এম এ রশীদ, সিলেট : সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর যেন স্বর্ণ চোরাচালানীদের অন্যতম রুটে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে একের পর এক সোনার চালান জব্দের ঘটনায় দুবাই-সিলেট রুটটি ফের আলোচনায়।
২০২৩ সালে ৪৩ কেজি এবং ২০২৪ সালে ২৩ কেজি স্বর্ণের চালান আটক হয়েছে ওসমানীতে। আর গত সাত মাসে ৪টি ফ্লাইটে ধরা পড়েছে ৩৫ কেজি সোনার চালান। যার মূল্য অর্ধশত কোটি টাকা। ওই চারটি ফ্লাইটই এসেছিল দুবাই থেকে। সোনা পাচারের এসব ঘটনায় কয়েক চোরাচালানকারী ধরা পড়লেও, মূল হোতারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় চালানটি ধরা পড়ে গত বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি)।ওই দিন বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২৫২ ফ্লাইটে আসা দুই যাত্রীর লাগেজ থেকে ১৭ কেজি সোনা উদ্ধার করা হয়। চার্জার লাইট, ফ্যান ও থাই গ্লাসের লকের ভেতরে লুকিয়ে রাখা ১২০টি স্বর্ণের বার ও ৪টি পেস্টের আনুমানিক বাজার মূল্য ২১ কোটি টাকা।
এ ঘটনায় আটককৃতরা হলেন,মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার সৈয়দ আহমদ (২৪) এবং সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার আফতাব উদ্দিন (৩৬)। জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই) ও শুল্ক গোয়েন্দার সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে নজরদারি বাড়িয়ে তাদের লাগেজ তল্লাশি করে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ উদ্ধার করেন।
এর আগে ২৮ আগস্ট দুবাই থেকে আসা একই ফ্লাইটে (বিজি-২৫২) হোসাইন আহমদ (২০) নামের এক যাত্রীর লাগেজে বিশেষ কৌশলে লুকানো ছিল ১০৫টি স্বর্ণের বার ও স্বর্ণের ছোট ৪টি চাকতি।
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার তোয়াক্কুল বাজার এলাকার বাসিন্দা হোসাইন প্রথমে গ্রিন চ্যানেল পেরিয়ে পার্কিং এলাকায় চলে যান। তবে তার গতিবিধি সন্দেহজনক মনে হলে বিমানবন্দর নিরাপত্তা কর্মকর্তারা তাকে চ্যালেঞ্জ করেন এবং ব্যাগেজ তল্লাশি করেন।
জুস মেশিনের ভেতরে লুকিয়ে রাখা স্বর্ণের পরিমাণ ছিল ১৫ কেজি ৯১০ গ্রাম, যার বাজারমূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা।
এদিকে,দুবাই থেকে আসা ৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২৪৮ ফ্লাইটের ভেতরে ১১ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধার করা হয়। শুল্ক গোয়েন্দারা বিমানের সিটের নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় এগুলো খুঁজে পান।
জব্দকৃত স্বর্ণের ওজন ১ কেজি ২৮৩ গ্রাম এবং এর আনুমানিক বাজারমূল্য ১ কোটি ৩৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা। তবে এই ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।
এর মাত্র ২ দিন পর ৬ ডিসেম্বর দুবাই ফেরত একই ফ্লাইটে আবারও স্বর্ণের চালান ধরা পড়ে। সকাল ৯টা ২৫ মিনিটে অবতরণ করা ফ্লাইটের সিটের নিচে পলিথিনে মোড়ানো স্বর্ণের চুড়ি ও চেইন জব্দ করে কাস্টমস কর্মকর্তারা।
এই চালানে ছিল ১৮টি স্বর্ণের চুড়ি ও তিনটি স্বর্ণের চেইন, যার মোট ওজন ১ কেজি ১৬৬ গ্রাম। এর বাজারমূল্য প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। ধারণা করা হচ্ছে, চোরাচালানকারী যাত্রী কাস্টমস কর্মকর্তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে স্বর্ণ ফেলে রেখে পালিয়ে যান।
বারবার সোনার চালান ধরা পড়লেও,এই চক্রের মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, নজরদারি আরও বাড়ানো হয়েছে এবং প্রতিটি ফ্লাইটের যাত্রী ও তাদের ব্যাগেজ তল্লাশি জোরদার করা হচ্ছে।
গোয়েন্দারা মনে করছেন, স্বর্ণ চোরাচালানের এই রুটে একটি সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে। তাদের মূল পরিকল্পনাকারীদের চিহ্নিত করতে ইতোমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে।
তবে সচেতন মহলের প্রশ্ন,ওসমানী বিমানবন্দরে এত স্বর্ণ ধরা পড়ছে, তাহলে যেসব চালান ধরা পড়ছে না, তার পরিমাণ কত?
ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক মো. হাফিজ আহমদ বলেন, পাচার রোধে বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা সতর্ক রয়েছেন। তাদের এমন তৎপরতার কারণেই প্রায়শই সিলেটে স্বর্ণের বড় বড় চালান জব্দ হচ্ছে।