অনলাইন ডেস্ক : বুধবার বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘তারেক রহমান: সংগ্রাম ও রাজনৈতিক যাত্রা’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অতিথিরা। ছবি:
ঢাকা, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ (বাসস): বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তারেক রহমান প্রতিমুহূর্তে গোটা জাতীর ঐক্য সৃষ্টি করে একটা গন্তব্যে যাওয়ার পথকে সুগম করার কথা বলছেন। তার প্রতিটি বক্তব্য গঠনমূলক।’
বুধবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে ‘তারেক রহমান: সংগ্রাম ও রাজনৈতিক যাত্রা’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘১৭ বছর আগে তারেক রহমান নির্বাসিত হয়েছেন। নির্বাসনে থেকেই তিনি কাজ করেছেন। নিন্দুকেরা, সমালোচকরা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলতো, তারেক রহমান কোনদিন সফল হতে পারবেনা। তারেক রহমান এমন এক সময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন, যখন বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো হয়েছিল । এটা যে কত কঠিন কাজ ছিল; যা তারেক রহমান করেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারেক রহমান যে পথটা অনুসরণ করলেন তা ছিল ঠিক তার পিতার মত। সুদূরপ্রসারী চিন্তা, ভবিষ্যতকে দেখা এবং অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতা; এটা তার পিতার কাছ থেকে পেয়েছেন তিনি। তার পিতা প্রথম যে ক্যাবিনেট গঠন করেছিলেন তা ছিল গ্যালাক্সি অব ইন্টেলেকচুয়াল অর্থাৎ দেশের সবচেয়ে মেধাবীদের নিয়ে তিনি ক্যাবিনেট গঠন করেছিলন। তারেক রহমানও দেশের মেধাবীদের সাথে যোগাযোগ রাখছেন এবং জানার চেষ্টা করছেন কিভাবে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তারেক রহমানের দেশে ফেরার অপেক্ষায় আছি। আমার বিশ্বাস, তিনি ফিরে এলে দেশে অভূতপূর্ব ঐক্য সৃষ্টি হবে। জাতি সত্যিকারার্থে সঠিক নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছে।’
খুলনার সংঘর্ষের বিষয়ে মহাসচিব বলেন, ‘ঘটনাটি দুঃখজনক। আমি এই ঘটনার নিন্দা জানাই। একই সাথে প্রত্যাশা করি, সুষ্ঠু তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন কারা এগুলো ঘটিয়েছে। গণতন্ত্রের কথা বলবেন অথচ আমার মত প্রকাশে বাঁধা দিবেন। এই ধরনের মানসিকতা নিয়ে কখনো মহৎ কিছু করা যাবেনা।’
তিনি বলেন, ‘সচেতনভাবে কেউ কেউ দেশে অস্থিরতা, নৈরাজ্য সৃষ্টি করার চেষ্টা করছেন। প্রত্যেকের দায়িত্ব হবে জনগনকে সঠিক পথে পরিচালিত করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা একটি ট্রানজিশন পিরিয়ড অতিক্রম করছি। আমাদের বিশ্বাস, তরুণ প্রজন্ম ও ছাত্ররা যেভাবে এগিয়ে আসছে তাতে করে আমাদের ঐক্য আরও সুদৃঢ় হবে। কেউই আমাদের ঐক্য নষ্ট করতে পারবেনা।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খুব কষ্ট হয় যখন দেখি দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এমন এমন কথা বলে, যার মাধ্যমে বিভাজন সৃষ্টি হয়। অনুগ্রহ করে কেউ দায়িত্বহীন কথা বলবেন না। এমন কথা বলবেন না যে কথার জন্য জাতি আবারও বিভক্ত হবে। যাতে করে জুলাইয়ের সমস্ত অর্জন ব্যর্থ হয়ে যাবে।’
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী।
তিনি বলেন, এই গণঅভ্যুত্থানের পেছনে দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। জাতীয়তাবাদী শক্তির একটা বড় ভূমিকা ছিল। এখন অনেকেই বলছেন দেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। দ্বিতীয় স্বাধীনতা বলে কিছু নাই। স্বাধীনতা একবারই হয়েছিল। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন শহীদ জিয়াউর রহমান।
তিনি আরও বলেন, এটাকে বিপ্লব বলা যায়না, বিপ্লবের অর্থ আরও অনেক গভীর। এটা ছিল গণঅভ্যুত্থান। এটা এক ধরনের রেঁনেসা। এর সাথে ইউরোপের রেঁনেসার মিল রয়েছে। তা হলো জাগরণ।’
বইটি নিয়ে তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের সংগ্রামী জীবনের একটি ছবি এই বইতে ফুটে উঠেছে। তারেক রহমানের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, তাঁর আদর্শ, জীবনচরিত, পারিপার্শ্বিক অবস্থা তাকে নেতৃত্বের আসনে নিয়ে এসেছে। এই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের যে অঙ্গীকার তারেক রহমান করেছেন তাতেই তিনি মহান।’
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ।
তারেক রহমান সম্পর্কে মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘আমার কাছে সব সময় মনে হয় তারেক রহমান একটি ম্যাজিক্যাল চরিত্র। কারণ, তিনি দেশ ছেড়েছেন প্রায় ১৬ বছর আগে। তরুণদের বড় একটি অংশকে তিনি স্বচক্ষে দেখেননি। ফ্যাসিস্ট শাসক তারেক রহমানের কাছ থেকে কয়েকটি প্রজন্মকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এমনকি তার বক্তব্য যাতে তরুণ প্রজন্ম শুনতে না পায় সেজন্য আদালতের কাঁধে বন্দুক রেখে তারেক রহমানের বক্তব্য প্রচারও বন্ধ করেছিল। একটা পর্যায়ে এসে পত্রিকাগুলো তার নামও নিতে পারতো না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বছর জুড়ে বিএনপির বড় বড় প্রোগ্রামগুলো সাংবাদিক হিসেবে আমরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছি, প্রোগ্রামে তরুণদের অংশগ্রহণ ছিল বিশাল। ম্যাজিকটা এখানেই যে, তারেক রহমানকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা সফল হয়নি। বরং এর ফলে তারেক রহমানকে নিয়ে তরুণ সমাজের আগ্রহ আরও বেড়ে গেছে।’
বাসস সম্পাদক আরও বলেন, ‘আমরা ৫ আগস্টের পর দেখলাম বিএনপি শুধু বিএনপির দল নয়। বিএনপি এই জাতির দল হয়ে উঠছে। যখন বিভাজিত একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, দেশ একটি সংঘাতময় পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সবাই যার যার মত করে গণঅভ্যুত্থানের ফসল টানার একটি পরিস্থিতি তৈরি করেছে। কিন্তু এই জায়গায় যিনি সব সময় ঐক্যের বাণী উচ্চারণ করেছেন; তিনি তারেক রহমান।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাঁর সম্পর্কে আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে যে অপপ্রচার চলেছিল তা উড়ে গেছে। তার চরিত্র হরণের যে চেষ্টা করা হয়েছে, তা উড়ে গেছে। তার প্রকৃত রূপে তিনি হাজির হয়েছেন।’
মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের অনেকেই জানেন না তারেক রহমান ব্যক্তি হিসেবে কেমন, নেতা হিসেবে কেমন, তিনি কর্মসূচিতে গেলে কিভাবে মানুষের সাথে হাত মেলাতেন, তার ব্যক্তিগত যোগাযোগগুলো কেমন ছিল সে সম্পর্কে একটা অন্তরঙ্গ ধারণা পাওয়া যাবে এই বইতে। এই বইটি একটি অমূল্য সম্পদ হিসেবে আমাদের ইতিহাসে থাকবে।’
গণঅভ্যুত্থানকে সফল করতে নানা তৎপরতা অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করে মাহবুব মোর্শেদ আরও বলেন, ‘আমরা যদি ঐক্য নষ্ট করি, আমরা যদি বিভাজিত হয়ে যাই, ক্ষুদ্র স্বার্থে নিজেদের বৃহত্তর স্বার্থ জলাঞ্জলি দেই তাহলে ফ্যাসিস্ট শক্তিশালী হবে। তারেক রহমান যে কথাগুলো বলছেন সেগুলো যদি শুনি তবে সামনে আমাদের একটি গঠনমূলক সুন্দর ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে।’
সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়া। তারুণ্যের শক্তিটি আমাদের প্রয়োজন। তারুণ্যের কাছে সব হেরে যায়। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের চলতে হবে। তারেক রহমান সব সময় ঐক্যের বিষয়ে আমাদের জোর দিচ্ছেন। ফ্যাসিবাদী শক্তিকে ধ্বংস করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তারুণ্যের শক্তিকে যাতে কেউ বধ না করতে পারে তাদেরকে সেই অনুরোধ করবো।’
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএনপির দপ্তর সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বইটির প্রকাশক আদর্শ প্রকাশনীর মাহাবুর রাহমান।
‘তারেক রহমান: সংগ্রাম ও রাজনৈতিক যাত্রা’ বইটি সম্পাদনা করেছেন ড. মওদুদ আলমগীর পাভেল ও সাইমুম পারভেজ। -বাসস