চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে আজ বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকালে চর আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের ভুক্তভোগী অসহায় নাগরিক আয়োজিত এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভে সহস্রাধিক মানুষ অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা অভিযোগ করেন, দীর্ঘদিন ধরে জেলার কয়েকজন প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী সদর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পদ্মা নদী থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু তুলছেন।
এই বালু ব্যবসায়ীরা স্থানীয় প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এলাকায় পদ্মা নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তুলে বিক্রি করছেন।
মানববন্ধনে ভুক্তভোগী গ্রামবাসীর পক্ষে বক্তব্য দেন, মোঃ নবির হোসেন সহ সাবেক সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোখলেসুর রহমান, সাবেক ইউপি সদস্য আলম, মোঃ আব্দুল জলিল, মোঃ নুরুল ইসলাম, মোঃ ফয়সাল আহামেদ, মোঃ কাওসার আলী, আব্দুল আলিম প্রমূখ।
বক্তব্যে বলেন, ‘নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন করায় নদী ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর ও ফসলি জমি। প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের বাধা দিতে গেলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়।
তারা আরও বলেন, গত ৫ আগস্ট দেশে ছাত্রজনতার বিপ্লবের মাধ্যমে স্বৈরাচার-ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের দীর্ঘ ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটে। শেখ হাসিনা ও তার পেটোয়া বাহিনী ক্ষমতা ও অর্থের লোভে দেশকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ক্ষমতার অপব্যবহার ও পেশি শক্তির বলে সৈরাচার আওয়ামীলীগ সরকার দেশের অন্যান্য জায়গার মতো চাঁপাইনবাবগঞ্জেও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারই অংশ হিসেবে তারা পদ্মা নদীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করেছে। এতে তীর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে চর-আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের পদ্মা নদীর তীরবর্তী মানুষ হুমকির মধ্যে পড়ে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার রানীনগর, হাকিমপুর ও দুর্লভপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে বিভিন্ন সময় অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এতে ভাঙছে পদ্মা নদীর তীর, বিলীন হচ্ছে জনপদ, রক্ষা পায়নি তীর রক্ষা বাঁধও। ইজারা সীমার বাহিরে কয়েক বছর থেকে ক্ষমতার দাপটে শাহজাহানপুর ইউনিয়নের মোহনা পার্ক সংলগ্ন নদীর তীর ঘেষে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছিলো।
এবিষয়ে পার্শ্ববর্তী হাকিমপুর বিওপি ক্যাম্পে অভিযোগ জানালেও তারা সহযোগিতা না করে উল্টো আমাদেরই হুমকি দেন। কিন্তু সম্প্রতি ২০২৪ এ ছাত্রজনতার বিপ্লবের পর মূল মালিক পলাতক। বর্তমানে শাহজাহানপুর ইউনিয়নের কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি প্রশাসনের আইন অমান্য ও স্থানীয় সাধারণ জনগণের বাধা উপেক্ষা করে প্রভাব খাটিয়ে আওয়ামীলীগ নেতা, সাবেক চেয়ারম্যান ও অন্যান্য নেতাদের যোগসাজসে অবৈধভাবে নদীর কোল ঘেষে বালু উত্তোলন করছে।
এরই মধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে চর-আলাতুলি, দেবিনগর ও শাহজাহানপুর ইউনিয়নের কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি, স্থাপনা, বসতবাড়ী ও প্রতিষ্ঠান। এখনও হুমকির মধ্যে রয়েছে কয়েকশ বাড়িঘর। এছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্যতম বিনোদনকেন্দ্র মোহনা পার্কও চরম হুমকির মধ্যে রয়েছে।
স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট বালুমহাল ইজারা গ্রহণকারী মূল মালিক পলাতক হওয়ায় শাহজাহানপুর ইউনিয়নের প্রভাশালী কয়েকটি গ্রুপ নতুন করে দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আবার বালু উত্তোলন শুরু করেছে। স্থানীয় জনগন বাধা দিলে তারা প্রাণ নাশের হুমকি দিয়েছে। শাহজাহানপুর ইউনিয়নের নরেন্দ্রপুর, হরিশপুর ও হুররো পাড়ায় ভুক্তভোগী দুর্লভপুর-রানীনগর গ্রামের বাসিন্দাদের কয়েকবার আটকে রেখে হুমকি দিয়েছে এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখেছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানায় অভিযোগ করলে এবং গ্রামবাসীর তীব্র বাধায় কয়েকদিন বালু উত্তোলন বন্ধ থাকলেও পরবর্তীতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী থেকে সন্ত্রাসী এনে আবার অবৈধভাবে বালু উত্তোলন শুরু করে। গত ১২ অক্টোবর অস্ত্রসহ মোহনা পার্কে সন্ত্রাসীরা আসলে জনগণের বাধার মুখে পালাতে বাধ্য হয়। এখনও তারা বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছে এবং যেকোন মূল্যে অবৈধভাবে বালু তুলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।
নদী পাড়ের এসব গ্রামকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে পদ্মা থেকে অবৈধভাবে বালু তোলা বন্ধ করার দাবি জানান ভুক্তভোগী পদ্মা নদী ভাংগন কবলিত এলাকাবাসী।
বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ভাঙন ও ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে উল্লেখ করেন ভুক্তভোগীরা। এ বিষয়ে প্রশাসনকে কঠোর হওয়ার দাবি জানান তারা।