স্টাফ রিপোর্টার: করোনাকালীন প্রণোদনার অর্থ আত্মসাৎ, বিনামূল্যের ডিপ্লোমা নার্সিং প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা লোপাটসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নার্সিং সুপারিনটেনডেন্ট সুফিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে। তাঁর অনুগত হওয়ায় সরাসরি করোনা রোগীর সেবা না করেও অনেকে পেয়েছেন সম্মানী। অনিয়মের বিরুদ্ধে বললেই করেন বদলি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কাজ হয়নি। বরং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের কর্মকর্তাকে হাত করে বেড়েছে সুফিয়ার ‘নার্সগিরি’।
জানতে চাইলে সুফিয়া খাতুন বলেন, ‘নার্সরা কেন অভিযোগ করছেন, আমি জানি না। এসব করে লাভ হবে না। করোনাকালে দায়িত্ব পালনকারী সবাই প্রণোদনার টাকা পেয়েছেন। কারও কাছ থেকে প্রশিক্ষণের জন্য টাকা নেওয়া হয়নি।’ তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘এখানে বেশির ভাগ নার্স কম বয়সী। করোনাকালে রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি এড়াতে বয়স্কদের চেয়ে কম বয়সীদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেক স্তন্যদায়ী মা ছিলেন।’
এসব অভিযোগ তদন্তে গত ৬ জুলাই নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন ও শৃঙ্খলা) উপসচিব নাসির উদ্দীন রাজশাহী বিভাগীয় সহকারী পরিচালক (নার্সিং) সুষ্মিতা দাসকে তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। গত মঙ্গলবার সুফিয়া খাতুন ছাড়াও ২৬ নার্সের বক্তব্য নিয়েছেন তিনি।
ভুক্তভোগীরা জানান, সরকার ঘোষিত বিশেষ সম্মানী করোনা রোগীদের সরাসরি সেবায় নিয়োজিত রামেক হাসপাতালের অনেক নার্স পাননি। তারা এ জন্য সুপারিনটেনডেন্ট সুফিয়াকে দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ, সরাসরি সেবা না দিয়েও সুফিয়ার ‘অনুগত’ হওয়ায় নার্সিং সুপারভাইজার আকলিমা খাতুন, মিনতি রানী ঘোষ, সীমা রানী বাগচী, সরস্বতী বালা বিশ্বাস, মোসলেমা খাতুন, নাদিরা বেগমসহ অনেকে সম্মানী পেয়েছেন।
একইভাবে নার্সদের আবাসন ভাতার জন্য গত ১৬ মার্চ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব এবং নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) রামেক হাসপাতাল শাখা। সংগঠনের সভাপতি শাহাদাতুন নুর লাকি বলেন, ‘সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নার্সরা পেলেও আমরা বঞ্চিত। শুনেছি, আবাসন ভাতা তুলে সুফিয়া মেরে দিয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কিছু বললে প্রভাব খাটিয়ে বদলি, এমনকি শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করা হয়।’
সিনিয়র স্টাফ নার্স নাসরিন আকতার বলেন, ‘স্তন্যদান করালেও করোনা ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনে বাধ্য করেন সুফিয়া এবং আমি আক্রান্ত হয়েছি। কিন্তু প্রণোদনা, আবাসন ভাতা কিছুই পাইনি।’ বিএনএ রামেক হাসপাতাল শাখার সভাপতি শাহাদাতুন নুর লাকির অভিযোগ, রামেকে বেসরকারি ডিপ্লোমা নার্সিং প্রশিক্ষণ ফ্রি। কিন্তু গত বছর সুফিয়ার নেতৃত্বে ফি বাবদ ৩ থেকে ৬ হাজার করে ৪০ লাখ টাকার বেশি আদায় করা হয়। টাকা গ্রহণের নথিতে কোষাধ্যক্ষ রেজাউল করিম চৌধুরীর স্বাক্ষর থাকলেও কাউকে রসিদ দেওয়া হয়নি।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফ এম শামীম আহাম্মদ বলেন, ‘সুফিয়া খাতুনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে এগুলো ভুয়া (ফেক) মনে হয়েছে।