স্টাফ রিপোর্টার: তুর্কির সুলতান সুলেমানের বাগানের সেরা আনার ফল ‘হিকাজ’ এখন চাষ হচ্ছে রাজশাহীতে। শুধু হিকাজ নয়, বিশ্বের ২০টি দেশের ৬০ প্রজাতির আনার চাষ হয় ব্যাংকের কর্মকর্তা আহমুদুর রহমান সুজনের ছাদ বাগানে। সুজনের বাগানে আজারবাইজানের টকটকে লাল, চায়নার সবুজ, জর্ডানের কালো, ইটালির বীজবিহীন আনার বা ডালিমও চাষ হচ্ছে।
তাই রাজশাহীর সোনালী ব্যাংকের কর্মকর্তা আহমুদুর রহমান সুজন পরিচিতি পেয়েছেন আনার কিং নামে। তার নগরীর শাহমখদুম থানাধীন কয়েরডাঁরা এলাকায় প্রায় ১৬০০ বর্গ ফুট ছাদে তিনি গড়ে তুলেছেন এমন ছাদ বাগান।
পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ১২০০ জাতের বেদানার গাছ। এর মধ্যে আহমুদুর রহমান সুজনের সংগ্রহে রয়েছে ৬০ প্রকার। অধিকাংশে গাছেই ঝুলতে দেখা গেছে টকটকে লাল বেদানা। বাগানটিতে উল্লেখযোগ্য গাছগুলোর মধ্যে রয়েছে ভাগুয়া, সুপার ভাগুয়া, মৃদুলা, আরক্তা, সোলাপুর লাল, অস্ট্রেলিয়ান, থাই, মেক্সিকান, ভারত, পাকিস্তানি, পারফিয়াংকা, ইরানি, গুজরাটি, রোসাভায়া, এনজেল রেড, পেরূ কিং, সফট সীড, এভার সুইট।
রাজশাহী কৃষি অফিস বলছে, এ অঞ্চলের আবহাওয়াতেও বেদানা চাষ করা সম্ভব। বীজ ও কলম থেকেই জন্ম নেয় বেদানা গাছ। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এ গাছের চারা রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের এক থেকে দু’বছরের মধ্যে বেদানার ফলন আসতে শুরু হয়।
দানাদার বেদানার গাঢ় রং, অতি রসালো এবং নরম বীজের কারণে বাজারে আমদানিকৃত বেদানার তুলনায় অনেকটা সুস্বাদু। ইদানিং অনেকেই বাড়ির ছাদে ছাদ কৃষিতে মেতে উঠলেও রাজশাহীতে প্রথমবারের মতো বিভিন্ন প্রকার বেদানার চারা রোপণ করে আলোচনায় এসেছেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তা।
সুজন জানান, আনার উৎপাদনে বেশ পরিচিত নাম ভারতের ঝাড়খন্ড। রাজশাহীর আবহাওয়ার সঙ্গে ঝাড়খন্ডের অনেকটা মিল রয়েছে। তার বাগানে বিশ্বের ২০টি দেশ থেকে আনা অন্তত ৮০ প্রজাতির আনারের চারা পরীক্ষামূলকভাবে ছাদে ও বাগানে রোপণ করে পরিচর্যা শুরু করেন। নানা প্রতিবন্ধকতা আর কাঙ্ক্ষিত ফলন না পেয়ে অনেক প্রজাতির গাছ ফেলে দেন। ৩ থেকে ৪ বছরে ভালো ফলন পান ৬০ প্রজাতির আনারে। তাই বর্তমানে তার বাগানে ৬০ প্রজাতির আনার রয়েছে।
সুজনের সহযোগীতায় আনার চাষ শুরু করছেন রাজশাহীর একাধিক উদ্যোক্তা। তাদের মধ্যে একজন আলী আজগর। তিনি বলেন, গুনে, মান, ভালো ফলনে লাভ হলে শুরু করবেন বানিজ্যিক উৎপাদন। আনার, বেদানা বা ডালিম নামেও পরিচিত। আদি নিবাস পারস্যে। ফলটি রূপকথার গল্পে উপস্থাপিত হত যৌবন ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে। আনার খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি উপকারিতাও অনেক। শরীর সুস্থ ও জীবনের সজীবতা ধরে রাখতে এর ভূমিকা অনন্য।
অপর উদ্যোক্তা মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের মাটিতে এবং ছাদের উপর বিদেশি বেদানা চাষ করা সম্ভব এটা আমাদের জানা ছিল না। এছাড়া বেদানাগুলোও যেমন রসালো তেমন সুমিষ্ট। রীতিমতো অনেকেই চারা সংগ্রহ করছেন এবং পরামর্শ নিচ্ছেন ওই ব্যাংক কর্মকর্তার কাছে।
আহমুদুর রহমান সুজন আরও বলেন, আমি মহামারি করোনার মধ্যে ছাদ বাগান শুরু করি। বিভিন্ন মাধ্যম দিয়ে বিদেশি বেদানা বা আনাড় গাছের চারা সংগ্রহ করি। যেমন আমার পরিচিত একজন কৃষিবিদ অস্ট্রেলিয়া থেকে দুটি বেদানার চারা আমাকে এনে দিয়েছিলেন। সেই গাছে প্রচুর পরিমাণ বেদানা ধরে। কারণ আমাদের দেশের মাটি এবং আবহওয়ার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান বেদানার চারা। এগুলো প্রথম বছর থেকেই ফল দেবে এবং প্রতিটি বেদানা ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্রাম ওজনের হয়ে থাকে। যেমন রসালো এবং দানাযুক্ত তেমন সুমিষ্ট।
তিনি আরও বলেন, গাছগুলো পরিচর্যায় মাটি, গবর, সবজি, পচা পানি দিয়ে জৈব সার তৈরি করে গাছগুলোতে ব্যবহার করা হয়। তবে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে গাছে কোনো প্রকার পানি জমতে দেওয়া যাবে না। পানি নিস্কাশন ব্যবস্থা অবশ্যই থাকতে হবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, ‘রাজশাহীতে ৬০ ধরনের আনার চাষ হচ্ছে বিষয়টি আমার জানা নেই। যিনি চাষ করছেন তিনি আমাদের জানায়নি। তবে বিষয়টি আমরা খোঁজ নেব।’