অনলাইন ডেস্ক : মারধর, হত্যাচেষ্টা, ভাঙচুর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগে ঢাকার সাভারের বোট ক্লাবের পরিচালক নাসির উদ্দিন মাহমুদের করা মামলায় আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমণিসহ দুজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অপরজন হলেন জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিম। তিনি পরীমণির কস্টিউম ডিজাইনার।
আদালত দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। আজ রোববার ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনায়েদ পরোয়ানা জারির এই নির্দেশ দেন। পরীমণির আইনজীবী নীলাঞ্জনা রিফাত সুরভি বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আজ অভিযোগ গঠনের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু দুজনই আদালতে অনুপস্থিত থাকায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে তাঁদের অনুপস্থিতিতে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন।
পরীমণির আইনজীবী বলেন, পরীমণি অসুস্থ থাকার কারণে আদালতে হাজির হতে পারেননি। তাঁর জন্য সময়ের আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করেন এবং অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দেন।
গত বছরের ২৫ জুন দুজন আদালতে আত্মসমর্পণ করে এই মামলায় জামিন পান। এর আগে গত বছরের ১৮ এপ্রিল নাসিরকে মারধর করার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় পিবিআইয়ের দাখিল করা প্রতিবেদন গ্রহণ করে আদালত অভিযোগ আমলে নেন।
গত ১৮ মার্চ ঘটনার সত্যতা পেয়ে এই প্রতিবেদন দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা জেলার পরিদর্শক মো. মনির হোসেন। প্রতিবেদনে আসামি পরীমণি ও তাঁর কস্টিউম ডিজাইনার জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিমের বিরুদ্ধে বাদীকে মারধর ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
তবে অন্য আসামি ফাতেমা তুজ জান্নাত বনির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
২০২২ সালের ৬ জুলাই নাসির উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ১৮ জুলাই তদন্তের আদেশ দেন। মামলায় পরীমণি ছাড়াও তাঁর দুই সহযোগী ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি ও জুনায়েদ বোগদাদী জিমি ওরফে জিমকে আসামি করা হয়।
বাদী তাঁর মামলায় উল্লেখ করেন—পরীমণি ও তাঁর সহযোগীরা অ্যালকোহলসেবী এবং তাঁরা সুযোগ বুঝে বিভিন্ন নামীদামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন না। পরীমণি তাঁর পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করে হয়রানির ভয় দেখান।
২০২১ সালের ৯ জুন রাত ১২টার পর আসামিরা সাভারের বোট ক্লাবে ঢুকে দ্বিতীয় তলার ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে তাঁরা ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন। বাদী ও তাঁর সহযোগী শাহ শহিদুল আলম রাত ১টা ১৫ মিনিটে যখন ক্লাব ত্যাগ করছিলেন, তখন পরীমণি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদী নাসিরকে ডাক দেন এবং তাঁদের সঙ্গে কিছু সময় বসার অনুরোধ করেন। একপর্যায়ে পরীমণি অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে নাসিরকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেন এবং একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনা মূল্যে পার্সেল দেওয়ার জন্য বাদীকে চাপ দেন। বাদী এতে রাজি না হওয়ায় পরীমণি বাদীকে গালমন্দ করেন। বাদী এবং আসামিদের মধ্যে বাদানুবাদের একপর্যায়ে পরীমণি বাদীর দিকে একটি সারভিং গ্লাস ছুড়ে মারেন এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিও ছুড়ে মারেন। এতে নাসির মাথায় ও বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
বাদী মামলায় আরও উল্লেখ করেন—পরীমণি ও তাঁর সহযোগীরা তাঁকে মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন এবং ভাঙচুর করেছেন। এ ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরীমণি সাভার থানায় বাদীসহ দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা করেন।
উল্লেখ্য, একই দিনের ঘটনায় পরীমণি বাদী হয়ে নাসিরসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় শ্লীলতাহানির অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। বর্তমানে মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছে।