বাগেরহাট প্রতিনিধি : ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নারীর ক্ষমতায়ন: টেকসই উন্নয়নে জ্বালানিনিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করো’ শীর্ষক উঠান বৈঠকে বক্তারা বলেছেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিষাক্ত ধাতু নারীর প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে জ্বালানি খাতে নারীর সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ বাড়াতে হবে এবং সব স্তরে জ্বালানির ন্যায়সংগত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আজ শনিবার বেলা ১১টায় বাগেরহাটের মোংলার চিলাবাজারে উপকূলীয় নারীদের অংশগ্রহণে এ উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা নবায়নযোগ্য জ্বালানির প্রসারের প্রয়োজনীয়তা ও বিদ্যুৎ খাতে নারীর অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তা তুলে ধরেন।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নারীর অংশগ্রহণ, ক্ষমতায়ন, জ্বালানি অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং নীতিনির্ধারক হিসেবে নারীর ভূমিকা মূল্যায়নের দাবিতে ব্যতিক্রমী প্রচারাভিযানের আয়োজন করা হয়। এর অংশ হিসেবে উঠান বৈঠক হয়।
মোংলা নাগরিক সমাজ, ক্লিন (কোস্টাল লাইভলিহুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল অ্যাকশন নেটওয়ার্ক) ও বিডব্লিউজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ইকোলজি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট)-এর যৌথ উদ্যোগে এই উঠান বৈঠক আয়োজিত হয়। এর মূল লক্ষ্য ছিল সারা দেশে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিশ্চিত করে নারীদের জ্বালানিনিরাপত্তা ও অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।
উঠান বৈঠকে সভাপতিত্ব ও প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নারীনেত্রী কমলা সরকার, চন্দ্রিকা মন্ডল, রত্না শেখ, তন্বীমন্ডল, পরিবেশকর্মী হাছিব সরদার ও ইয়ুথ লিডার মেহেদী হাসান।
উঠান বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে নূর আলম বলেন, দেশে ব্যবহৃত মোট জ্বালানির ৪৬ শতাংশই ব্যবহার হয় গৃহস্থালির কাজে অর্থাৎ নারীরাই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করছেন কিন্তু আমদানি করা জীবাশ্ম জ্বালানির ফলে প্রতিনিয়ত বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির কারণে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হচ্ছেন।
নূর আলম আরও বলেন, নারীরা জ্বালানি খাতে পরিকল্পনা থেকে বাস্তবায়ন, উৎপাদন থেকে বিতরণ—সব ক্ষেত্রেই বঞ্চিত। সারা দেশে নারীদের মালিকানায় মাত্র ২-৪ শতাংশ জমি থাকায় বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের এড়িয়ে যায়। পরামর্শ গ্রহণ প্রক্রিয়ায় শুধু সুবিধাভোগী হিসেবে তাদের অন্তর্ভুক্ত করে এবং ‘সংবেদনশীল বিষয়’ হিসেবে দেখায়। কিন্তু সক্রিয় অংশীদার বা নীতিনির্ধারক হিসেবে নারীদের স্বীকৃতি দেওয়া হয় না।
নারী দিবসের উঠান বৈঠকে নারীনেত্রী কমলা সরকার বলেন, ফসিল ফুয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কারণে নারীরা মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হয়, কারণ পুরুষের মতো তারা সহজে স্থানান্তরিত হতে পারে না। এলাকায় বহিরাগতদের ভিড়ের কারণে তারা চলাচল, ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন এবং মৌলিক প্রয়োজন পূরণে অসুবিধার সম্মুখীন হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে এসব সমস্যা সমাধানে খুব বেশি তৎপর হতে দেখা যায় না। সাধারণত পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়ন প্রক্রিয়ার বাধ্যতামূলক শর্ত পূরণের জন্য নারীদের নামমাত্র পরামর্শ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
উঠান বৈঠকে নারীনেত্রী রত্না শেখ বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সব সময় নারীদের বিশেষ প্রয়োজন, বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্য-সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষা করেন। জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিশেষ করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো মাত্রাতিরিক্ত পারদ, সিসা, ক্যাডমিয়াম, সালফার ও ক্রোমিয়াম নির্গত করে। এই বিষাক্ত ধাতুগুলো নারীদের প্রজনন স্বাস্থ্যের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। নারীরা এই দূষণের সরাসরি ও নিরীহ শিকার হলেও তাদের কোনো ক্ষতিপূরণের অধিকার নেই, কারণ তাদের নামে জমির মালিকানা থাকে না।
উঠান বৈঠকে বক্তারা নারীদের জন্য সহজে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের কাছে আহ্বান জানান।