ভোলাহাট(চাঁপাইনবাবগঞ্জ)প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাটে সরকারী জমি আবাদে বাঁধা দিয়ে জমির মালিককে বেধড়ক মারপিট! বিভিন্ন দপ্তরে বাদীর লিখিত অভিযোগ দিয়েও সুরাহা মেলেনি হানিফের! যেকোন মুহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটে যাবার আশঙ্কায় প্রাণের ভয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় হানিফ ও তার পরিবারের সদস্যগণ!
লিখিত অভিযোগে জানা যায়, উপজেলার বিশাল বিলভাতিয়ায় সরকারী বিধি বিধানুযায়ী বন্দোবস্ত জমি যার এসডিএম কেস নং-১১৯০/XII/১৯৭৯-৮০ ইং, হোল্ডিং নং-৯৭৮। খতিয়ান নং-০১, দাগ নং-আরএস-৩৫৩৮, ৩৫৫৭, ৩৫৫৬ ও ৩৫৫৫। যার জমির পরিমান-১,৫০০০ একর।
উপজেলার জামবাড়ীয়া ইউনিয়নের মীরপুর (বাগানবাড়ী) গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে হানিফ আলী উক্ত জমি বাপ-ছেলে মিলেমিশে ১৯৭৯-৮০ সাল হতে জমির বিশাল আবর্জনা ময়লা মাটি পরিস্কার ও জমিকে আবাদী করে ভোগদখল করছেন। ভোগদখল করে আসলেও হঠাৎ তার ভাগ্যাকাশে কালোমেঘ নেমে আসে।
অভিযোগে হানিফ বলেন, গত ২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১ সালের প্রকাশ্য দিবালোকে ফতেপুর গ্রামের মৃত লোকমান আলীর ছেলে শরিফুল ইসলাম ওরফে কালু তার দলবল নিয়ে আমার আবাদী জমিতে অতর্কিত ও যোগসাজসে জমি চাষাবাদে বাঁধা প্রদান করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নিয়ে আমাকে চাষাবাদ ও জমি বুঝিয়ে দেয়।
হানিফ আলী আরো জানান, বাবা জমির মালিকানা সূত্রে আমি আমার বউ, ৩ মেয়ে, বাবা-মা ও ৫ বোন নিয়ে মোট ১২ জন সদস্যের আহারের একমাত্র সহায় ঐ জমি। আর এই আমার দুর্দিনে শরিফুল ও তার দলবল এভাবে অত্যাচার চালিয়ে আসছে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ তারিখে আবারো ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করে শরিফুল ও তার দলবলেরা। এতোগুলো টাকা আমি একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হয়ে কিভাবে ২ লাখ টাকা দিবো বলে কেঁদে ফেললেন হানিফ।
হানিফ কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, এই শরিফুল ইসলাম ও তার দলবলের লোকেরা ২ লাখ টাকা দিতে অপারগ হলে আমাকে আমার বোন চাঁনমুনি (৫৫) ও ভাগ্নে জিন্নাত আলী (২৮) কে বেধড়ক বাঁশের লাঠি দিয়ে মারধর করে। এমনকি আমার বউ জাহানারা (৪০) ও আরেক ভাগ্নে ইসমাইল (৩০) কেও মারধর করতে থাকলে উপায়ন্তর না পেয়ে চিৎকার শুরু করি। আমার চিৎকারে স্থানীয়রা ঘটনাস্থলে এসে সবাইকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
স্থানীয় জনসাধারণ আমাদের হাসপাতালে নেয়ার মূহুর্তে বিবাদীগণ বলেন, জমিতে আবারো যদি দেখি তাহলে জানে মেরে ফেলার ও নানা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজসহ হুমকিধামকি দিয়ে ঐস্থান ত্যাগ করে।
হানিফ আলী আরো জানান, স্যার আমরা গরীব-অসহায় মানুষ এহেন পরিস্থিতিতে ন্যায্য সরকারী বন্দোবস্ত কাগজ পত্র থাকা সত্বেও বাবার ঐ জমি দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখলে থাকলেও শরিফুল ও গংদের অত্যাচারে আমার ১২ সদস্যের পরিবার বাড়ীতে থাকা মুস্কিল। আমি ও আমার পরিবারের সদস্যগণ বর্তমানে ভয়ে আতঙ্কিত অবস্থায় আছি। আমার দুর্দিনে আতঙ্কিত পরিবারের পাশে থেকে আমাদের এ ঘটনার সুরাহা করে দেন স্যার!
এ ব্যাপারে বিবাদী দলের প্রধান শরিফুল ইসলাম ওরফে কালুর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে দেড় লাখ ও পরে দু’লাখ টাকার কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট-ভিত্তিহীন বলে। যার বাপের দু’টাকা খরচ করার মুরাদ নেই, সে দিবে দেড়-দু’লাখ টাকা! তবে তিনি এটা স্বীকার করেন যে, হানিফ ও তার বাবা ফজলুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে জমিটা ভোগদখল করর আসছে। তিনি এটাও বলেন যে হানিফের জমির কাগজ পত্রের কিছু ক্রুটি-বিচ্যুতি আছে বলে জানান।
থানায় লিখিত অভিযোগের আইও এসআই জাহাঙ্গীর আলম এ ঘটনায় অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, হানিফ আলীর অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি তদন্তাধীন ও ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি সম্পূর্ণ বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। প্রকৃত জমির মালিকানার কাগজ-পত্রের মাধ্যমে মূল জমির মালিককে জমি বুঝিয়ে দেয়া হবে তিনি জানান।