• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • ২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • somoyerkotha24news@gmail.com
  • +880-1727-202675

আমাদের টাকা নাই কই যাব?

প্রকাশ: রবিবার, ২২ অক্টোবর, ২০২৩ ২:৫৪

আমাদের টাকা নাই কই যাব?

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি : যাদের টাকা ছিল হেরা ঘর ভাইঙা লইয়া গেছে, আমাদের টাকা নাই কই যাব?
মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ে ফের ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন কবলিত স্থানে জিও ব্যাগ ফেলা থাকলেও প্রবল স্রোতে সেই ব্যাগ সরে গিয়ে উপজেলার বড় নওপাড়া ও বেজগাঁও ইউনিয়নের সুন্দিরসার এলাকায় গত ৫ অক্টোবর থেকে এ ভাঙন শুরু হয়।

ইতোমধ্যে ২১টি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে গেছে নদী গর্ভে। ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে অর্ধশত পরিবার। কমপক্ষে ১০টি পরিবারের বাড়িঘর অর্ধেকাংশ ভাঙা অবস্থায় রয়েছে। আতঙ্কে বড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছেন অনেকে। আবার যাদের যাওয়ার জায়গা নেই তারা ঝুঁকি নিয়েই বসবাস করছেন একেবারে নদীর কূল ঘেঁষে। ঘরের পাশেই ভাঙন চললেও টাকা পয়সা না থাকায় অনেকে স্থান পরিবর্তন করতে না পেরে ঝুঁকি নিয়েই নদীর পারে বসবাস করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বড় নওপাড়া গ্রামে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। জিও ব্যাগ ভর্তি বালুর বস্তা ফেলা হলেও বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। নদীর পারের কাঠ ও টিন দিয়ে তৈরি বসত ঘরগুলো সরিয়ে নেওয়া হলেও কমপক্ষে ৩টি পাকা ভবন একবারে নদীর পার ঘেঁষে এখনো দাঁড়িয়ে আছে।

নদী পারে বসে এর গতিবিধি লক্ষ্য করছেন বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম (৭৫)। নদীর পার ঘেঁষেই তার বসতভিটা। একমাত্র ছেলে মজনু, ছেলের বৌ আর নাতিকে নিয়ে নদীর পারেই তাদের বসবাস। তার ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন তাই অপরের দয়ায় চলে তার সংসার। এ বছর নদী ভাঙন শুরু হওয়ার পর তার ঘরের চারপাশের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিয়েছে মানুষ। কিন্তু তাদের টাকা পয়সা না থাকায় নদী পারেই রয়ে গেছেন তিনিসহ তার পরিবার। ঝুঁকির মধ্যে থেকেই সারাক্ষণ নদীর গতিবিধি লক্ষ্য করছেন তিনি। পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন কিছুটা কমলেও শঙ্কায় দিন পার করছেন তারা। এর আগেও দুইবার নদীতে বসতভিটা হারিয়েছেন এই বৃদ্ধা।

আরও পড়ুনঃ  নিয়ামতপুরে ঘাসফুলের উদ্যোগে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত

আনোয়ারা বেগম বলেন, এ বছর থেকে নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। যাদের টাকা পয়সা ছিল তারা আমাগো বাড়ির চারপাশ হতে ঘর বাড়ি ভাইঙা লইয়া অন্য জায়গায় চলে গেছে। আমাদের টাকা পয়সা নাই আমরা কোথায় যাব, তাই নদীর পারেই পড়ে আছি। আমার স্বামীর বসতবাড়ি এখন পদ্মার মধ্যখানে। যেখানে এখন আমরা বসবাস করছেন সে স্থান হতে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে। ৩০ বছর আগে সেই বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে এরপর বসতি করেছিলেন অন্য এক স্থানে সে বাড়িও বিলীন হয়ে গেছে ১০ বছর আগে।

তিনি আরও বলেন, আমার ছাওয়াল বুদ্ধিহীন। তাই অন্যের দয়ায় জীবন চলে আমাদের। এখন ঘর সরাই নিমু টাকা পাব কই।

আরও পড়ুনঃ  বিতর্কিত নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ২২ ডিসিকে বাধ্যতামূলক অবসর

শুধু আনোয়ার বেগম নয় নদীর পারেই দেখা যায় মনির মোল্লাকে। ইতোমধ্যে মনির মোল্লার ভাই কুতুব মোল্লার ঘর নদীতে ভেঙে গেছে। সেই সঙ্গে মনির মোল্লার বাথরুমও নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। নদীর পারে তিনটি টিনের ঘরে বসবাস করছেন মনির মোল্লা ও তার পরিবার।

মনির মোল্লার স্ত্রী আফসানা বেগম বলেন, প্রতিদিন সকালে উঠে দেখি আমাদের ঘরের এদিকে ফাটল দেখা দিয়েছে কিনা। রাতের বেলায় ঘুমাই না। বাচ্চা নিয়ে জেগে থাকি মনে হয়ে এ বুঝি ঘর দরজা নদীতে ভেঙে পড়ল। দুটি ছোট বাচ্চা নিয়ে বসবাস করি নিজেরা সাঁতার জানলেও বাচ্চাঁরাতো সাঁতার জানে না তাই সব সময় ওদের নিয়ে ভয়ে থাকি।

একই গ্রামের হুমায়ুন মোল্লার পাকা ভবনের সিঁড়ির নিচের অংশ নদীতে ভেঙে গেছে। ইতোমধ্যে ওই ভবন ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে হুমায়ূন মোল্লার পরিবারটি। পাশেই রিপনের বাড়ি। রিপনের টিনের ঘরের একেবারে পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নদী। নদীর পাশের তার ঘরের গোড়ায় ফাটল ধরেছে। রিপন বলেন, আমার খামের গোড়ায় ফাটল ধরেছে। কখন জানি ঘরটস নদীতে ধসে যায়। যাওয়ার তো জায়গা নাই তাই এখানেই আছি। বাচ্চা নিয়ে সারারাত আতঙ্কে থাকি। বাচ্চার ঘুমিয়ে থাকলেও নিজেরা জেগে থাকি কখন না জানি নদীতে ঘর ভেঙে যায় সেই আতঙ্কে।

আরও পড়ুনঃ  সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলে জনতা আইন নিজের হাতে তুলে নেবে : সরকারের উদ্দেশে আজহারী

ওই অঞ্চলসহ পদ্মার ভাঙন রোধে ২০২২ সালের ১৮ মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের খড়িয়া থেকে টঙ্গিবাড়ী উপজেলার দিঘীরপাড় পর্যন্ত ৯ দশমিক ১০ কিলোমিটার অংশে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক। ৪৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটি শুরু হয়। পরে লৌহজং উপজেলার লৌহজং-তেউটিয়া ইউনিয়নে ভাঙন দেখা দিলে চলতি বছর আরও ৪ দশমিক ৬২ কিলোমিটার বাড়িয়ে ১৩ দশমিক ৭২ কিলোমিটারের কাজ শুরু হয়েছে। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭৮ কোটি টাকা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের মুন্সিগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী বলেন, নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে মূল পদ্মা নদীর প্রবাহ লৌহজং অংশের দিকে চলে আসছে। ভাঙন শুরু হওয়ার দিন হতেই জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্থায়ী প্রতিরোধের কাজ আগামী নভেম্বর থেকে শুরু হবে। কিন্তু প্রকল্পের অর্থ ছাড় যেভাবে হওয়া উচিত সেভাবে শুরু থেকেই হচ্ছে না। এ পর্যন্ত আমরা ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। বরাদ্দ ৩ বছরের তারপরেও আমরা চেষ্টা করছি কন্ট্রাক্টরদের দিয়ে দ্রুত কাজ করানোর জন্য ।

সর্বশেষ সংবাদ

বাড়িতে তুলসী গাছ থাকতে ওজন ঝরানো নিয়ে চিন্তা?
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ ১০:৩১
রোজের ব্যবহারের একটি জিনিস থেকেই ঘরের দূষণ বাড়ছে!
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ ১০:৩১
গৃহবধূদের সঙ্গে শ্রমিকের তুলনা কেন!
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ ১০:৩১
পদত্যাগের গুঞ্জন নিয়ে মুখ খুললেন নাহিদ ইসলাম
রবিবার, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫ ১০:৩১
 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার

ঢাকা অফিস: ১২১,ডি.আই.টি, এক্সটেনশন রোড, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। রাজশাহী অফিস: বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী। ই-মেইল: somoyerkotha24news@gmail.com, মোবাইল: 01727202675