অনলাইন ডেস্ক : ভেতরে জায়গা নেই, যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় প্রতিটি কাউন্টারেই৷ বাধ্য হয়ে ছোট্ট মেয়ে মেহেরজানকে নিয়ে কল্যাণপুর হানিফ বাস কাউন্টারের বাইরে ফুটপাতে বসে পড়েছেন মা আফসানা। তবে এসব নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই তার। আফসানা বলেন, বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়ি সবার জন্য কেনাকাটা করেছি। এই অপেক্ষাটা মধুর যন্ত্রণার। কতক্ষণে ফিরব বাড়ি।
তিনি বলেন, প্রতিবারই ঈদযাত্রায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়, বেশিরভাগ সময়েই বাসের শিডিউল বিপর্যয়, কখনো সড়কে যানজট। এবার সেরকম কিছুই ঘটেনি।
শুধু হানিফ বাস কাউন্টারই নয়, প্রতিটি কাউন্টার যেন যাত্রীতে ঠাসা। শিডিউল অনুযায়ী সময়মতো বাস ছেড়ে যাওয়ায় স্বস্তিতে থাকা যাত্রীদের অস্বস্তিতে ফেলেছে লাগেজের ভোগান্তি। বেশিরভাগ কাউন্টারেই অধিকাংশ যাত্রীকে লাগেজ নিয়ে বাইরে অপেক্ষায় বসে থাকতে দেখা যায়।
বুধবার (২৬ মার্চ) রাতে কল্যাণপুর বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কজুড়ে বাসের সারি। চাপ কমাতে শ্যামলী ও কল্যাণপুরের মাঝের ইউটার্ন বন্ধ করে দিয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। এ ছাড়া লক্ষ্য করা যায় ট্রাফিক পুলিশের বাড়তি তৎপরতা। সড়কে চাপ না থাকলেও বাস কাউন্টারগুলোর দৃশ্য দেখলেই মনে হবে সব চাপ যেন কাউন্টারে।
বসুন্ধরা এলাকায় বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের নয় যুবক। দেশ ট্রাভেলসের রাত ১১টার বাসের টিকিট কাটা তাদের। তাদেরই একজন শরিফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, যানজটের ভোগান্তি এড়াতে আগে রওনা দিয়েছিলাম। ২ ঘণ্টা আগে বাস কাউন্টার এসে পৌঁছেছি। কাউন্টার থেকে বলেছে শিডিউলমতো বাস ছাড়বে। কিন্তু এই দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করার মতো জায়গা নেই কাউন্টারে। বাধ্য হয়ে লাগেজ-ব্যাগ নিয়ে কাউন্টারের সামনে বসে পড়েছি।
তিনি বলেন, লাগেজ আর অপেক্ষার ভোগান্তি থাকলেও বাস ছাড়ছে শিডিউলমতো। সময়মতো ঈদযাত্রা শেষ করতে পারাটাই তো বড় কথা।
দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও রুটের যাত্রী রায়হান বলেন, মায়ের জন্য ঈদে বাড়ি যাওয়া। এবার বাবা নেই। মাকে সঙ্গ দিতেই বউ-বাচ্চা নিয়ে বাড়ি যাচ্ছি। সকাল-সকাল রেডি হয়ে কাউন্টারে আসছি। ভালো লাগছে ছোট্ট বাচ্চা সালাউদ্দিনের জন্য। এবারই প্রথম দাদু বাড়ি যাচ্ছে ঈদ করতে।
হানিফ বাস কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা শামীম বলেন, এবার এখনো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু ঘটেনি। সড়কে চাপ বাড়ছে। তবে এখনো শিডিউল বিপর্যয় ঘটেনি। বাস যথাসময়েই ছেড়ে যাচ্ছে। তবে কাউন্টারে বাড়তি ভিড় রয়েছে। যানজট-ভোগান্তি এড়াতে হয়ত অনেকে আগে চলে এসেছেন কাউন্টারে। তাই চাপ বেড়েছে।
রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটের দেশ ট্রাভেলসের কল্যাণপুর খাজা মার্কেট কাউন্টারের টিকিট বিক্রেতা খালিদ হাসান বলেন, গত ২৫ মার্চ চাপ ছিল সড়কে। আজ কোনো চাপ নেই, কিন্তু কাউন্টারে দেখেন যাত্রীদের ভিড়। এবার বাড়তি ছুটির আমেজে যাত্রীরা আগেই বাড়ি ফিরছে।
একই রুটের হানিফ পরিবহনের চালক বকুল হোসেন বলেন, এই ঈদে যাত্রীদের লাগেজ বেশি। বাসে যেমন লাগেজ সামলানোর বাড়তি চাপ, তেমনি কাউন্টারেও।
শ্যামলী কাউন্টারেও যাত্রীর গাড়ির চাপ দেখা গেছে। সেই চাপ সামলাতে কাউন্টারের বাইরেও চেয়ার পেতে বসে গন্তব্যের বাসের অপেক্ষা করছেন যাত্রীরা।
নুরজাহান সীমা নামের ঠাকুরগাঁওয়ের এক যাত্রী বলেন, স্বামী সচিবালয়ে চাকরি করেন। সে ছুটি পাবে ঈদের আগের দিন। তাই আমরা আগেই যাচ্ছি। বাড়তি ছুটির কারণে বাড়তি আমেজ। কতক্ষণে পৌঁছব বাড়ি, এখন সেই অপেক্ষা। -ঢাকা পোস্ট