স্টাফ রিপোর্টার: র্যাবের হেফাজতে নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিন (৩৮) মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের কারণে মারা গেছেন। জেসমিনের মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। জেসমিনের মৃত্যুর পর পরিবার তাঁকে নির্যাতন করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ তুলেছিল, তা অসত্য বলে প্রতীয়মান হলো মরদেহের এই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে।
রোববার বিকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজের (রামেক) ফরেনসিক বিভাগ থেকে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে প্রতিবেদনে জেসমিনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে কী মতামত দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে তখন সাংবাদিকদের কিছু বলতে চাননি ময়নাতদন্ত বোর্ডের প্রধান রামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. কফিল উদ্দিন।
তবে সোমবার সকালে তিনি এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, কোনরকম নির্যাতন নয়, মস্তিস্কে রক্তক্ষরণের কারণে জেসমিনের মৃত্যু হয়েছে। এটি স্বাভাবিক মৃত্যু। জেসমিনের মৃত্যুর কারণ হিসেবে অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া যায়নি।
এই প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে কোন মন্তব্য করতে চাননি জেসমিনের মামা নওগাঁ পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর নজমুল হক মন্টু। তিনি এ বিষয়ে পরে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
র্যাব-৫ এর জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল গত ২২ মার্চ সকালে নওগাঁ থেকে জেসমিনকে আটক করে। স্থানীয় সরকারের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক মো. এনামুল হকের মৌখিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাঁকে নিয়েই র্যাব এ অভিযান চালায়। এনামুল হকের অভিযোগ, জেসমিন ও আল-আমিন নামের এক ব্যক্তি তাঁর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাচ্ছিলেন বিভিন্নজনকে। এভাবে তারা প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন।
আটকের পর ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জেসমিন মারা যান। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। র্যাবের বরাত দিয়ে রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহাম্মদ বলেছিলেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় পড়ে গিয়ে জেসমিন মাথায় আঘাত পান। আর চিকিৎসকদের বরাতে জানান, পড়ে যাওয়ার পর জেসমিনের মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হয়। এই কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনেও মৃত্যুর কারণ হিসেবে একই বিষয় উঠে এসেছে।
জেসমিনের মৃত্যুর পরদিন ২৫ মার্চ রামেকের মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়েছিল। র্যাব হেফাজতে মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধমে প্রকাশ হলে হাইকোর্ট সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তলব করেন। আগামী বুধবারের মধ্যে পুলিশ হাইকোর্টে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবে।
জেসমিনের মৃত্যুর কারণে র্যাবের কোন গাফিলতি আছে কি না তা তদন্ত করে দেখছে বাহিনীটি। এই ঘটনায় যুগ্ম সচিব এনামুল হকের ভূমিকা নিয়েও বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। মন্ত্রণালয় প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখবে।