স্টাফ রিপোর্টার: সৌদি আরবে কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে নিহত রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার চার শ্রমিকের মরদেহ গ্রামে এসেছে। দুটি গ্রামের এই চার শ্রমিকের মরদেহ আসার পর গ্রাম দুটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। শোকে স্তব্ধ হয়ে ওঠে গ্রাম দুটি।
গত ১৪ জুলাই সৌদির দাম্মামের হুফুফ শহরে একটি সোফা কারখানা অগ্নিকান্ডের ঘটনায় নয়জন নিহত হন। এরমধ্যে বাংলাদেশী সাতজন, যাদের চারজনের বাড়ি রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার বারইপাড়া ও বড়মাধাইমুড়ি গ্রামে। বুধবার দুই গ্রামের চারজনেরই মরদেহ গ্রামে ফিরেছে। এ সময় গ্রাম দুটিতে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
নিহতরা চার শ্রমিক হলেন- বারইপাড়া গ্রামের জফির উদ্দিনের ছেলে রুবেল হোসাইন, একই গ্রামের মো. জমিরের ছেলে মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, সাজেদুলের ভাতিজা আরিফ হোসেন রুবেল ও বড়মাধাইমুরি গ্রামের আনিসুর রহমান সরদারের ছেলে ফিরুজ আলী সরদার।
এদের মধ্যে প্রবাসী রুবেল হোসাইনের সঙ্গে মোবাইলের ভিডিও কলেই মরিয়ম খাতুনের বিয়ে দিয়েছিল পরিবার। এরপর আসি আসি করেও ছুটি না পেয়ে রুবেলের বাড়ি আসা হয়নি। নববধূর মুখও দেখা হয়নি। রুবেল সৌদি আরব থেকে ফিরলেন জীবন থেকেই ছুটি নিয়ে। স্ত্রীর মুখ না দেখা রুবেল পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা আনতে সৌদি যান ছয় বছর আগে। স্বামীর মরদেহ আসার পর কখনও কাঁদছিলেন, কখনও শোকে পাথর হয়ে যাচ্ছিলেন কলেজছাত্রী মরিয়ম।
তিনি জানান, মারা যাওয়ার আগের রাতেও রুবেলের সঙ্গে তার কথা হয়। দেশে আসার জন্য শুক্রবার কাগজপত্র জমা দিয়ে কারখানায় যাবেন বলে জানিয়েছিলেন রুবেল। শুক্রবার (১৪ জুলাই) রাতে আবার কথা বলবেন জানিয়েছিলেন। তাই রাতে কলও দিয়েছিলেন মরিয়ম। রাত নয়টা পর্যন্ত ফোন বেজেছে, কেউ ফোন ধরেনি। এরপর ফোন আর বাজেনি। পরের দিন সকাল ৮টার দিকে রুবেলের প্রবাসী বড় ভাই ফোন করে জানান রুবেল মারা গেছেন।
তিন ভাইয়ের মধ্যে রুবেল সবার ছোট ছিলেন। স্থানীয় দালালকে ১৬ কাঠা জমি লিখে দেওয়া ছাড়াও দেড় লাখ টাকা নগদ দিয়ে ২০১৬ সালে সৌদি আরব পাড়ি জমান রুবেল। তার বড় দুইভাই আগে থেকেই প্রবাসী। বড়ভাই সৌদি আরব এবং মেজে ভাই দুবাই থাকেন। বারইপাড়া গ্রামের শাহাদাত হোসাইনের একমাত্র ছেলে আরিফ হোসেন রুবেল সৌদি আরব যান আট মাস আগে। ফিরুজ যান আটমাস আগে। আর আগে থেকেই সৌদিতে থাকা চাচা সাজেদুল নিয়ে গিয়েছিলেন আরিফকেও। কাজের ব্যবস্থা করেছিলেন একই কারখানায়।
বুধবার সকালে প্রথমে ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আনা হয় সাজেদুল ইসলাম ও আরিফের মরদেহ। সম্পর্কে চাচা ভাতিজা তারা। এরপর রুবেল ও ফিরুজের মরদেহ আসে। তাদের হারিয়ে পাগল প্রায় স্বজনেরা। আশেপাশের এলাকাবাসীও এক নজর মরদেহ দেখতে ভিড় জমায়। পরে একে একে সবার জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে মরদেহ দাফন করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ এফ এম আবু সুফিয়ান বলেন, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে চারজনের মরদেহ ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছায়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহগুলো নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। সরকারি উদ্যোগে চারজনের মরদেহ আনা হয়েছে।