স্টাফ রিপোর্টার: চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের পাঠানপাড়ায় ভাড়াবাড়িতে গৃহবধূ সম্পা খাতুনকে (২৫) খুনের ঘটনার তার স্বামী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে (৪২) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গ্রেপ্তারের পর মামুন র্যাবকে জানিয়েছেন, বারবার অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তেন তার স্ত্রী। সংশোধন করার চেষ্টা করলেও পারেন নি। শাসন করায় উল্টো তাকেই নির্যাতন করা হচ্ছিল। তাই শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন স্ত্রীকে।
বুধবার রাত ১০টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর কাশিয়াডাঙ্গা এলাকা থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৫এর রাজশাহী সিপিএসসির একটি দল। গ্রেপ্তার মামুনের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার উজানপাড়া রেলগেট এলাকায়। পেশায় তিনি একজন রডমিস্ত্রি। র্যাব-৫এর রাজশাহীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মনিম ফেরদৌস এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামুনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, প্রায় ১৪ বছর আগে সম্পার সঙ্গে পারিবারিক ভাবে বিয়ে হয় সম্পার। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে। মামুন কুমিল্লায় থাকেন। মাঝে মাঝে বাড়ি আসেন। বাড়ি এসে মামুন জানতে পারেন, মামুনের স্ত্রী তার মেজো ভাই হারুন অর রশিদ কমল সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত। শুধু তাই নয়,তার মেজো ভাই হারুন অর রশিদ কমলতার স্ত্রীসহ আরো কয়েকজন নারীদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করান। এরপর মামুনতার স্ত্রীকে কঠোর ভাবে সতর্ক করেন।
কিছুদিন পর বাড়ি এসে স্ত্রীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে দেখতে পান,বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে তার স্ত্রীর অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও রয়েছে। মামুন তার স্ত্রীকে সংশোধনের জন্য তার নিজ কর্মস্থল কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকা শুরু করেন। সেখানে থাকা অবস্থায় কিছুদিন পরে মামুন জানতে পারেন,তার স্ত্রী এখানেও মামুনের সহকর্মীদের সঙ্গে অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। আত্মসম্মান রক্ষায় মামুন তার স্ত্রীকে আবারো নিজ এলাকায় রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে নিয়ে আসেন। কিন্তু এলাকায় আসার পরে তার স্ত্রী আবারো মামুনের মেজো ভাইয়ের সাথে অনৈতিক কাজে লিপ্ত হন। ফলে মামুন বাধ্য হয়ে বাসা পরিবর্তন করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের পাঠানপাড়ায় তার শ^শুর বাড়ির কাছে একটি ভাড়া বাসায় নিয়ে রাখেন। এরপর মামুন আবারও তার কাজের জন্য কুমিল্লায় চলে যান। কিছুদিন পরে মামুন জানতে পারেন,তার স্ত্রী চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভাড়াবাসার এলাকায় আবারো অনৈতিক কাজ শুরু করেছেন।
এই ঘটনা জানার পরে মামুন গত১৭ ডিসেম্বর কুমিল্লা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে আসেন। পরদিন তার স্ত্রীর মোবাইল ফোনে আবারও অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও দেখতে পান। এ সময় মামুন কৌশলে মোবাইলটিতে থাকা মেমোরি কার্ডটি নিয়ে নেন। তার স্ত্রী যখন জানতে পারেন যে, তার অনৈতিক শারীরিক সম্পর্কের ভিডিও রাখার মেমোরি কার্ডটি তার স্বামীর কাছে তখন মামুনের স্ত্রী মেমোরি কার্ডটি উদ্ধারের জন্য প্রথমে মামুনের মেজোভাই হারুন অর রশিদ কমলকে ফোন করেন। পরে কমলের নির্দেশনা মোতাবেক মামুনের স্ত্রী সম্পা তার পরিবারের লোকজনদের সহায়তায় মামুনকে নির্যাতন শুরু করেন এবং সারারাত একটি ঘরে আটকে রাখেন।
পরে ১৯ ডিসেম্বর সকালে সম্পা মামুনকে আটকে রাখা ঘরে যান। এ সময় মামুনের স্ত্রী তার ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করেন। ঘনিষ্ঠতার একপর্যায়ে মামুন তার স্ত্রীকে গলাটিপে হত্যা করে পালিয়ে যান। পরে পুলিশ সম্পার লাশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সম্পার বড় ভাইয়ের স্ত্রী হালিমা শিল্পী বাদী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় ১৯ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০ টায় একটি হত্যা মামলা করেন।
র্যাব অধিনায়ক জানান, ঘটনার পর থেকে র্যাব ছায়া তদন্ত করছিল। পরে আসামি মামুনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে মামুনকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।