স্টাফ রিপোর্টার : রোববার থেকে শুরু হচ্ছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। আত্মশুদ্ধির একটি মাস ইবাদতে মশগুল থাকবে ধর্মপ্রাণ মুসলমান। এর মধ্যে শনিবার (১ মার্চ) মুসল্লিরা ছিলেন কেনাকাটায় ব্যস্ত। এদিন বেশিরভাগ মানুষই ছিলেন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে ব্যস্ত। কেউ পুরো মাসের জন্য, কেউ আবার দু-এক সপ্তাহের জন্য কিনছেন প্রয়োজনীয় নানা ধরনের পণ্য। বিকেল থেকেই বাজারে শুরু হয় যানজট। রিকশার জন্য অনেককে করতে হয়েছে অপেক্ষা।
পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে সেভাবে ভিড় চোখে না পড়লেও সাহেববাজারে রোজার পণ্য কেনাকাটায় মানুষের বাড়তি উপস্থিতি দেখা গেছে। সাহেববাজারে সরেজমিনে ঘুরে ছোলা, তেল, চিনি, ডাল, আটা, খেজুর, ফলমূল, পেঁয়াজ-রসুন, চিড়া-মুড়ি, গুড়সহ বিভিন্ন পণ্য কিনতে দেখা যায়। রমজানের শুরুতে দাম বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় অনেকে আগেভাগেই রোজার পণ্য কিনছেন।
তবে বাজারে ছোলা, চিড়া, মুড়ি, ডাল, গুঁড় প্রভৃতি পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানান, সরবরাহ বেশি থাকায় এক মাস আগের তুলনায় ছোলার দামও কেজিতে ১৫ টাকা কমে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে প্রতি কেজি চিড়া ৭০-৮০ টাকা, আখের গুড় ১৪০-১৮০ টাকা, খেজুরের গুড় ২৫০-৩০০ টাকা ও মুড়ি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাশাপাশি মসুর ও মটর ডালের দামও স্বাভাবিক রয়েছে। ভালো মানের মসুর বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা, মোটা মসুর ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, মটর ডাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা এবং ভালো মানের বেসন ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সব সবজির দাম গড়ে ৪০ টাকার আশপাশে রয়েছে। কেজিপ্রতি বেগুন ৪০-৮০ টাকা, শসা ৬০-৮০, টমেটো ২০-৩০, কাঁচা মরিচ ৪০-৬০ ও আলু ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লেবুর দাম বেড়েছে অস্বাভাবিক ভাবে। বিভিন্ন ধরনের লেবু বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৬০ টাকা হালি পর্যন্ত।
মাস্টারপাড়ায় লেবু কিনতে আসা মহসিন আলী নামের একজন বলেন, রোববার থেকে রোজা শুরু, কিন্তু লেবুর দাম অনেক বেড়ে গেছে। ভালো মানের লেবু কিনতে হলে ৬০ টাকা পর্যন্ত লাগছে। কিন্তু অন্য সবজির দাম কমই আছে।
মসলা জাতীয় পণ্যের মধ্যে আদা ১২০-১৮০ টাকা, চায়না রসুন ২০০-২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে লেবুর দাম বেড়েছে। বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ সঙ্কট আছে। খোলা সয়াবিন তেল নির্ধারিত ১৭০ টাকার পরিবর্তে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
মুরগির বাজারেও কিছুটা দাম বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি ১৯০-২০০, সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস হাঁড়সহ ৭৫০-৮০০ এবং শুধু মাংস ৯৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। খাসির মাংসের দাম সপ্তাহ ব্যবধানে ৫০-১০০ টাকা বেড়ে ১০৫০-১১০০ টাকায় উঠেছে।
ভোগ্যপণ্যের বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দাম বাড়ার শঙ্কা নেই। তবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর চেষ্টা করতে পারে। ক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় কিছু পণ্যের দাম কিছুটা কম। তারা আশা করছেন, রমজানের শুরুতে আরও দাম কমবে।
ইফতারের অন্যতম অনুষঙ্গ ফল। ইতোমধ্যে ফলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। বিভিন্ন ফলের দাম কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। আপেল বর্তমানে ২৬০-৪০০ টাকা কেজি, মাল্টা ২৮০-৩২০ টাকা, পেয়ারা ৮০-১০০ টাকা, তরমুজ সাইজভেদে ৪৫০-৫৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য সবজির মধ্যে শিম কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বড় আকারের ফুলকপি ৪০ থেকে ৫০ টাকা পিস, বাঁধাকপি বড় সাইজের ৩০ থেকে ৪০ টাকা পিস, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পাকা টমেটো কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা, গাজর ৩০ থেকে ৪০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, মটরশুঁটি ৮০ থেকে ১০০ কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, হাঁসের ডিম ২২০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিমের হালি ৯০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সাহেববাজারের মুদি দোকানী ইসাহাক আলী বলেন, শুধু তেলের সমস্যা না হলে এ বছরের বাজার একদম স্থিতিশীল বলা যেত। বরং গত কয়েক মাসের তুলনায় এখন জিনিসপত্রের দাম কম। কিছু পণ্যের সরবরাহ কমার কারণে ২-১ টাকা কম বা বেশি হচ্ছে, যেহেতু এখন মানুষ কিনছে বেশি। এটা দু-চারদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
বাজারে পণ্যের স্বস্তির কথা বলছেন তসলিমা বেগম নামের এক ক্রেতা। তিনি বলেন, আগে রোজা শুরু হলেই যে হুলুস্থুল কাণ্ড পড়ে যেত, এটার দাম বাড়ে, ওটা বাড়ে, এমনটা এ বছর নেই। বরং এবার সবকিছুর দাম নাগালের মধ্যে মনে হচ্ছে।
এ বছর রমজানের বাজারে অস্থিরতার সবচেয়ে বড় কারণ বাজারে সয়াবিন তেলের মিলছে না বললেই চলে। এ সংকট শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। অথচ ভোজ্যতেল সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো রোজার আগে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল।
বাজারের এই অবস্থায় সড়কে ছিল যানজট। এদিন সকাল থেকে যানজট লক্ষ্য করা গেছে। যদিও শনিবার এরকম জট থাকে না। শনিবার বিকেল থেকে এই জট আরও বাড়ে। তবে সন্ধ্যা থেকে সেভাবে পাওয়া যায়নি কোন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বা রিকশা। এতে ভোগান্তিতে পরে নগরবাসী।
দিপা প্রজ্ঞা নামের এক যাত্রী জানান, মনিচত্বর থেকে কুমারপাড়া পর্যন্ত হেঁটে আসতে হয়েছে। এর মধ্যে কোন রিকশা পাওয়া যায়নি। একটি রিকশা পাওয়া গিয়েছিল তিনি শিরোইলের জন্য ভাড়া চেয়েছেন ৬০ টাকা। এখান থেকে নিয়মিত ভাড়া ২০ টাকা। এরপর এক ঘণ্টাতে আর কোন রিকশা পাওয়া যায়নি।
এদিকে বাজার তদারকির বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক উম্মে কুলসুম সম্পা জানান, আমরা প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করছি। কোন ব্যবসায়ী অসাধু কিছু করলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। রমজানের প্রতিদিন আরও জোরালো ভাবে বাজার মনিটরিং করা হবে। কেউ সয়াবিন তেলের দাম বেশি নিলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।