পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা বাংলাদেশের থেকেও খারাপ : শুভেন্দু

পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা বাংলাদেশের থেকেও খারাপ : শুভেন্দু

অনলাইন ডেস্ক : ভারতের পার্লামেন্টে পাস হওয়া ‘ওয়াকফ সংশোধনী আইন, ২০২৫’-কে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলায় যে ব্যাপক বিক্ষোভ-অস্থিরতা হয়েছে— তার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী।

স্থিতিশীলতার নিরিখে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের পরিস্তিতি বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ বলেও মন্তব্য করেছেন বিজেপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য শাখার এই জ্যেষ্ঠ নেতা।

গতকাল কলকাতায় বিজেপির এক কর্মসূচিতে শুভেন্দু বলেন, “বাংলাদেশের থেকেও খারাপ অবস্থা এই রাজ্যের। কড়েয়া থানা এলাকায় জলযাত্রীদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। চাঁপদানিতে পুলিশ ফাঁড়ির পাশে হিন্দুদের পতাকা নামানো হয়েছে। মুর্শিদাবাদের ধূলিয়ান পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে দুর্গামণ্ডপ ও রাধাকৃষ্ণ মন্দির ভাঙচুর করা হয়েছে। ওই এলাকায় বসবাসকারী হিন্দুদের বাড়ি ও দোকান তছনছ করা হয়েছে, অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ধূলিয়ান লাগোয়া সামসেরগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র এলাকার ডাকবাংলো মোড়, কাঞ্চনতলাতে ৩০টা হিন্দু দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে। ঠিক একই ভাবে ২০১৯ সালে ঔরঙ্গাবাদ, উমরপুর, নিমতিতাতে ৬৮টা দোকান ভাঙা হয়েছিল, লুঠ করা হয়েছিল। ধূলিয়ান শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে একটি মন্দির ভাঙা হয়েছে।”

আরও পড়ুনঃ  গাজায় কোনও মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না : ইসরায়েল

সংশোধনী ওয়াকফ আইন বাতিলের দাবিতে গতকাল শুক্রবার কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকা। জেলার জঙ্গিপুর, সুতি সামসেরগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ হয়েছে বিক্ষোভকারীদের।

পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠিচার্জ, টিয়ারশেল এবং স্টান গ্রেনেড ব্যবহারের অভিযোগ করছেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশের বক্তব্য- বিক্ষোভ মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা ও ইট-পাটকেল ছোড়ার পরই ‘অ্যাকশনে’ গেছে পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ছোড়া ইট-পাটকেলে বেশ কয়েক জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানিয়েছেন মুর্শিদাবাদ পুলিশের কর্মকর্তারা।

মুর্শিদাবাদের ঘটনায় রাজ্য প্রশাসনের সমালোচনা করে শুভেন্দু বলেন , ‘মুখ্যসচিব ও জেলাশাসককে বারবার বলেছি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর সহযোগিতা নিন। মোথাবাড়িতে ৮৬ জন নিরীহ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। একই ভাবে সামসেরগঞ্জ ও ধূলিয়ানে যা করেছেন বর্বরোচিত। রাজীব কুমারের তৈরি ফরমুলা আছে। প্রথমে যা হওয়ার হয়ে যাবে। তার পর ফোন – ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাবে। জেলাশাসকের তরফে ১৬৩ ধারা জারি করা হবে। সাংবাদিকদের ঢুকতে দেওয়া বন্ধ হবে।”

বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে রাজ্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু জনগোষ্ঠীকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে— অভিযোগ করে শুভেন্দু বলেন, “এই মুখ্যমন্ত্রীর শাসনে নিশানা করা হচ্ছে হিন্দু ধ্বজকে। যা রাজনৈতিক পতাকা নয়। হিন্দু মন্দিরকে নিশানা করা হচ্ছে। আমি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আবেদন করছি। সম্ভব হলে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছি। আর নিজেদের সুরক্ষিত রাখুন। ভাঙচুর যা হয়েছে তার ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা আমরা করব।”

আরও পড়ুনঃ  গাজায় সবসময় সেনা উপস্থিতি থাকবে : ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

কী আছে সংশোধিত ওয়াকফ আইনে?

ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে মসজিদ, মাদ্রাসা, আশ্রয় কেন্দ্রের পাশাপাশি মুসলিমদের দান করা হাজার হাজার একর জমি আছে। ওয়াকফ বোর্ড এসব সম্পত্তির দেখভাল করে। এর মধ্য কিছু সম্পত্তি খালি পড়ে আছে, কিছু আবার আছে অন্যদের দখলে।

ইসলামিক রীতি অনুযায়ী, ওয়াকফ সম্পত্তি হলো মুসলিম সম্প্রদায়ের কল্যাণে মুসলমানদের দেওয়া দাতব্য বা ধর্মীয় দান। এসব সম্পত্তি বিক্রি করা যায় না, কিংবা অন্য উদ্দেশ্য ব্যবহারও করা যায় না।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, ভারতে এখন সবচেয়ে বেশি জমির মালিক যারা, তাদের মধ্যে ওয়াকফ বোর্ডগুলো রয়েছে। তাদের হিসাবে ভারতজুড়ে অন্তত ৮ লাখ ৭২ হাজার ৩৫১টি ওয়াকফ সম্পত্তি রয়েছে, যার আওতায় আছে ৯ লাখ ৪০ হাজার একর জমি। সব ওয়াকফ সম্পত্তির আনুমানির মূল্য প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার কোটি রুপি।

আরও পড়ুনঃ  যুদ্ধবিরতির পর লেবাননে ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৭১

নতুন সংশোধনীতে ওয়াকফ বোর্ডের গঠনতন্ত্র পরিবর্তন, অমুসলিমদের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা, কোন সম্পত্তি ওয়াকফ বলে বিবেচিত হবে, কোনটা হবে না সরকারকে তা নির্ধারণের এখতিয়ার দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি।

তবে বৃহস্পতিবার লোকসভায় অমিত শাহ বলেছেন, সংশোধিত বিলে ওয়াকফ বোর্ডে কোনো অমুসলিম রাখার কথা বলা হয়নি।

“একজন মুসলিম তো চ্যারিটি কমিশনার হতেই পারেন। তাঁকে ট্রাস্ট দেখতে হবে না, আইন অনুযায়ী ট্রাস্ট কীভাবে চলবে, সেটা দেখতে হবে। এটা ধর্মের কাজ নয়। এটা প্রশাসনিক কাজ। সব ট্রাস্টের জন্য কি আলাদা আলাদা কমিশনার থাকবে? আপনারা তো দেশ ভাগ করে দিচ্ছেন। আমি মুসলিম ভাই-বোনদের স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনাদের ওয়াকফ বোর্ডে কোনও অমুসলিম থাকবে না। এই আইনে এমন কিছু নেই,’’ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিরোধীদের সমালোচনার জবাবে এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।-সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *