অনলাইন ডেস্ক: অভিনয়ের আগে নিয়মিত উপস্থাপনা করতেন এলিনা শাম্মী। এর মাধ্যমে তার ঝলমলে ভুবনে পথচলা শুরু হয়েছিল। রাজু আলীমের প্রযোজনায় চ্যানেল আই-এর ঈদ অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করতেন তিনি। বিভিন্ন জনের ইন্টারভিউ নিতে নিতে পরিচিতি বাড়ে তার। তখন এলিনা শাম্মীর অভিনয়ের সুপ্ত ইচ্ছে জাগে। ২০১৪ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত শাহ আলম কিরণ পরিচালিত ‘৭১-এর মা জননী’ ছবিতে প্রথম অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন এই অভিনেত্রী।
যে ছবিটি ফরিদুর রেজা সাগর ও ইবনে হাসান খানের নির্বাহী প্রযোজনায় ইমপ্রেস টেলিফিল্ম পরিবেশনা করেছিল। এলিনা শাম্মী জানান, নির্মাতা তাকে অডিশন দিতে বলেছিলেন। কোনোদিন তার অভিনয়ের অভিজ্ঞতা না থাকলেও এফডিসিতে অডিশন দিয়ে সুযোগ পেয়ে যান। প্রথম ছবির শুটিংয়ে বাড়ি থেকে টানা ১৯ দিন আউটডোরে ছিলেন। পরে প্রয়াত কিংবদন্তি সিনেমাটোগ্রাফার মাহফুজুর রহমানের রেফারেন্সে অনেকগুলো কাজের সুযোগ পান। এলিনা শাম্মী বলেন, তার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা। ইন্ডাস্ট্রিতে যতগুলো ভালো মানুষের দেখা পেয়েছি তারমধ্যে উনি শ্রেষ্ঠ।
করোনাকালে রায়হান রাফীর ‘জানোয়ার’ ওয়েব ফিল্মের মাধ্যমে নজর কেড়েছিলেন এলিনা শাম্মী। পরে অমানুষ, প্রিয়তমা, মুজিব একটি জাতির রূপকার এবং কদিন আগে ‘দরদ’ ছবির শুটিং করলেন।
এলিনা শাম্মী বলেন, প্রযোজকের দিন থেকে আমাকে কাস্টিংয়ের জন্য সবসময় ডিরেক্টররাই ডাকেন। সেভাবেই প্রিয়তমাকে সুযোগ পেয়েছিলাম। শাকিব খানের সঙ্গে সিনেমা শুনেই উচ্ছ্বসিত হয়েছিলাম। পরে এই সিনেমা সুপারডুপার হিট হয়ে গেল। কদিন আগে দরদে শুটিং করতে বেনারস গিয়েছিলাম। সেখানেও টেকনিক্যাল ক্রুরা আমাকে ‘প্রিয়তমা’র আর্টিস্ট হিসেবে সম্মান দিয়েছেন।
‘দরদ’ ও সুপারস্টার শাকিব খানের সঙ্গে অভিনয় অভিজ্ঞতা জানিয়ে এলিনা শাম্মী বলেন, খুবই চমৎকার লোকেশনে শুটিং করেছি। বেনারসে লোকেশনে অ্যান্টিক ফ্লেভার থাকবে। শাকিবসহ আমরা একসঙ্গে পরিশ্রম করে শুটিং করেছি। রাত পেরিয়ে সকাল হয়ে যায় কিন্তু আমাদের মনোযোগ ফুরায় না। যারা অভিনয় করেছেন প্রত্যেকেই দক্ষ। লোকেশন আর্টিস্ট গল্প সবকিছুতেই পরিপূর্ণতা থাকবে। ‘দরদ’ দেখলে দর্শক তৃপ্ত হবে বলে মনে করি।
শাকিবের সঙ্গে ‘প্রিয়তমা’ ও ‘দরদ’ ছবি করার পর মনে হয়েছে উনি সত্যিকারের ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে কাজ করার মতো যোগ্য আর্টিস্ট। পরিচালক ও প্রযোজকরা তাকে দিয়ে যতখানি কাজ করিয়ে নিতে পারবেন উনি সেই মাপের আর্টিস্ট। তাকে শুধু সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হবে।
এলিনা বলেন, ‘দরদ’ এ শাকিবের অভিনয় দেখে মনে হয়েছে, উনি আমাদের গর্ব। তিনি আছেন বিধায় এত বড় বড় প্রজেক্ট হচ্ছে। ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে তাকে যদি শতকোটি বাজেটের মুভিতে নেয়া হয় আমার মনে হয় উনি সেখানেও সফল হবেন। কারণ তার মধ্যে সেই ক্ষমতা আছে। তার সঙ্গে কাজ না করলে বিষয়গুলো অজানা থাকতো।
এলিনা অভিনীত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ‘মুজিব’। এই ছবিতে খালেদা জিয়ার চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। তবে এই চরিত্রে অভিনয় করতে শুরু থেকে তাকে অনেকে নিরুৎসাহিত করেছিলেন বলে জানান এই অভিনেত্রী।
এলিনা শাম্মী আরও বলেন, এফডিসিতে যখন এই ছবিতে খালেদা জিয়ার চরিত্রে কাস্ট হয়েছি ফেসবুক বা নিউজের মাধ্যমে জানাই অনেকে নিরুৎসাহিত করে বলেছিল, কেন এই চরিত্র করছো? এটা তোমার জন্য অনেক রিস্ক হয়ে যাবে। কিন্তু আমি বলেছিলাম, এটা কেমন কথা? এত বড় চলচ্চিত্রে একজন আর্টিস্ট হিসেবে আমাকে যে চরিত্র দেবে সেটাতে আমি কাজ করবো। অন্যান্য চরিত্রের মতো এটাও এক চরিত্র।
তিনি বলেন, বিজ্ঞজনরা আমাকে যে চরিত্রে যোগ্য মনে করেছিলেন সেখানেই কাস্ট করেছেন। এখানে অস্বীকার করার কিছু নেই খালেদা জিয়া ভেরি গুড লুকিং উইমেন। সেই চরিত্রে আমাকে সুযোগ দেয়া হয়েছে এতে আমি নিজেকে লাকি মনে করছি। এটা বঙ্গবন্ধুর বায়োপিক বলে কথা, এজন্য যেকোনো চরিত্রের সঙ্গে আমি যুক্ত থাকতে চেয়েছি। আমি মনে করি, এই চলচ্চিত্রটি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। কারণ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আগেও চলচ্চিত্র হয়েছে আগামীতে হবে। কিন্তু এবারের মতো বিশাল ক্যানভাসে আড়াই ঘণ্টায় তুলে আনা মুন্সিয়ানা ছিল।
‘মুজিব একটি জাতির রূপকার’ মুক্তির পর প্রিমিয়ারে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি এ চলচ্চিত্রের শিল্পীদের গণভবনে আমন্ত্রণ জানান। সেখানে ছিলেন এলিনা শাম্মী বলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী গণভবনে আমন্ত্রণ জানিয়ে ক্রেস্ট দিয়েছিলেন। আমাকে ক্রেস্ট দেয়ার সময় উনি বলেছিলেন, খালেদা জিয়াকেও আমার ক্রেস্ট দিতে হচ্ছে! এটা খুবই মজার বিষয় ছিল। উনি আসলে এত আন্তরিক যেটায় আপ্লুত হতে পড়েছিলাম।
মুজিব চলচ্চিত্রে খালেদা জিয়ার চরিত্রের ব্যাপ্তী প্রসঙ্গে এলিনা শাম্মী বলেন, যতটুকু শুটিং হয়েছে স্ক্রিনে ততটুকুই আছে। অনেকেই ভেবেছিল খালেদা জিয়াকে নেগেটিভভাবে উপস্থাপন করা হবে। বিভিন্ন ইন্টারভিউ এবং প্র্যাক্টিকাল লাইফে আমাকে এ বিষয়ে বিভিন্নভাবে জিজ্ঞেস করা হয়েছে। কিন্তু আমি সবসময় বলেছি ৭১ পরবর্তীতে যা ঘটেছিল তাই দেখানো হয়েছে। তখন তিনি মেজরের স্ত্রী ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক ছিল।
“বর্তমানে খালেদা বৃদ্ধ হয়েছেন। এখনকার খালেদা জিয়ার সঙ্গে মিলিয়ে আমি চরিত্র ভাবিনি। তৎকালীন তিনি যেমন ছিলেন সেটা করেছি। তখনকার তার ছবি এবং কিছু ভিডিও দেখে নিজেকে প্রস্তুত করেছিলাম। স্ক্রিনে উপস্থিতি যাই হোক না কেন খালেদার চরিত্রটি ছিল ওজনের। সেতু ভাই জিয়াউর রহমানের চরিত্র করেছিল। তারটিও ছিল ওজনদার। মুক্তির আগে থেকে দর্শকের এই চরিত্র নিয়ে প্রতিক্রিয়া কি দেখার অপেক্ষায় ছিলাম। আসলে আমরা আর্টিস্ট। যে সরকারই থাকুক না কেন একজন শিল্পী হিসেবে রুটি রুজি তো আমাদের অভিনয়। আমি মনে করি দর্শকরাও এটা বোঝেন।”