নাটোর প্রতিনিধি : নাটোরের সিংড়ায় গভীর রাতে পুলিশের চেকপোস্টে গাড়ি তল্লাশীর সময় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলীর গাড়ি থেকে মিলেছে প্রায় ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা। এই টাকা জব্দ করেছে উপজেলা প্রশাসন। টাকা উদ্ধারের পর এই প্রকৌশলীকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়। এরপর পরিবারের সদস্যদের জিম্মায় শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকেলে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ডাকা মাত্র আবার হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই প্রকৌশলীর নাম মো. ছাবিউল ইসলাম। তিনি গাইবান্ধায় প্রায় ২০ বছর থেকে কর্মরত। সেখান থেকে টাকা নিয়ে একটি ভাড়া করা প্রাইভেটকারে রাজশাহীতে আসছিলেন। ছাবিউলের বাসা মহানগরীর ভাটাপাড়া এলাকায়। তার আদি নিবাস সিরাজগঞ্জ জেলায়।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দিবাগত রাত দুইটার দিকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের চলনবিল গেট টাকাসহ গাড়ি জব্দ করা হয়। এরই মধ্যে নির্বাহী প্রকৌশলীকে আটক করে টাকার উৎস সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিংড়া থানা হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে সঠিক তথ্য প্রমাণ দিতে না পারায় বিষয়টি অনুসন্ধানে দুদককে জানানো হয়েছে।
সিংড়া থানার ওসি আসমাউল হক বলেন, প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের চলনবিল গেট এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি কার্যক্রম চালায় পুলিশ। এ সময় গাইবান্ধা থেকে রাজশাহীগামী একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকারকে থামানোর জন্য সিগন্যাল দেওয়া হয়। পরে ওই গাড়িটি তল্লাশিকালে ওই গাড়ির ব্যাকডালায় বিপুল টাকা পাওয়া যায়। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর যৌথ টিম ঘটনাস্থলে যান এবং অভিযান পরিচালনা করেন।
পরে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার একরামুল হক, সিংড়ার ইউএনও মাজহারুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার (সিংড়া সার্কেল) সনজয় কুমার সরকার, নাটোর সদর থানার ওসি মাহাবুর রহমানসহ সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ টিম ঘটনাস্থলে যান এবং অভিযান পরিচালনা করেন।
ওসি জানান, এলজিইডির প্রকৌশলী পরিচয়দানকারী ছাবিউল ইসলাম প্রথম দিকে জানিয়েছিল তার কাছে জমি বিক্রির ৩০ লাখ আছে। পরে গণনা করে আরও ৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা বেশি পাওয়া যায়। বিষয়টি উদঘাটন করার জন্য দুদককে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। মুচলেকা নিয়ে পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তের জন্য ডাকলে যেকোনো সময় হাজির হতে বাধ্য থাকবেন তিনি।
এলজিইডির প্রকৌশলী পরিচয়দানকারী ছাবিউল ইসলাম পুলিশকে বলেন, জমি বিক্রির বৈধ টাকা গাইবান্ধা থেকে রাজশাহীতে নিয়ে যাচ্ছিলেন।
এব্যাপারে নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( ক্রাইম অপস) একরামুল হক জানিয়েছেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসাবে বৃহস্পতিবার রাত ১ টার দিকে সিংড়া উপজেলার চলনবিল গেটে নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে চেকপোস্ট বসায় পুলিশ। এসময় একটি প্রাইভেট কার থামিয়ে তল্লাসীকালে পেছনের ডালায় রাখা টাকাগুলো জব্দ করে পুলিশ। পরে ওই কারসহ প্রকৌশলীকে থানা হেফাজতে নেয়া হয়। তবে প্রকৌশলী টাকাগুলো জমি বিক্রির দাবি করায় সেগুলো যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাইবান্ধা এলজিইডির এক কর্মচারী সংবাদমাধ্যম বলেন, স্যার বৃহস্পতিবার হলেই সাদা গাড়ি নিয়ে তার বাড়ি যান। পাঁচদিন অফিস করে ঠিকাদারের কাছ থেকে কমিশন নেন। সেগুলো গাড়িতে করে বাড়ি নিয়ে যান। আমরা ছোট চাকরি করি চোখের সামনে কোটি টাকার খেলা হয়। কিছুই বলার নাই। অফিসের বাইরেও রিয়াজ নামে এক ছেলেকে তার নিজ অর্থায়নে সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে ছাবিউল ইসলামের সহকারী রিয়াজকে প্রশ্ন করলে তিনি অবাক হয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, ‘স্যার কি এই বৃহস্পতিবারও বাড়িতে টাকা নিয়ে গেছেন?’ এসময় তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার এলেই স্যার কিছু না কিছু টাকা নিয়ে যান। আর এ টাকাগুলো তো স্যার একাই খান না। রাজশাহীতে নেতা ও ঢাকা অফিসে কিছু পাঠাতে হয় স্যারকে। আমি এইটুকু জানি।’
ছাবিউল ইসলাম দীর্ঘ ২১ বছর ধরে গাইবান্ধায় কর্মরত। প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়ার পালক ছেলে হিসেবেই তিনি আওয়ামী লীগের সবার কাছে পরিচিত। ফলে অনিয়ম-দুর্নীতি করলেও এতদিন তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস কারো হয়নি।