অনলাইন ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করার সিদ্ধান্তের কড়া জবাব দিল চীন। আজ শুক্রবার বেইজিং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক ৮৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। এই পদক্ষেপের ফলে দুই দেশের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্র হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ-শৃঙ্খল বিপর্যস্ত হওয়ার সমূহ শঙ্কা তৈরি হলো।
হোয়াইট হাউস বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারক দেশ চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক বৃদ্ধির চাপ অব্যাহত রেখেছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র অন্য বহু দেশের ওপর আরোপিত ‘পাল্টা’ শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করলেও চীনের ক্ষেত্রে শুল্ক বহাল রেখেছে।
চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর অস্বাভাবিকভাবে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে আন্তর্জাতিক ও অর্থনৈতিক বাণিজ্য বিধি, মৌলিক অর্থনৈতিক নিয়ম এবং সাধারণ জ্ঞানকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করেছে এবং এটি সম্পূর্ণ একতরফা দমন ও চাপ সৃষ্টি করার শামিল।
এদিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) চীনের মিশন আজ জানিয়েছে, তারা মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে বাণিজ্য সংস্থায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
চীনা মিশনের বিবৃতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, ১০ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে চীনা পণ্যের ওপর তথাকথিত ‘পাল্টা শুল্ক’ আরও বাড়ানোর ঘোষণা করেছে। চীন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ শুল্ক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ডব্লিউটিওতে একটি অভিযোগ দায়ের করেছে।
ক্রমবর্ধমান চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। ট্রাম্পের প্রতিটি শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপের পাল্টা জবাব দিয়েছে চীন। যার ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।
এশীয় অঞ্চলে লেনদেনে মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের বিক্রির গতি বেড়েছে। এলএসইজির তথ্য অনুযায়ী, ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের মুনাফা ৪ দশমিক ৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে; যা এই সপ্তাহে প্রায় ৪৫ বেসিস পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০১ সালের পর এটিই সবচেয়ে বড় বৃদ্ধি।
ক্যাপিটাল ডটকমের জ্যেষ্ঠ আর্থিক বাজার বিশ্লেষক কাইল রোডডা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, স্পষ্টতই মার্কিন সম্পদ থেকে অর্থ বেরিয়ে যাচ্ছে। মুদ্রার মান এবং বন্ড বাজারের পতন কখনোই ভালো লক্ষণ নয়। এটি কেবল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীর গতি এবং বাণিজ্য অনিশ্চয়তার প্রভাবের চেয়েও বেশি কিছু।
ইউরোপে, শেয়ারবাজার দিনের শুরুতে কিছুটা বাড়লেও দিনের শেষে এসটিওএক্স ৬০০ সূচক প্রায় ১ শতাংশ কমেছে এবং এই সপ্তাহে ১ দশমিক ৭ শতাংশ পতনের দিকে রয়েছে। এটি রেকর্ডকালের অন্যতম অস্থির সপ্তাহ। এশিয়ার বাজারে জাপানের নিক্কেই ৪ দশমিক ৩ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার শেয়ার প্রায় ১ শতাংশ কমেছে।
এদিকে, অফশোর বাজারে ইউরোর মান চীনা ইউয়ানের বিপরীতে প্রায় ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছেছে। এর কারণ হলো, এই ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সাধারণ মুদ্রা শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন হলো বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বাত্মক শুল্কযুদ্ধ ব্যাপকভাবে এই অর্থনীতির ক্ষতি না করলেও বা তাদের জন্য সম্পূর্ণ নেতিবাচক না হলেও, ইউরোপের বড় রপ্তানিকারক দেশগুলো–গাড়ি থেকে শুরু করে বিলাসবহুল হ্যান্ডব্যাগ, সফটওয়্যার পরিষেবা এবং এক্স-রে মেশিনের মতো পণ্য–এর প্রভাব বুঝতে পারবে। শক্তিশালী ইউরো স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের বিশ্ববাজারে কম প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে।