অভাবের তাড়নায় বাচ্চা বেচলেন বাবা, উদ্ধার করল পুলিশ

অভাবের তাড়নায় বাচ্চা বেচলেন বাবা, উদ্ধার করল পুলিশ

স্টাফ রিপোর্টার: অভাবের তাড়নায় রাজশাহীর এক ব্যক্তি তাঁর দুই দিন বয়সী মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। রোববার অভিযোগ পেয়ে রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানা-পুলিশ বাচ্চাটিকে উদ্ধার করেছে। বাচ্চা কেনাবেচায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ তিনজনকে আটকও করেছে।

বাচ্চাটির বাবার নাম মো. রহিদুল (৪০)। রাজশাহী নগরীর সিলিন্দা এলাকায় তার বাড়ি। পেশায় তিনি একজন দিনমজুর। গত ১২ নভেম্বর তিনি তাঁর মেয়েকে ২৪ হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। পরে আরেকদফা বাচ্চাটি বিক্রি হয়েছিল ৩০ হাজার টাকায়।

পুলিশ জানিয়েছে, রহিদুলের আরও এক ছেলে এবং এক মেয়ে আছে। তাদের বয়স ১০-১২ বছর। গত ১০ নভেম্বর রহিদুলের স্ত্রী জান্নাতুল খাতুন নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার কেয়ার নার্সিং হোম নামের একটি বেসরকারী ক্লিনিকে আরও একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন। ১২ নভেম্বর রহিদুল নার্সিং হোমে তাঁর স্ত্রীকে জানান, উন্নত চিকিৎসার জন্য বাচ্চাটিকে শিশু হাসপাতালে নিতে হবে। এ কথা বলে তিনি বাচ্চা নিয়ে গিয়ে তরিকুল ইসলাম নামের এক দালালের মাধ্যমে গোলাম শাহানুর নামের এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন।

আরও পড়ুনঃ  নগরীতে বিশেষ অভিযানে ৪ জনসহ অন্যান্য অভিযোগে গ্রেপ্তার ২১

শাহানুর তাঁর বোনের জন্য বাচ্চাটি কিনেছিলেন। কিন্তু দত্তক দেওয়ার মতো কোন কাগজপত্র করে না দেওয়ায় দুই দিন পর তিনি বাচ্চাটি আবার তরিকুলকে ফেরত দেন। পরে ৩০ হাজার টাকায় তরিকুল আবার বিউটি খাতুন নামের এক নিঃসন্তান নারীর কাছে বাচ্চাটি বিক্রি করেন। বিউটি খাতুনের বাড়ি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার কাঁকনহাটে। রোববার বিকালে কাঁকনহাট গিয়ে বিউটির কাছ থেকেই বাচ্চাটি উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগে সকালে বাচ্চার বাবা রহিদুল এবং দালাল তরিকুলকে আটক করা হয়। থানায় আটক অবস্থায় রহিদুল জানিয়েছেন, অভাবের তাড়নায় তিনি বাচ্চাটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুনঃ  মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে ড্রোন শো, ফুটে উঠল জুলাই অভ্যুত্থানের চিত্র

বিকালে বাচ্চাটি উদ্ধার করে এনে মা জান্নাতুল খাতুনের কাছে দেওয়া হয়। তিনি তখন কাঁদতে থাকেন। মুখে মুখে চুমু খান। বুকের দুধ খাওয়ান। তিনি জানান, তাকে মিথ্যা কথা বলে তাঁর স্বামী বাচ্চা বিক্রি করে দিয়েছিলেন। বুকের ধন ফিরে পেয়ে তিনি এখন খুশি।

আরও পড়ুনঃ  রাতের মধ্যে ঢাকাসহ ৭ জেলায় ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

রাজপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) কাজল নন্দী জানান, নার্সিং হোম থেকে খালি হাতে বাড়ি ফেরার পর জান্নাতুলের কান্না থামছিল না। একজন প্রতিবেশী তখন বিষয়টি থানায় জানান। এরপরই রহিদুলকে থানায় তুলে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাচ্চা বিক্রির ঘটনাটি নিশ্চিত হওয়া যায়। এ ঘটনায় বাবা রহিদুল, দালাল তরিকুল এবং ক্রেতা বিউটিকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা হবে। বাচ্চার মা মামলার বাদী হবেন। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে বাচ্চাটি মায়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান তিনি।

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *