• ঢাকা, বাংলাদেশ
  • ২৭শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • নিবন্ধিত অনলাইন নিউজ পোর্টাল
  • somoyerkotha24news@gmail.com
  • +880-1727-202675

মাঠভরা শীতের সবজি

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৩ ১০:২০

মাঠভরা শীতের সবজি

স্টাফ রিপোর্টার: সকাল-সন্ধ্যার কুয়াশায় বরেন্দ্র অঞ্চলে জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। বরেন্দ্রর মাঠে মাঠে শোভা পাচ্ছে সবুজ সবজির সমারোহ। সবজির বাম্পার ফলনে চাষিদের মুখে যেন হাসির ঝলক। শীতকালীন আগাম সবজি বাজারে তুলতে শুরু করেছেন তারা। মাঠে পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চাষিরা লাভবান হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে ৩৪ রকমের শাকসবজি। গত ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩০ রকমের শাকসবজি চাষ হয় ৩ হাজার ৮৯০ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ গতবারের তুলনায় এবার ১ হাজার ৭৫০ হেক্টর বেশি জমিতে চাষ করেছেন কৃষকরা। শীতের আগাম এসব সবজির মধ্যে বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, শিম, টমেটো, মূলা, পটল, করলা, ঝিঙ্গা ও বরবটি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া পালংশাক, পুইশাক, লালশাক এবং ধনিয়াপাতাও রয়েছে এ তালিকায়।

সূত্র জানায়, জেলায় এবার সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে বেগুন। মোট ৯০৮ হেক্টর জমিতে এ সবজি আবাদ করেছেন চাষিরা। আর ফুলকপি ৩৮৭ হেক্টর, বাঁধাকপি ৩২৩ হেক্টর, শিম ২৪১ হেক্টর, মূলা ৪৩৫ হেক্টর ও টমেটো চাষ হয়েছে ৬৪ হেক্টর জমিতে। এছাড়া লালশাক ৫৩৮ হেক্টর ও পুইশাক ৩০২ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। গত ২০২২-২৩ মৌসুমেও সর্বোচ্চ ৬৬৯ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়। ওই বছর ফুলকপি ২৭৫ হেক্টর, বাঁধাকপি ২৩৯ হেক্টর ও মূলা চাষ হয় ৩২৮ হেক্টর জমিতে।

আরও পড়ুনঃ  রাজশাহীতে গাছ সুরক্ষায় পেরেক অপসারণ কর্মসূচি শুরু

কৃষি অফিস থেকে পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শীতের আগাম সবজি চাষে গতবারের মতো এবারও শীর্ষে রয়েছে পবা উপজেলা। এ বছর উপজেলাটিতে ১ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে শাকসবজি চাষ হয়েছে। গত মৌসুমে চাষ হয় ১ হাজার ২১০ হেক্টর জমিতে। গোদাগাড়ী উপজেলায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ১২০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে শাকসবজি। শহরের মূল প্রাণকেন্দ্র বোয়ালিয়া থানা এরিয়াতেও ১৭০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে।

তথ্যমতে, পবার নওহাটা ও খড়খড়ি, মোহনপুরের কেশরহাট ও বিদিরপুর, পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারে সবচেয়ে বেশি শাকসবজি পাইকারি ক্রয়বিক্রয় হয়। এসব হাটে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা আসেন। এছাড়া এখানকার আড়তদাররা ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ট্রাকযোগে সবজি পাঠিয়ে দেন। শীত মৌসুমের সবজি উঠতে শুরু হওয়ায় এসব বাজারও জমতে শুরু করেছে। ব্যস্ত সময় কাটছে চাষিদের। অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে পরিচর্যায় মনোযোগ তাদের।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শীতের সময় অনেক বেশি সবজি বাজারে ওঠে। ফলে তুলনামূলক চড়া দাম পাওয়া যায়। যে কারণে আগাম সবজিতে বিশেষ নজর থাকে তাদের। আগাম সবজি বাজারে তুলতে পেরে দামও বেশি পাচ্ছেন চাষিরা। শিম, টমেটো ও বেগুনের দাম তুলনামূলক বেশি। আর দু’সপ্তাহ পর থেকে পুরোদমে সবজি উঠতে শুরু করবে। যদিও ইতোমধ্যে কমতে শুরু করেছে লাউ ও শশার দাম। তবে এবার বেশ লাভবান হওয়ার আশাবাদ চাষিদের।

আরও পড়ুনঃ  নগরীতে অপারেশন ডেভিল হান্টের ১ জনসহ অন্যান্য অভিযোগে গ্রেপ্তার ১৩ জন

জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল এলাকায় এ মৌসুমে ১০ প্রকার সবজি ও তিন রকম শাক চাষ করেছেন জেলা যুবলীগের সদ্য সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত সৈকত। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, বাসায় খাওয়ার জন্য প্রতিবছরই সবজি চাষ করি। তবে এবার সবজির আইটেম বাড়িয়েছি। এবার আমার চাষ করা সবজির তালিকায় রয়েছে- শিম, করলা, লাউ, চাল কুমড়া, বেগুন, টমেটো, কলা, পেপে, ডুমুর ও মাসকলাই। এছাড়া লালশাক, পুইশাক ও পালংশাক লাগিয়েছি।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক এ সদস্য বলেন, সবজি চাষের মতই আবহাওয়া রয়েছে। যে কারণে সবজির ফলন ভালো হয়েছে। ঠিকভাবে পরিচর্যা করার কারণে আমার জমিতে পোকামাকড়ের আক্রমণ হয়নি। এগুলো উত্তোলনের পর পেঁয়াজ, রসুন ও দেশি আলু চাষ করব। জমি প্রস্তুত রেখেছি। শ্রমিক পেলে এ সপ্তাহেই এসব লাগানো শুরু করব।

মোহনপুরের মৌগাছি এলাকার চাষি কামরুল ইসলাম বলেন, বিঘা দুয়েক জমিতে কাঁচা মরিচ লাগিয়ে দাম এখন পর্যন্ত ভালো পেয়েছি। আমার জমির পাশে অনেকেই পটল ও লাউ চাষ করেছেন। তারাও প্রতি চালানে দাম ভালো পেয়েছে। তিনি বলেন, ফলনের আসল জিনিস হলো পরিচর্যা। আমরা এটা করেছিলাম বলে আজ বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পেয়ে খুশি।

মো. সেলিম নামে আরেক চাষি বলেন, এ বছর বরেন্দ্র অঞ্চলে বৃষ্টি কম হওয়ায় পঁচন ধরেনি। ফলে সেদিক দিয়ে কোনো ধাক্কা লাগেনি সবজিতে। গোদাগাড়ী উপজেলার চাষি আফজাল হোসেন বলেন, শীতের এসব সবজি অসময়ে বাজারজাত করতে পারায় দাম বেশি পাওয়া যাচ্ছে। তবে এসব সবজি আকারে ছোট সাইজের এবং ওজনে কম।

আরও পড়ুনঃ  সিরাজগঞ্জে শহীদ পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন তারেক রহমান

যদিও অভিযোগ রয়েছে, বরেন্দ্র অঞ্চলে গভীর নলকূপ থেকে জমিতে পানি নিতে বেশ বিড়ম্বনায় পড়তে হয় চাষিদের। সময়মত পানি দিতে না পেরে ফসলের ক্ষতির ঘটনাও নতুন নয়।

তবে ফলন ভালো হওয়ায় লক্ষমাত্রা অর্জন হবে বলে আশা করছেন কৃষি কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা জুয়েল রানা বলেন, ফলন যাতে ভালো হয়, সে লক্ষে ইঁদুর নিধন মাসিক প্রোগ্রাম চলছে। পতিত বা অব্যবহৃত জায়গায় আমরা পুষ্টি বাগান করে দিচ্ছি। এটা খুব সাড়া ফেলছে। এ প্রকল্পে বিষমুক্ত পিওর সবজি পাওয়া যাচ্ছে। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত করা যাচ্ছে।

এ ব্যাপারে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, এবারের আবহাওয়াটা চমৎকার। আমরাও মাঠে গিয়ে চাষিদের পরামর্শ দিয়েছি। ফলে আশা করছি, উৎপাদন ভালো হবে। লাভবান হবেন চাষিরা।

তিনি বলেন, রাজশাহীর সব উপজেলাতেই সবজি চাষ হয়। দিনে দিনে এসব সবজি পরিবহণের ব্যবস্থা থাকায় চাষিদের দামে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা নেই। চাষিদের মুখে হাসি ফোটাতে পারলেই আমরা খুশি। তাদের প্রণোদনা ও পরামর্শ যথাযথভাবে দেয়া হয়েছে আমাদের তরফ থেকে। চাষিরা লাভবান হবে বলে আমরা আশাবাদি।

সর্বশেষ সংবাদ

 

রাজনীতি-এর আরও সংবাদ

 



সম্পাদক ও প্রকাশক : ইয়াকুব শিকদার

ঢাকা অফিস: ১২১,ডি.আই.টি, এক্সটেনশন রোড, ফকিরাপুল, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। রাজশাহী অফিস: বহরমপুর (সিটি বাইপাস), জিপিও-৬০০০, রাজপাড়া, রাজশাহী। ই-মেইল: somoyerkotha24news@gmail.com, মোবাইল: 01727202675