অনলাইন ডেস্ক : ‘প্রেসিডেন্ট অ্যাট ওয়ার’ নামে নতুন একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এই বইয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কীভাবে একাধিক মার্কিন প্রেসিডেন্টের জীবন ও শাসনকে প্রভাবিত করেছিল, তা বিশদভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া বইটিতে জন এফ কেনেডির প্রেমজীবনের একটি বিতর্কিত অধ্যায় তুলে ধরেছেন লেখক স্টিভেন এম গিলন। ইনগা আরভাদ নামে একজন সম্ভাব্য নাৎসি গোয়েন্দার সঙ্গে কেনেডি সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রোববার দ্য পিপল জানিয়েছে, ১৯৪১ সালে কেনেডি যখন মার্কিন নৌবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত ছিলেন, তখন তিনি ডেনিশ-আমেরিকান সাংবাদিক ইনগা আরভাদের প্রেমে পড়েন। আরভাদ ছিলেন ওয়াশিংটন টাইমস হেরাল্ড-এর কলামিস্ট এবং তাঁর বিরুদ্ধে জার্মানির হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ছিল।
লেখক গিলনের মতে, ‘জার্মান নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলার ১৯৩৬ সালের গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে ইনগাকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। এই বিষয়টি ইনগার বিরুদ্ধে সন্দেহের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।’
ফলে সেই সময়ের মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্টের প্রত্যক্ষ অনুমোদনে ইনগার ফোনে আড়িপাতা, চিঠিপত্র পরীক্ষা করা এবং তাঁর ওপর নজরদারি শুরু করে এফবিআই।
১৯৪২ সালের জানুয়ারিতে এফবিআই কেনেডি ও ইনগার সম্পর্কের তথ্য গসিপ কলামিস্ট ওয়াল্টার উইঞ্চেলের কাছে ফাঁস করে। এই সংবাদ প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই কেনেডিকে ওয়াশিংটন থেকে সরিয়ে সাউথ ক্যারোলিনার চার্লসটাউন নৌঘাঁটিতে ডেস্ক জব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
তবে নৌবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা চেয়েছিলেন কেনেডিকে স্থায়ীভাবে নৌবাহিনী থেকে বহিষ্কার করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পারিবারিক প্রভাবের কারণে কেনেডি শেষ পর্যন্ত পিটি-বোট ক্যাপ্টেনের পদ পান।
ইনগা গুপ্তচর ছিলেন এমন কোনো প্রমাণ অবশ্য কেউ পায়নি। তবে ১৯৬১ সালে কেনেডি প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগেই ইনগার সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভেঙে গিয়েছিল। কেনেডি সম্পর্কটি পুনরায় জোড়া লাগানোর চেষ্টা করলেও ইনগার জীবন তত দিনে অন্যদিকে মোড় নিয়েছিল।
স্টিভেন গিলনের বইটিতে শুধু কেনেডিই নন, আরেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ারের প্রেমজীবনের কথাও উঠে এসেছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আইজেনহাওয়ারের ব্যক্তিগত চালক ছিলেন প্রাক্তন মডেল কেই সামার্সবি। তিনি একজনের সঙ্গে বাগদান সম্পন্ন করলেও পরে আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।
আইজেনহাওয়ার তাঁকে শুধু চালক হিসেবে নয়, ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছিলেন। এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রেও আইজেনহাওয়ারের সঙ্গী হতেন কেই সামার্সবি। রুজভেল্ট ও চার্চিলের মতো নেতাদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকেও উপস্থিত থাকতেন।
সামার্সবির সঙ্গে সম্পর্কের কথা আইজেনহাওয়ারের স্ত্রী মামির কানে পৌঁছালে তিনি সন্দেহ করতে শুরু করেন। সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিনে তাঁদের একসঙ্গে প্রকাশিত ছবির নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন মামি।
পরবর্তীতে আইজেনহাওয়ার ওই সম্পর্কটি ভেঙে দেন। সামার্সবি তাঁর স্মৃতিকথায় লিখেছেন—তাদের মধ্যে আবেগ ছিল, তবে আইজেনহাওয়ার সম্পর্কটি পূর্ণতা দিতে পারেননি।
বইটিতে গিলন বলেছেন, ‘আমরা আজ প্রেসিডেন্টদের ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। কিন্তু ইতিহাসে দেখা যায়, বিখ্যাত প্রেসিডেন্টরাও ব্যক্তিগত দুর্বলতার শিকার হয়েছেন। তবে তাঁদের এসব সম্পর্ক তাঁদের কার্যকারিতাকে খুব একটা প্রভাবিত করেনি।’