অনলাইন ডেস্ক : ৩১ ডিসেম্বর বাংলাদেশ নারী ও পুরুষ ফুটবল দলের বিদেশি কোচের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। নতুন বছরের শুরু থেকেই তাই ফুটবলাঙ্গনের কৌতুহল সাবিনা-জামালদের কোচ কে হচ্ছেন। আজ বিকেলে বাফুফে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে পিটার বাটলার ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী ফুটবলারদের এবং হ্যাভিয়ের ক্যাবরেরা ৩১ এপ্রিল পর্যন্ত পুরুষ ফুটবল দলের দায়িত্বে থাকবেন।
গতকাল বাফুফের জরুরি কমিটির অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভাতেই মূলত দুই দলের কোচের চুক্তির নবায়নের বিষয়ে মূলত সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত হওয়ার পর দিনই আজ বাফুফের মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান এবং সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার এক সঙ্গে জানিয়েছেন, ‘দুই কোচের সঙ্গেই আমাদের চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে।’
দুই পক্ষের মধ্যে চুক্তি একটি সময় সাপেক্ষ বিষয়। আইনগত বিষয় ছাড়াও নানা দিক থাকে। সিদ্ধান্তের এক দিনের মধ্যেই চুক্তি হওয়ার অর্থ আগে থেকেই এই দুই কোচের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া। গতকালের সভাটি যেন শুধু অবহিত করার। যদিও বাফুফের গঠনতন্ত্রের ৩৩ এর ডি ধারায় রয়েছে, কার্যনির্বাহী কমিটি বিভিন্ন দলের কোচ এবং ট্যাকনিক্যাল স্টাফ নিয়োগ দেবে।
২০২২ সাল থেকে হ্যাভিয়ের ক্যাবরের বাংলাদেশের ফুটবল দলের কোচ হিসেবে কাজ করছেন। ২০২৩ সালে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে সেমিফাইনালে খেলা ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্য নেই এই স্পেনিশ কোচের। বাফুফে ক্যাবরেরার বিদ্যমান সম্মানীর চেয়ে আরো কমে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল। সম্মানী ও কিসের ভিত্তিতে হ্যাভিয়েরের ওপর বাফুফের আস্থা এ নিয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আমিরুল ইসলাম বাবু, ‘সকলের মতামতের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের সভাপতি দেশে ফিরলে এই বিষয়ে আপনাদের বিস্তারিত বলবেন।’
কোচের চুক্তি নবায়নের ক্ষেত্রে নির্বাহী সভা তো দূরের কথা জাতীয় দল কমিটির সভাই হয়নি। বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল জাতীয় দল কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়েছেন ৯ নভেম্বর। দুই মাস পেরিয়ে গেলেও জাতীয় দল কমিটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ হয়নি এখনো। জাতীয় দলের কোচ হ্যাভিয়েরকে নিয়োগের সিদ্ধান্ত মূলত সভাপতির এককভাবেই। জরুরি কমিটির সভায় জরুরি কমিটিতে নেই নির্বাহী সদস্য। দুই কোচের চুক্তি নবায়নে জরুরি কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হওয়ায় সদস্যগণ কোনো মতামত দেয়ারই সুযোগ না পাওয়ায় অনেকের মধ্যে রয়েছে আক্ষেপ।
হ্যাভিয়েরের মতই অবস্থা পিটারের। নারী ফুটবল কমিটি এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো সভা হয়নি। সেই কমিটির চেয়ারম্যান পিটারের ওপর আস্থাশীল তাই সভাপতিও বৃটিশ কোচের উপর আস্থা রাখতে চান। সিনিয়র নারী ফুটবলারদের সঙ্গে তার দূরত্ব এরপরও তার সঙ্গে বাফুফে দুই বছরের সঙ্গে চুক্তি করেছে।
১১ ডিসেম্বর বাফুফে নির্বাহী কমিটির সভায় ২৯ ডিএফএ কমিটি বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত হয়। আজ অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল টুর্নামেন্টে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয় ৬৪ জেলাই এতে অংশগ্রহণ করবে। অথচ এক মাস আগে ফেডারেশন থেকে বলা হয়েছি, অনেক জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনে কর্মকর্তারা নিখোজ, নিষ্ক্রিয়। তাই সেই সকল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের কমিটি বিলুপ্তি করা হয়েছে। ঐ সকল জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন কিভাবে খেলায় অংশগ্রহণ করছে এ নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েন অনূর্ধ্ব-১৫ ফুটবল লিগ কমিটির চেয়ারম্যান ও বাফুফে নির্বাহী সদস্য মঞ্জুরুল করিম। তিনি এই সম্পর্কে বলেন, ‘প্রতিটি জেলায় জেলা প্রশাসক রয়েছে। যে সকল ডিএফএতে সমস্যা রয়েছে সেখানে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে তত্ত¡বধায়ন হবে।’
জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি জেলা প্রশাসক। সরকারি হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হতেই বাফুফে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন করেছিল। সেখানে এখন আবার সরকারি সহায়তার মধ্যে কেন এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘তারুণ্যের উৎসব মূলত সরকারের কেন্দ্রীয় উদ্যোগ। আমরা বাফুফে এই উদ্যোগে শামিল হয়েছি। তাই এখানে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা নেয়াই যায়।’
ডিএফএ বিলুপ্তি ও টুর্নামেন্ট পরিচালনা নিয়ে কমিটির চেয়ারম্যান যখন নানা প্রশ্নের মুখে। তখন ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন তুষার সাহায্য করতে এসে উল্টো বড় প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন ফেডারেশনকে, ‘আমরা এখনো কোনো ডিএফএ বিলুপ্তি নিয়ে চিঠি দেইনি।’
১১ ডিসেম্বর সভা থেকে আজ পর্যন্ত ৩৫ দিন পেরিয়ে গেলেও বাফুফে কোনো ডিএফএ কমিটি বাতিল হয়েছে সেটা প্রকাশ করতে পারেনি। সেই সকল ডিএফএ অ্যাডহক কমিটি গঠন হয়নি। অথচ অন্য দিকে নির্বাহী কমিটির সভা ছাড়াই জরুরি সভা করে পরের দিন চুক্তি সম্পাদিত হয়। এক বাফুফেতে যেন দুই চিত্র!