স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর গোদাগাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে হামলা চালানো হয়েছে। এলাকার ১৫ থেকে ২০ ব্যক্তি শনিবার বিকেলে এই হামলা চালান। এ সময় ৬০ থেকে ৭০টি চেয়ার ও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। এ ছাড়া কলেজের ছাত্রীদের পিঠামেলার স্টলেও হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। লুট করা হয়েছে পিঠাও।
কলেজ কর্তৃপক্ষ ও অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজন জানান, হামলাকারীরা চিৎকার করে ‘নামাজের সময় গানবাজনা করার অভিযোগ করছিলেন। তবে যখন হামলা চালানো হয়, তখন নামাজ চলছিল না বলে দাবি করেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। হামলার আগে জোহর ও আসরের সময় নামাজের জন্য দুই দফা অনুষ্ঠানের বিরতি দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ তসলিম উদ্দিন বলেন, শনিবার কলেজের ৩০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান ছিল। সকাল থেকে অনুষ্ঠান চলছিল। মহিলা কলেজ বলে অনুষ্ঠানে শিক্ষক ও আমন্ত্রিত অতিথিদের বাইরে কোনো পুরুষ ছিলেন না। প্রথম অধিবেশনের পরই আমন্ত্রিত অতিথিরা চলে যান। এরপর পিঠামেলা চলছিল।
তিনি বলেন, রাজশাহী শহর থেকে কয়েকজন নারী কণ্ঠশিল্পী আনা হয়েছিল। তাঁরা মঞ্চে গান পরিবেশন করছিলেন। আসরের নামাজের বিরতির পর ৪টা ২১ মিনিটে মঞ্চে শেষ গানটি চলছিল। তখনই ১৫ থেকে ২০ ব্যক্তি রড ও লাঠিসোঁটা নিয়ে অনুষ্ঠানে হামলা চালান। তাঁরা কারও সঙ্গে কথা না বলেই ভাঙচুর শুরু করেন। এ সময় ৬০ থেকে ৭০টি চেয়ার, বাদ্যযন্ত্র ও সাউন্ডবক্স ভাঙচুর করা হয়। প্রায় ২০ মিনিট এভাবে ভাঙচুরের পর হামলাকারীরা কলেজ থেকে চলে যান।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বলেন, হামলার সময় মেয়েরা আতঙ্কিত হয়ে ওঠে। তারা নিজেদের ভ্যানিটি ব্যাগ, জুতা-স্যান্ডেল ফেলে দিগ্বিদিক দৌড়াতে শুরু করে। এ সময় পড়ে গিয়ে কয়েকজন আহত হয়।
হামলাকারীরা নামাজের সময় গানবাজনা করার অভিযোগ করেছেন বলে শুনেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তবে এটি মিথ্যা অভিযোগ দাবি করে তসলিম উদ্দিন বলেন, হামলাকারীরা অভিযোগ করেন যে নামাজের সময় নাকি গানবাজনা চলছিল। আসলে নামাজের সময় গানবাজনা হয়নি। জোহর ও আসরের সময় নামাজের জন্য অনুষ্ঠানে বিরতি দেওয়া হয়েছিল।
হামলা ও ভাঙচুরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিক জানাতে পারেননি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি জানান, ঘটনাটি থানায় জানানো হয়েছে। এরপর থানা থেকে একজন উপপরিদর্শক (এসআই) এসে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখছেন। লিখিত অভিযোগ করবেন কি না, সেটি কলেজ গভর্নিং বডির সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কলেজের শিক্ষক আবদুল মালিক বলেন, ‘তারা অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। ভাঙচুর করেছে। যারা ভাঙচুর করেছে, তারা মসজিদের মুসল্লি ছিল না। অন্য লোকও ছিল। হামলার পর বাইরের লোক এসে তাদের বলেছে যে নামাজের সময় নাকি গানবাজনা করা হয়েছে। আবার এ কথাও বলছে যে স্থানীয় লোকজনকে দাওয়াত না দিয়ে বাইরের লোককে দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। এ নিয়েও তাদের ভেতরে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই হামলা চালিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আসলে এখানে অন্য পলিটিকস আছে। নামাজের সময় গানবাজনা করা হয়নি। দুবার বিরতি দেওয়া হয়েছে। যারা হামলা চালিয়েছে, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা যাবে।’
গোদাগাড়ী থানার ওসি রুহুল আমিন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ পাঠিয়েছেন। ওরা ফিরলে বিস্তারিত শুনে ও সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ থাকলে, তা দেখে নিশ্চিত হয়ে বলতে পারবেন। অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।