স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচনে পরাজিত হয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন। তিনি নির্বাচনকে বিতর্কিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলন করে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা এ অভিযোগ করেছেন।
ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী-২ (সদর) আসনে ২০০৮ সাল থেকে পর পর তিনবার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে এমপি হন। এবারও তিনি নৌকায় উঠেছিলেন। তবে বড় ব্যবধানে পরাজিত হয়েছেন কাঁচি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশার কাছে। এই নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে ফজলে হোসেন বাদশা নানা বক্তব্য দিয়ে আসছেন। দুষছেন সিটি করপোরেশনকে। ভোটের পর সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগও করেছেন।
এর প্রতিবাদে নগরীর কাদিরগঞ্জের একটি কনভেনশন হলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে কাঁচি প্রতীকের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। সংবাদ সম্মেলনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামালের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আসলাম সরকার। এ সময় সদ্য নির্বাচিত এমপি শফিকুর রহমান বাদশাসহ অন্য আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে আসলাম সরকার বলেন, ‘নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হওয়ার পর থেকে পরাজিত প্রার্থী ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচনকে বির্তকিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করতে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীদের সুরে সুর মিলিয়ে কথা বলছেন। ফজলে হোসেন বাদশা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে লিখিত অভিযোগ করে এবং গণমাধ্যমে বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন, “নির্বাচনের দিনে ভোটারদের ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদান করা হয়েছে।” যা উদ্দেশ্যমূলক, ভিত্তিহীন ও সম্পূর্ণ অসত্য। তিনি আওয়ামী লীগ কর্মীদের তার নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার জন্য রাজশাহীর গণমানুষের নেতা সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে দোষারোপ করেছেন, যা অনাকাঙ্খিত।’
তিনি বলেন, ‘গত ২৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রাজশাহী ১৪ দলের সভায় ফজলে হোসেন বাদশার উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন প্রকাশ্যে তাকে সমর্থন দেন। সভায় এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, “আমি নৌকার পক্ষে। আমি ফজলে হোসেন বাদশা ভাইয়ের পক্ষে।” অথচ রাজশাহীতে ১৪ দলের জোটভুক্ত জাসদের আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী দলীয় প্রতীক মশাল নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় রাজশাহী ১৪ দল ফজলে হোসেন বাদশাকে সমর্থন দিতে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ে। জোটের ওয়াকার্স পার্টি ব্যতিত অপর শরীক দল ফজলে হোসেন বাদশাকে সমর্থন দিতে অপরাগতা প্রকাশ করে। ফলে ওই সভায় কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তি হিসেবে তিনি পরাজিত হন। আর এখন দায় চাপাচ্ছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটি অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে ২৪ হাজার ভোটের বিপুল ব্যবধানে ফজলে হোসেন বাদশা পরাজিত হন। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর বিগত ১৫ বছরের নিজের কর্মকাণ্ড বিচার-বিশ্লেষণ না করে মনগড়া অভিযোগ তুলে তিনি রাজশাহীবাসীকে হেয় করেছেন। ফজলে হোসেন বাদশা তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে মানুষের সাংবিধানিক অধিকারকে ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করেছেন। আমরা তার এমন কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
নগর আ’লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, ‘নির্বাচনে পরাজিত হয়ে ফজলে হোসেন বাদশা রাজশাহী মহানগরীর জনগণের ভোটে নির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করতে এবং চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্থ করতে সর্বোপরি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে তিনিসহ তার লোকজন যে হীন অপচেষ্টা চালাচ্ছেন আমরা তার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই।
আমরা আশা করি তিনি অবিলম্বে তার অসত্য, ভিত্তিহীন, উদ্দেশ্য প্রণোদিত, মনগড়া বক্তব্য প্রত্যাহার করবেন। আমরা আশা করি তার শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং তিনি দোষারোপের রাজনীতি পরিহার করে জনমুখী রাজনীতির প্রতি মনোযোগী হবেন।’
এই সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলন আমি দেখেছি। এ বিষয়ে আমার দলের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেবেন। আমি কথা বলব না।’