদন্ত করেনি কমিটি। এভাবে দায়সারা তদন্ত করা হয়েছে।
কর্মকর্তাদেরই গরু কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির প্রধান ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘গরু নিলাম করার সময় কেউ বাধাগ্রস্ত হয়েছেন কি না শুধু এটুকু তদন্তের জন্য আমি এসেছি। আর কিছু আমি দেখব না।’ সিন্ডিকেটের হয়ে খামার কর্মচারী বাদশার গরুর দাম হাঁকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তদন্ত করেছি। সুপারিশসহ অধিদপ্তরে একটা প্রতিবেদন দিয়ে দেব। সেখান থেকে পরে সবকিছুই জানা যাবে। এখন আর বলব না।’