স্টাফ রিপোর্টার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হয়েছে। এখন সংসদ সদস্যরা এলাকায় কোন সভা-সমাবেশ করতে পারবেন না। প্রতীক বরাদ্দের আগে ভোটও চাইতে পারবেন না। তবে তফসিল ঘোষণার পরদিনই আচরণবিধি ভেঙেছেন রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার তিনি নিজ এলাকায় শিক্ষক ও সরকারের বিভিন্ন ভাতাভোগীদের নিয়ে দুটি মতবিনিময় সভা করেছেন। এসব সভায় তিনি আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। এমপির এই মতবিনিময় সভার জন্য তানোরের পাঁচন্দর ইউনিয়নের সব মাধ্যমিক স্কুলের অষ্টম ও নবম শ্রেণির পরীক্ষা দুই ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুপুরে তানোরের কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে এমপির এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। পাঁচন্দর ইউনিয়ন পরিষদ এই সভার আয়োজন করে। সভার ব্যানারে লেখা ছিল, ‘বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশাজীবী মানুষের সাথে মতবিনিময়’। এ সভায় আসলে সরকারের বিভিন্ন ভাতাভোগী ও ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের শ্রমিকদের আনা হয়। পাশাপাশি ওই ইউনিয়নের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের ডাকা হয়। শিক্ষকদের এই সভায় যোগ দিতে বাধ্য করা হয় বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমপির এই সভার জন্য এ দিন পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোন প্রাথমিক বিদ্যালয়েই ক্লাশ হয়নি। শিক্ষকেরা সবাই সভায় যোগ দিয়েছিলেন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে এখন বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। এমপির সভায় যোগ দেওয়ার জন্য এ ইউনিয়নের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে অষ্টম ও নবম শ্রেণির পরীক্ষা দুই ঘণ্টা এগিয়ে আনা হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। তবে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। এমপির সভার জন্য পরীক্ষা এগিয়ে আনায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে অভিভাবকদের মাঝে।
পরীক্ষা এগিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে কৃষ্ণপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম রাব্বানীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে এ নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চাননি। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘পরীক্ষা তো এভাবে এগিয়ে আনার সুযোগ নেই। আমাকে কেউ জানায়নি। আমি জানি না। খোঁজ নিয়ে দেখব।’ ক্লাস বন্ধ রেখে শিক্ষকদের এই সভায় যোগ দেওয়ার বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (প্রাথমিক) মুনিরা খাতুন জানান, তিনিও এ বিষয়ে কিছু জানেন না। তিনিও খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
দুপুরে কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের মতবিনিময় সভায় এমপির ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশের মানুষকে ভাল রাখতে বিভিন্ন ধরনের ভাতা দিচ্ছে। ৪০ দিনের কর্মসৃজন প্রকল্পের নারী শ্রমিকেরা কাজ করেন না, বসে বসে মাথার উকুন তোলেন। পুরুষেরা গাছতলায় বাঘ-বকরি খেলা খেলেন। কিছু ভিআইপি শ্রমিক আবার কাজের স্থানেই যান না। বসে বসে টাকা নেন। তারপরেও মানুষকে টাকা দিতে এসব প্রকল্প চালু আছে। আওয়ামী লীগ সরকার এবার ক্ষমতায় এলে সব ভাতা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এটা তিনি গ্যারান্টি দিয়ে বলছেন। তাই নির্বাচনে নৌকা প্রতীকেই ভোট দিতে হবে।
এই সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নাসহ এমপির অনুসারী নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বিকালে কলাম ইউনিয়ন পরিষদ আয়োজিত আরেকটি মতবিনিময় সভায় তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন। কলমা ইউনিয়নের দরগাডাঙ্গা স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ সভা হয়। এই সভা থেকেও তিনি সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে ভোট চান।
রাজশাহী জেলা জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা শাহিনুর ইসলাম প্রামানিক বলেন, ‘এই মতবিনিময় সভার কথা আমরা জানতে পেরেছি। তফসিল ঘোষণার পর কোন এমপি এটা করতে পারেন না। তিনি প্রার্থী হলে কেবল প্রতীক বরাদ্দের পরই ভোট চাইতে পারবেন, এর আগে না। রিটার্নিং কর্মকর্তাও (জেলা প্রশাসক) এই সভার বিষয়ে জানতে পেরেছেন। তিনি এমপি সাহেবকে ফোনও করেছিলেন। খুব সম্ভবত এতক্ষণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে গেছে।’
আচরণবিধি ভেঙে এমপির এমন সভার বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী-১ আসনের নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার পর এই ধরনের সভা করার কোন সুযোগ নেই। এটি আচরণবিধি লঙ্ঘন। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানানো হবে।’ অভিযোগের বিষয়ে কথা বলতে সন্ধ্যায় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরীকে ফোন করা হলে তিনি ধরেননি। তাই এ বিষয়ে তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।