অনলাইন ডেস্ক : প্লট বরাদ্দে জালিয়াতির অভিযোগে দুদকের করা পৃথক দুই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়সহ চার্জশিটভুক্ত ২৯ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার একটি আদালত।
আজ ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ২৯ এপ্রিল দিন ধার্য করেন আদালত।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের উপ পরিচালক সালাহউদ্দিন। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্তে প্রাপ্ত আরো চারজনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া।
শেখ হাসিনা ছাড়া এ মামলার অপর ১১ আসামি হলেন, জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য শফিউল হক,খুরশীদ আলম, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন,মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.),উপ-পরিচালক নায়েব আলী শরীফ,তদন্তপ্রাপ্ত জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার,সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
শেখ হাসিনার মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি শেখ হাসিনা রাজউকের প্রকল্পসমূহে প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন ফর্মে আবেদন করেননি। তার কোন আবেদন যাচাই বাছাই কমিটি কর্তৃক যাচাই অন্তে প্রাথমিকভাবে যোগ্য বলে বিবেচিত হয়নি। আবেদনকারীর আবেদন নির্ধারিত রেজিস্ট্রার বইতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।আসামি শেখ হাসিনা অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ নামে /পরিবারের উত্তরাধিকারসূত্রে অন্যান্য সদস্যদের মালিকানায় ঢাকা শহরে রাজউকের এখতিয়ারাধীন এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট বা আবাসন সুবিধা থাকার পরও তা হলফনামায় গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত আইন, বিধি ও নীতিমালা ও আইনানুগ পদ্ধতি লংঘনপূর্বক অবৈধভাবে প্রভাবিত করে রাজউকে কোন আবেদন না করে, দখলমূলে হস্তান্তরের লিখিত আবেদন করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ (দশ) কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। তা নিজ নামে রেজিস্ট্রিভুক্ত করে নেন এবং সরকারি জমি আত্মসাত করে নিজ ভোগদখলে রেখেছেন।
ক্ষমতার অপব্যবহার করে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠার সরকারি প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে ১৪ জানুয়ারি সজীব ওয়াজেদ জয় ও তার মা সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান। মামলাটি তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তদন্তে প্রাপ্ত আরো দুইজনসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক এস এম রাশেদুল হাসান।
শেখ হাসিনা ও জয় ছাড়াও এ মামলায় চার্জশিটভুক্ত অপর ১৫ আসামি হলেন-জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন,সচিব শহিদ উল্লাহ খন্দকার,রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সহকারী পরিচালক মাজহারুল ইসলাম, পরিচালক কামরুল ইসলাম, উপ- পরিচালক নায়েব আলী শরীফ, সদস্য মো. নুরুল ইসলাম,তদন্ত প্রাপ্ত আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন ও সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
শেখ হাসিনা-জয়ের মামলার চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামি সজীব ওয়াজেদ জয় রাজউকের প্রকল্পসমূহে প্লট বরাদ্দের জন্য রাজউক বরাবরে কোন আবেদন করেন নাই। আবেদনকারীর আবেদন নির্ধারিত রেজিস্ট্রার বইতেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আসামি শেখ হাসিনা তাঁর ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে ও তাঁর ছেলে আসামি সজীব আহমেদ ওয়াজেদ উভয়ে লাভবান হওয়ার হীন উদ্দেশ্যে অপরাধজনক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে তাঁর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে সরকারের সংরক্ষিত কোটায় পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্প এলাকায় ১০ কাঠা আয়তনের একটি প্লট বরাদ্দের বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
আসামি সজীব ওয়াজেদ জয় আপন মাকে অবৈধভাবে প্রভাবিত করে রাজউকে নিয়ম নীতি অনুযায়ী আবেদন না করে প্রকল্পে ১০ কাঠার প্লট বরাদ্দ নিয়ে তা নিজ নামে রেজিস্ট্রিভুক্ত করে সরকারি জমি আত্মসাৎ করে ভোগদখলে রেখেছেন।-বাসস