৩ হাজার আপত্তিকর ভিডিও : ফেঁসে যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নাতি

৩ হাজার আপত্তিকর ভিডিও : ফেঁসে যাচ্ছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নাতি

অনলাইন ডেস্ক : প্রাজ্জ্বল রেভান্না দক্ষিণ ভারতের একজন তরুণ রাজনীতিবিদ এবং দেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবেগৌড়ার নাতি। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তিনি বিভিন্ন নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্কের প্রায় হাজার তিনেক ভিডিও তৈরি করেছেন – এমন একটি অভিযোগকে ঘিরে এখন কর্নাটকসহ গোটা দেশের রাজনীতিতে হইচই পড়ে গেছে!

৩৩ বছর বয়সী এই নেতা কর্নাটকের হাসান আসন থেকে জিতে ২০১৯ সালে প্রথমবার এমপি হয়েছিলেন, এবারেও তিনি সেই একই আসন থেকে লড়ছেন – তার দল জনতা দল (সেকুলার)-কে এবার সমর্থন করেছে বিজেপিও।

ভারতে লোকসভার নির্বাচনের দ্বিতীয় দফায় গত ২৬ এপ্রিল এই হাসান আসনে ভোটগ্রহণ নির্বিঘ্নেই সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু তারপর দিন থেকেই হাসানসহ গোটা রাজ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে এমন কিছু ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা জাতীয় রাজনীতিতেও তুমুল আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।

সেগুলোতে এমন একজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখা গেছে, যাকে অবিকল প্রাজ্জ্বল রেভান্নার মতো দেখতে লাগছিল। ওই দিনই একজন নারী কর্নাটকের একটি পুলিশ থানায় অভিযোগ দায়ের করে বলেন, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এমপি প্রাজ্জল রেভান্নার হাতে তিনি অসংখ্যবার যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

রেভান্না তার মেয়েকেও ‘ভিডিও কল’ করে ‘অত্যন্ত অশ্লীল কথাবার্তা’ বলেছেন এবং তার কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় চরম দুর্ব্যবহার করেছেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।

আরও পড়ুনঃ  গাজায় ‘এক গ্রাম খাবার বা ত্রাণও’ ঢুকতে দেওয়া উচিত নয় : ইসরায়েল

এরই মধ্যে কর্নাটক মহিলা কমিশনের চেয়ারপারসন নাগালক্ষ্মী চৌধুরী জানান, তাদের হাতে এমন একটি ‘পেন ড্রাইভ’ এসেছে যাতে বেশ কয়েকশো ‘এক্সপ্লিসিট’ বা খুল্লমখুল্লা যৌন ভিডিও আছে – এবং আপাতদৃষ্টিতে তার অনেকগুলোতেই প্রাজ্জ্বল রেভান্নাকে দেখা যাচ্ছে।

এই সব বক্তব্যের ভিত্তিতে কর্নাটকের কংগ্রেস সরকার প্রাজ্জ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগের তদন্ত করতে একটি ‘স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম’ বা ‘সিট’-ও গঠন করেছে।

প্রাজ্জ্বল রেভান্নার দল জনতা দল (সেকুলার) প্রথমে যাবতীয় অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও এই বিতর্ক শুরু হওয়ার তিন দিনের মাথায় মঙ্গলবার তারা রেভান্নাকে দল থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে।

অন্যদিকে ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, প্রাজ্জ্বল রেভান্নার এই সব ভিডিওর কথা বেশ কয়েক মাস আগে জানা থাকা সত্ত্বেও তারা কর্নাটকে জনতা দল (সেকুলার)-এর সঙ্গে জোট করার ও হাসান কেন্দ্রে রেভান্নাকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও শীর্ষ বিজেপি নেতা অমিত শাহ অবশ্য এদিন পাল্টা দাবি করেছেন, ‘ভিডিওগুলোর কথা আগে জানা থাকলে কর্নাটকের শাসক দল কংগ্রেসেরই অনেক আগে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল।’

প্রাজ্জ্বল রাভান্না নিজে অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করে একটি বিবৃতি দিয়েছেন এবং ভিডিওগুলোকে ‘জাল’ বলে দাবি করে তার আইনজীবীর পক্ষ থেকে পুলিশে একটি পাল্টা অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে।

আরও পড়ুনঃ  ট্রাম্পের আদেশে নাসার ভারতীয় বংশোদ্ভূত নারী কর্মকর্তাকে বরখাস্ত

কিন্তু তিনি নিজে এই মুহূর্তে দেশে নেই – ২৬ এপ্রিল তার কেন্দ্রে ভোট সম্পন্ন হয়ে যাওয়ার পরদিন (২৭ এপ্রিল) সকালেই প্রাজ্জ্বল রেভান্না জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টের পথে রওনা হয়ে যান। ঠিক ওই দিনই আবার সেই ভিডিওগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে।

তার আগে থেকেই জার্মানি যাওয়ার কথা ছিল, না কি এই ভিডিওগুলো ফাঁস হওয়ার সঙ্গে প্রাজ্জ্বল রেভান্নার দেশ ছাড়ার কোনও সম্পর্ক আছে তা অবশ্য স্পষ্ট নয়!

কী আছে ভিডিওগুলোতে?
এই ভিডিওগুলোর ব্যাপারে যিনি প্রথম মুখ খোলেন, তাৎপর্যপূর্ণভাবে তিনি আবার হাসান জেলারই প্রভাবশালী বিজেপি নেতা জি দেবারাজে গৌড়া। গত বছর রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনেও তিনি হোলেনারাসিপুরা আসন থেকে প্রাজ্জ্বল রেভান্নার বাবা এইচ ডি রেভান্নার বিরুদ্ধে বিজেপির টিকিটে লড়েছিলেন, কিন্তু জিততে পারেননি।

সেই দেবারাজে গৌড়া জানিয়েছেন, মাসকয়েক আগে প্রাজ্জ্বল রেভান্নার সাবেক ড্রাইভার কার্তিক গৌড়া তার কাছে একটি পেন ড্রাইভ নিয়ে আসেন – যাতে এই ধরনের মোট ২৯৭৬টি ভিডিও ছিল!

বরখাস্ত হওয়া ড্রাইভার কার্তিক গৌড়া সে সময় দেবেগৌড়া পরিবারের বিরুদ্ধে একটি মামলা লড়ছিলেন, সেই সুবাদেই তিনি স্থানীয় বিজেপি নেতার সাহায্য পেতে তার হাতে ওই পেন ড্রাইভটি তুলে দেন।

যারা এগুলো পরে সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখেছেন তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন এই ভিডিওগুলোর প্রায় সবই অত্যন্ত ‘বিকৃত যৌনতার’ বা ‘যৌন নির্যাতনে’র এবং দিনের পর দিন ধরে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে তোলা বলে ধারণা করা যায়।

আরও পড়ুনঃ  ভিসা জালিয়াতি : সৌদিতে আটক ৫ শতাধিক মিসরীয় হজযাত্রী

ভিডিওর মূল চরিত্রটি যদি প্রাজ্জ্বল রেভান্না হন, তাহলে তিনি নিজেই সেগুলোর রেকর্ডিং করেছেন – দেখে সেরকমটাই মনে হয়েছে। রেকর্ডেড ভিডিও দেখিয়ে ওই নারীদের ব্ল্যাকমেইল করে লাগাতার যৌন শোষণ করা যাবে, সম্ভবত এটাই ছিল উদ্দেশ্য।

কয়েকটি ভিডিওতে ওই ব্যক্তির সঙ্গীসাথীদেরও দেখা গেছে। নির্যাতিতা নারীদের মধ্যে এমন অনেকে ছিলেন, যাদের গৃহ পরিচারিকা, রাঁধুনি বা বাড়ির কর্মী হিসেবে পরিচয় দেওয়া হয়েছে। এই ভিডিওগুলো যে ‘ডক্টরড’ বা জাল – প্রাজ্জ্বল রেভান্নার বাবা ও কর্নাটকের প্রবীণ রাজনীতিবিদ এইচডি রেভান্নাও কিন্তু সেরকম দাবি করেননি।

বরং ভিডিওগুলো যে সত্যিকারের, প্রকারান্তরে তা মেনে নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘এগুলো মোটেও নতুন কিছু নয়, সব চার-পাঁচ বছরের পুরনো!’

কর্নাটকে ভোটের সময় জনতা দল (সেকুলার)-কে অপদস্থ করার চেষ্টায় ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে’র অংশ হিসেবেই এগুলো এখন ফাঁস করা হয়েছে বলে এইচডি রেভান্না দাবি করেন।

প্রসঙ্গত, কর্নাটক পুলিশের কাছে যে নারী প্রাজ্জ্বল রেভান্নার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন তিনি কিন্তু এফআইআরে ৬৬ বছর বয়সী এইচডি রেভান্নার নামও উল্লেখ করেছেন।

ওই নারীর অভিযোগপত্রে লেখা হয়েছে, এইচডি রেভান্নার স্ত্রী একদিন যখন বাড়িতে ছিলেন না, তখন রেভান্নার হাতেও তিনি যৌন লাঞ্ছনার শিকার হয়েছিলেন। বিবিসি বাংলা

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *