স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী নগরীর শিরোইল এলাকায় শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান বাস টার্মিনাল অনেকটা ফাঁকাই পড়ে থাকে। আর বাস পার্কিং করে রাখা হয় টার্মিনালের সামনে সড়কের ওপর। দিনের পর দিন যত্রতত্রভাবে বাস পার্কিং করে রাখায় ওই এলাকার নিত্যসঙ্গী যানজট। এ কারণে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের প্রতি নগরবাসীর ক্ষোভ দীর্ঘদিনের।
তবে হঠাৎ করেই এভাবে বাস পার্কিং করে রেখে জনভোগান্তি সৃষ্টির বিরুদ্ধে মামলা করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েছে ট্রাফিক পুলিশ। পরিবহন শ্রমিকেরা একজন ট্রাফিক সার্জেন্টকে রীতিমতো ধাওয়া করেছেন। শ্রমিকেরা কয়েক মিনিট সড়কও অবরোধ করে রাখেন। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। সোমবার বেলা ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে ট্রাফিক কার্যালয়ে উভয়পক্ষ আলোচনায় বসে।
ট্রাফিক বিভাগ বলছে, সড়কে যত্রতত্রভাবে বাস রাখার জন্য রোববার সড়ক পরিবহন আইনে তিনটি মামলা করা হয়েছে। কিন্তু সোমবার সকালেও একইচিত্র দেখা যায়। এ কারণে একটি বাসের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় এবং মামলা দেওয়ার জন্য আরও দুটি বাসের কাগজপত্র নেওয়া হয়। এ সময় শ্রমিকেরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদ শুরু করেন। এরপর শিরোইল ঢাকা বাস স্ট্যান্ডের সামনে এসে সড়কের একপাশ অবরোধ করেন। এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই অতিরিক্ত পুলিশ এসে পরিস্থিতি শান্ত করে।
তবে ফুটপাতের একজন কাপড় বিক্রেতা জানান, শ্রমিকেরা বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট রাশেদুল ইসলাম ভিডিও করছিলেন। এ সময় শ্রমিকেরা তাকে ধাওয়া দেন। শ্রমিকদের ধাওয়ায় তিনি পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ নিয়ে কথা বলতে সার্জেন্ট রাশেদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
নগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) সাইদুর রহমান বলেন, ‘ধাওয়া দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে কি না তা আমার জানা নেই। তবে দুইদিনে চারটি মামলা দেওয়ার কারণে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটেছে। দ্রুতই আমরা পরিস্থিতি শান্ত করে বাস মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসেছি। আমাদের অফিসেই তাদের ডাকা হয়েছিল। তারা কথা দিয়েছেন যে, ওই এলাকায় তারা আর সড়কে গাড়ি পার্কিং করবেন না। তারপরও যদি তারা গাড়ি রাখেন তাহলে আমাদের ব্যবস্থা নিতেই হবে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরীকে কয়েকদফা ফোন করা হলেও তারা ধরেননি। রাজশাহী বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাফকাত মঞ্জুর বলেন, ‘বাসের শ্রমিকেরা রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে চলে যায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাস সড়কেই থাকে। এখন পুলিশ পুলিশের কাজ করেছে। এ নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল। তবে আমরা পুলিশের সঙ্গে বসেছিলাম। সমস্যার সমাধান হয়েছে। এখন থেকে কেউ যাতে সড়কে গাড়ি না রাখেন সে বিষয়টি সবাইকে বলে দেওয়া হয়েছে।’
শিরোইল এলাকাকে যানজটমুক্ত করতে নগরীর উপকণ্ঠ নওদাপাড়ায় ২০০৪ সালে একটি বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়েছে। তারপরও শিরোইল বাস টার্মিনাল বন্ধ করা হচ্ছে না। সিটি করপোরেশন এবং পুলিশের সঙ্গে নগরবাসীর যে কোন আলোচনায় শিরোইলের সমস্যার কথা উঠে আসে। তাই শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে হস্তক্ষেপ করতে হয়। গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর তিনি শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসেন। সেদিন সিদ্ধান্ত হয়, ১ নভেম্বর থেকেই শিরোইলের সব বাস নওদাপাড়ার টার্মিনালে সরিয়ে নেওয়া হবে। এ জন্য ওই টার্মিনালের কিছু সংস্কার কাজও শুরু করে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ)।
কিন্তু এরপর প্রায় ৯ মাস কেটে গেলেও সংস্কার কাজ শেষ করতে পারেনি আরডিএ। আর সংস্কার কাজ শেষ না হওয়ার অজুহাতে শিরোইলের বাস নওদাপাড়ায় নেওয়া হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে আরডিএর ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক বলেন, ‘কাজ এখনও চলমান রয়েছে, শেষ হয়নি। দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে।’