স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে সক্রিয় হয়ে উঠেছে ওষুধসহ অন্যান্য মেডিকেলসামগ্রী চুরির সিন্ডিকেট। সিন্ডিকেটের সদস্যরা প্রতিনিয়তই দামি দামি ওষুধ, ব্যান্ডেজ, স্যালাইনসহ অন্যান্য মেডিকেলসামগ্রী চুরি করছে। ওয়ার্ড, স্টোর কিংবা অপারেশন থিয়েটারের (ওটি) ইনচার্জদের সহায়তায় চোর চক্রটি সরকারী এসব ওষুধ বাইরে নিয়ে বিক্রি করছে।
সবশেষ মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতাল থেকে বেশকিছু ব্যান্ডেজ চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় কামরুজ্জামান রনি নামের এক কর্মচারীকে আটক করা হয়েছে। রনি অর্থোপেডিক সার্জারির ওটি থেকে এসব ব্যান্ডেজ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। রনি হাসপাতালের দৈনিক মজুরিভিত্তিক পরিচ্ছন্নতাকর্মী। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘হাসপাতালে একটা চোর চক্র রয়েছে। অনেক দিন ধরে তারা ওষুধসহ অন্যান্য মেডিকেলসামগ্রী চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আমার লোকজন দিয়ে এদের শনাক্ত করেছি। তাদের দিকে নজরদারি করা হচ্ছে। এর ফলে মাঝে মাঝেই তারা ধরা পড়ছে।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিয়ত ওষুধ চুরির কারণে রোগীরা সরকারী ওষুধ বিনামূল্যে পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। এ জন্য ওষুধ ও সরঞ্জামাদি চুরি রোধে সম্প্রতি হাসপাতাল পরিচালক পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। চুরির সাথে যেই জড়িত হোক না কেন তাকে আটকের নির্দেশ দিয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে পরিচ্ছন্নতাকর্মী কামরুজ্জামান রনি বেশকিছু ব্যান্ডেজ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় হাসপাতাল পুলিশ বক্সের সদস্যরা তাকে আটক করেন। আটকের এরপর তাকে পরিচালকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিচালক তাকে থানায় হস্তান্তরের নির্দেশ দেন। এছাড়া হাসপাতালের পক্ষ থেকে রনির বিরুদ্ধে মামলা করারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
সম্প্রতি ডেঙ্গুর প্রার্দুভাব দেখা দেওয়ায় বাজারে স্যালাইন সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় গত ১৯ অক্টোবর রাতে ডেঙ্গু রোগীদের চার কার্টন স্যালাইন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন মেহেদী হাসান নামের এক কর্মচারী। হাসপাতাল সূত্র বলছে, অর্থোপেডিক ওটির ইনচার্জ আব্দুর রহমানের সহযোগিতায় মেহেদি ওই স্যালাইন চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। আনসার সদস্যরা তাকে আটক করলেও পরে কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেয়নি। এর পাঁচ দিনের মধ্যে এবার ব্যান্ডেজ চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লেন কামরুজ্জামান রনি।
এর আগে গত বছরের আগস্টে হাসপাতাল থেকে এক কর্মচারীর ওষুধ চুরির ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক মাধ্যমে। ওই চুরির ভিডিও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তৌহিদুল হক সুমন তার ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মেডিসিন ব্লকে স্টাফের ওষুধ চুরি। রোগীর ওষুধ কিনতে হয়, আর সরকারি ওষুধ চুরি হয়।’ তবে ওই কর্মচারীকে শনাক্ত করেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এরপর গত ৯ সেপ্টেম্বর ওষুধ চোর দুই কর্মচারী ধরা পড়েন।
সেদিন দুপুরে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের দ্বিতীয় গেট দিয়ে ‘ওয়াটার ফর ইনজেকশন’ নামের ১০ প্যাকেট ওষুধ চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন দৈনিক মজুরিভিত্তিক দুই ওয়ার্ড বয়। আনসার সদস্যরা তাদের আটক করেন। এ দুজন হলেন- রেজয়ানুল ইসলাম রেজু (৪০) ও মো. সনি (২৪)। সিসি ক্যামেরায় ব্যাগ নিয়ে রহস্যজনক আচরণ দেখে হাসপাতাল পরিচালক তাদের আটকের ব্যবস্থা করেছিলেন। এরপর তাদের থানা-পুলিশে হস্তান্তর করা হয়।
হাসপাতাল পরিচালক এফএম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘হাসপাতালে যারা কর্মরত আছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সরকারী ওষুধ চুরির সাথে জড়িত। এরা এগুলো বাইরে বিক্রি করে। রোগিরা বাইরে থেকে ওষুধ কিনে ওটিতে নিয়ে গেলে সেখান থেকেও ওষুধ চুরি করা হয়। এই চক্রের সদস্যদের শনাক্ত করা হয়েছে। মনিটরিং করা হচ্ছে। এ কারণেই ইদানিং বেশকিছু চোর ধরা পড়েছে। অন্যদের দিকেও নজর রাখা হয়েছে। যারা ধরা পড়ছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। হাসপাতালের একটা তদন্ত কমিটিও সব তদন্ত করছে।’