অনলাইন ডেস্ক : ভারতই কি আপনার প্রিয় প্রতিপক্ষ? বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের আগে এমন এক প্রশ্ন শুনতে হয়েছিল ট্রাভিস হেডকে। ভারতকে দুই আইসিসি ট্রফি থেকে বঞ্চিত করার নায়ক ছিলেন এই অজি ব্যাটার। প্রশ্নটাও তাই স্বাভাবিকই ছিল তার জন্য। জবাবে অবশ্য ট্রাভিস হেড বলেছিলেন, ভারত তার প্রিয় প্রতিপক্ষ না।
কিন্তু বাস্তবতা হয়ত বলবে ভিন্ন এক কথা। ভারতকে পেয়ে অজি ব্যাটারের জ্বলে ওঠা একেবারেই নতুন কিছু না। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সবশেষ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে এই ট্রাভিস হেডই ছিলেন ম্যান অব দ্য ফাইনাল। ভারতকে কাঁদিয়েছিলেন তিনিই। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুর্দান্ত হেডের সামনে বরাবরই যেন অসহায় ভারতের বোলাররা।
তারই এক নমুনা দেখা গেল অ্যাডিলেডের ডে-নাইট টেস্টে। ভারতের আগ্রাসী বোলিংয়ের বিপক্ষে করেছিলেন প্রতিআক্রমণের ব্যাটিং। শুরুর দিকে কিছুটা এড়িয়েই গিয়েছিলেন জাসপ্রিত বুমরাহকে। ৬৩ বলে করেছিলেন ফিফটি। সেসময় বুমরাহকে খেলেছিলেন মোটে ৫ বল। ক্রিজে থিতু হতে তার এই পরিকল্পনা কাজেও লেগেছিল।
৬৩ বলে পঞ্চাশ করার পরেই খেলেছেন আগ্রাসী হয়ে। ১১১ বলে পেয়ে যান শতকের দেখা। দিবারাত্রির টেস্টে এটি তার তৃতীয় শতক। গোলাপি বলের ক্রিকেটে তারচেয়ে বেশি শতক নেই আর কারোরই। শতকের পর ট্রাভিস হেড যেন আরও আগ্রাসী। মোহাম্মদ সিরাজের বলে আউটের আগে ১৪১ বলে ১৪০ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেছেন এই ব্যাটার। আউটের পর অবশ্য সিরাজের সঙ্গে ছোটখাটো বাদানুবাদ হয়েছে হেডের।
গত বছরের জুনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে চেপে ধরেছিল ভারত। এরপর মিডল অর্ডারে নামা হেডের কাছেই শিরোপা হারায় ভারত। সেই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ১৭৪ বলে ১৬৩ রানের মহামূল্যবান এক ইনিংস খেলেন ট্রাভিস হেড। এই সেঞ্চুরির কারণে পাওয়া লিড নিয়েই শেষ পর্যন্ত ভারতকে ২০৯ রানে হারায় অজিরা।
টেস্টে ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেটের ইনিংস
১১৩.২০ – ডেভিড ওয়ার্নার, ভেন্যু- পার্থ, ২০১২
১০৮.৯২ – অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ভেন্যু – মুম্বাই, ২০০১
৯৯.২৯ – ট্রাভিস হেড, ভেন্যু – অ্যাডিলেড, ২০২৪
(কমপক্ষে ১০০ রান)
একই বছরের নভেম্বরে আবারও ভারতকে শিরোপাবঞ্চিত করেন হেড। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে ভারতের ছুঁড়ে দেয়া ২৪১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১২০ বলে ১৩৭ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন তিনি। দলের ৪১ রানে ৩ উইকেট পড়ার পরেও হেডের ইনিংসে ভারতকে হারায় অস্ট্রেলিয়া। ঘরে তোলে নিজেদের ৬ষ্ঠ বিশ্বকাপ।
ভারতের বিপক্ষে হেডের আজকের এই ইনিংসের আরেক দিক থেকে বেশ বলার মতোই। এশিয়ান এই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অস্ট্রেলিয়ার কোনো ব্যাটারের শতরান করা ইনিংসে সবচেয়ে আগ্রাসী ইনিংসগুলোর একটি ছিল ট্রাভিস হেডের ব্যাট থেকে। ২০১২ সালে পার্থে ডেভিড ওয়ার্নারের ১১৩.২০ এবং ২০০১ সালে অ্যাডাম গিলক্রিস্টের ১০৮ স্ট্রাইক রেটের পর হেডের আজকের (৯৯.২৯ স্ট্রাইকরেট) ছিল সবচেয়ে আগ্রাসী।
ভারতকে নিয়ে যা বললেন দুই ফাইনালের নায়ক হেড
শেষ পর্যন্ত ১৭ চার এবং ৪ ছক্কা হাঁকিয়ে বিদায় নেন হেড। তার আউটের পর অস্ট্রেলিয়া ইনিংসও খুব একটা লম্বা হয়নি। হেডের বিদায়ের পর ২৭ রান যোগ করতেই অলআউট অজিরা। ৩৩৭ রানে শেষ হয়েছে তাদের। তবে ততক্ষণে অস্ট্রেলিয়া ঠিকই পেয়ে গিয়েছে ১৫৭ রানের বড়সড় এক লিড।