যে কারণে আইপিএলের ‘ডট বলের বিনিময়ে গাছ রোপণ’ প্রকল্পও প্রশ্নবিদ্ধ

যে কারণে আইপিএলের ‘ডট বলের বিনিময়ে গাছ রোপণ’ প্রকল্পও প্রশ্নবিদ্ধ

অনলাইন ডেস্ক : ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) অন্যতম প্রশংসনীয় উদ্যোগ প্রতিটি ডট বলের হিসাবে ‘গাছ রোপণ’। ২০২৩ আসরের প্লে-অফ রাউন্ড থেকেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বিসিসিআই। পরবর্তী ২০২৪ মৌসুমেও একই নিয়মে এই প্রকল্প চালু ছিল। তবে চলমান ২০২৫ আইপিএলে একেবারে লিগপর্ব থেকেই ডট বলের জন্য ‘গাছ’ গণনা করা হচ্ছে। কিন্তু এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগও পড়েছে প্রশ্নের মুখে।

নতুন করে এই প্রশ্ন উঠেছে ১১ এপ্রিল কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংসের মধ্যকার ম্যাচ শেষে। যেখানে পুরো ২০ ওভার খেলে ৯ উইকেটে কোনোমতে ১০৩ রান তোলে চেন্নাই। ঘরের মাঠ চিপকে মহেন্দ্র সিং ধোনিরাই যে বড়সড় ফাঁদে পড়েছিলেন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ছোট লক্ষ্য তাড়ায় অনায়াসেই জিতেছে অজিঙ্কা রাহানে নেতৃত্বাধীন কলকাতা। ৯.৫ ওভার এবং ৮ ‍উইকেট হাতে রেখেই তারা বড় ব্যবধানে চেন্নাইকে হারায়।

আরও পড়ুনঃ  জিম্বাবুয়ে সিরিজে আগ্রহ নেই কারও, খেলা দেখা যেতে পারে যে টিভিতে

দারুণ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়া চেন্নাই সেদিন ৬১টি বল ডট খেলেছে। সে হিসেবে নিজেদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টে ১০৯৮ গাছ (প্রতি ডট বলের জন্য ১৮টি) রোপণের কথা জানিয়েছে কলকাতা। নাইট রাইডার্সের সেই পোস্টেই বেশিরভাগ সমর্থক জানতে চেয়েছেন– ‘এত বড় সংখ্যক গাছ কোথায় রোপণ করা হয়েছে?’ কেউবা আবার এই বিষয়ে অফিসিয়াল তথ্যপ্রমাণ ও গাছ লাগানোর স্থান প্রকাশের দাবি তুলেছেন।

বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর লক্ষ্যে ২০২৩ সাল থেকে বিসিসিআই এবং তাদের বেশ কয়েকটি পরিবেশ-সচেতন সহযোগী সংস্থা এই সবুজায়ন প্রকল্প চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুসারে আইপিএলের গত দুই আসরের প্লে-অফ ও ফাইনাল মিলিয়ে চার ম্যাচে ডট বল হলেই স্কোরবোর্ডে তার পরিবর্তে গাছের প্রতীক দেখিয়ে আসছে। এবার সেই গ্রাফিক্স ডিজাইন দেখা যাচ্ছে আসরের শুরু থেকেই। পরিবেশ সংরক্ষণে সোলার বাতি প্রদান, ডিজিটাল টিকিটিং ব্যবস্থা, স্টেডিয়াম এলাকায় প্লাস্টিক ব্যবহারে নিরুৎসাহ এবং সচেতনতার অংশ হিসেবে গ্রিন টি-শার্টের প্রচারণা চালায় আইপিএল কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুনঃ  ২০২৮ অলিম্পিকের ক্রিকেট ভেন্যুর নাম ঘোষণা

প্রতি ডট বলের জন্য ৫০০ গাছ রোপণের এই প্রকল্পে পরবর্তীতে জেএসডব্লু এবং টাটা’র মতো জায়ান্ট প্রতিষ্ঠানও আর্থিক অনুদান ও মিডিয়া কাভারেজ দিয়ে নিজেদের সমর্থন জানায়। পরিবেশ-সহায়ক এমন উদ্যোগ শুরু থেকেই ছিল সামাজিক মাধ্যমের অন্যতম ট্রেন্ডিং ইস্যু। ভারতীয় ক্রিকেটভক্তরা তাতে সমর্থন জানিয়ে হ্যাশট্যাগের সঙ্গে ‘ডটবলফরট্রিস’ এবং ‘আইপিএলগ্রিন’ প্রচারণায়ও অংশ নেয়। কিন্তু সবুজায়নের সুনির্দিষ্ট স্থান ও আনুষ্ঠানিক তথ্য না জানানোয় এমন কার্যকরী বিষয়ও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।

২০২৩ আইপিএলে ২৯৪টি ডট বল হওয়ার কথা জানায় বিসিসিআই। সে হিসেবে ১ লাখ ৪৭ হাজার গাছ কেরালা, আসাম, গুজরাট ও কর্ণাটকে রোপণের কথা জানানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে এ নিয়ে কোনো অফিসিয়াল তথ্য না থাকায় মাঝেমধ্যে প্রকল্পটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে দেখা যায় নেটিজেনদের। ২০২৪ সালে টাটা কোম্পানি আইপিএলের টাইটেল স্পন্সর হওয়ার পর আসরটিতে ডট বলের সংখ্যা ছিল ৩২৩টি। অর্থাৎ, সেবার গাছ রোপণের পরিমাণ হওয়ার কথা ১ লাখ ৬১ হাজার।

আরও পড়ুনঃ  ইমনের সেঞ্চুরিতে আবাহনীর বিপক্ষে মোহামেডানের ২৬৫

এদিকে, গত ২২ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে আইপিএলের অষ্টাদশ আসর। ৯ এপ্রিল পর্যন্ত যেখানে ৩১২টি বল ডট হওয়ার কথা জানা গেছে। অর্থাৎ, আসরের অর্ধেক শেষ না হতেই ইতোমধ্যে গাছের সংখ্যা দাঁড়াল– ১ লাখ ৫৬ হাজারে। কিন্তু মহতী এই উদ্যোগ চালুর পর থেকে কেবল ২০২৪ সালের ১৮ ডিসেম্বর গাছ লাগানোর একটি আনুষ্ঠানিক তথ্য জানিয়েছিল বিসিসিআই। যেখানে তারা বেঙ্গালুরুর সেন্টার অব এক্সিলেন্সি প্রাঙ্গণে গাছ রোপণের ছবি পোস্ট করে। আর সেটিকে বলা হয় চারলাখ-তম গাছ। ওই পোস্টের মন্তব্যের ঘরেই অনেকে জানতে চান বাকি ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯টি গাছ কোথায়!

Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *