অনলাইন ডেস্ক : বাংলাদেশের গ্রামীণ সংস্কৃতির উৎসব-পার্বণের সঙ্গে গণমানুষের সংস্কৃতি হিসেবে জড়িয়ে আছে ঐতিহ্যবাহী যাত্রাপালা। তার প্রমাণ পাওয়া গেলে শুক্রবার রাতে। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী যাত্রা উৎসবের প্রথম দিন ছিল শুক্রবার (১ নভেম্বর)। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে হাজারো দর্শকের উপস্থিতিতে মঞ্চস্থ হয় যাত্রাপালা।
বিপ্লব-উত্তর সময়ে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে প্রাণচাঞ্চল্যতা ফিরিয়ে আনতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় শুরু হয়েছে ‘যাত্রা উৎসব ২০২৪’। টানা সাত দিনের এই আয়োজন চলবে আগামী সাত নভেম্বর পর্যন্ত।
অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্বের শুরুতে বক্তব্য প্রদান করেন নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক ফয়েজ জহির। উপস্থিত বিপুল দর্শককে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সবার সহযোগিতায় এই উৎসব আমরা সারা দেশে যেন ছড়িয়ে দিতে পারি। যাত্রাশিল্পসহ শিল্পকলার সব মাধ্যমকে প্রবাহিতভাবে বেগবান করার সময় এসেছে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদান করেন ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী ইসরাফিল মজুমদার। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশিষ্ট যাত্রাশিল্পী অনিমা দে।এ ছাড়া বক্তব্য প্রদান করেন যাত্রাশিল্পী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ মান্নান।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি মহাপরিচালক, নাট্য নির্দেশক ও শিক্ষক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। সভাপতির বক্তব্যে শুরুতেই জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত ও আহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে মহাপরিচালক বলেন, ‘বিদ্যুৎ চমকের মতো দ্রুতবেগে ঘটে যাওয়া এক নির্ভয় অভ্যুত্থানের অগ্নিগর্ভ ছিঁড়ে জন্ম নিয়েছে নতুন এই বাংলাদেশ।’
সংস্কৃতি খাতে বাজেট বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘জাতীয় বাজেট যেখানে প্রায় ৮ লাখ কোটি টাকা সেখানে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ কেবল ৭৭৮ কোটি টাকা।’ সংস্কৃতি খাতে এত স্বল্প বাজেট নিয়ে সরকারের কাছে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
আলোচনা পর্বের পর শুর হয় প্রথম দিনের যাত্রাপালা ‘নিহত গোলাপ’-এর পরিবেশনা। যাত্রাদল সুরুভী অপেরার পালায় নির্দেশনা দিয়েছেন কবির খান, পালাকার ছিলেন আগন্তক।
আগামী ছয় দিনের যাত্রাপালা
২ নভেম্বর, শনিবার, দলের নাম- নিউ শামীম নাট্য সংস্থা, পালাকার- প্রসাদ কৃষ্ণ ভট্টচার্য, পালার নাম- আনার কলি, পালা নির্দেশক- শামীম খন্দকার।
৩ নভেম্বর, রোববার, দলের নাম- বঙ্গবাণী অপেরা, পালাকার- রঞ্জন দেবনাথ, পালার নাম- মেঘে ঢাকা তারা, পালা নির্দেশক- মানস কুমার।
৪ নভেম্বর, সোমবার, দলের নাম- নর-নারায়ণ অপেরা, পালাকার-দেবন্দ্রনাথ, পালার নাম- লালন ফকির, পালা নির্দেশক- ব্রোজেন কুমার বিশ্বাস।
৫ নভেম্বর, মঙ্গলবার, দলের নাম- বন্ধু অপেরা, পালাকার- শামসুল হক, পালার নাম- আপন দুলাল, পালা নির্দেশক- মনির হোসেন।
৬ নভেম্বর, বুধবার, দলের নাম- শারমিন অপেরা, পালাকার-পুর্নেন্দু রায়, পালার নাম- ফুলন দেবী, পালা নির্দেশক- শেখ রফিকুল।
৭ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার, দলের নাম- যাত্রাবন্ধু অপেরা, পালাকার- শ্রী শচীননাথ সেন, পালার নাম- নবাব সিরাজউদ্দৌলা, পালা নির্দেশক- আবুল হাশেম।
‘যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও তবে তুমি বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে উৎসব চলবে ৭ নভেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত। এই উৎসবে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নিবন্ধিত ৭টি যাত্রা দল প্রতিদিন ১টি করে ‘ঐতিহাসিক ও সামাজিক’ ঘটনা অবলম্বনে নির্মিত যাত্রাপালা পরিবেশন করবে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত যাত্রাপালা পরিবেশিত হবে।-ইত্তেফাক