স্টাফ রিপোর্টার: কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন বাস্তবায়নে রাজশাহীতে নীতি গবেষণা ও অধিপরামর্শ বিষয়ক সুপারিশ ও প্রস্তাবনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা বলেছেন, কৃষিজমি রক্ষা করতে হলে সবাই মিলে গণআন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে কৃষিজমি রক্ষা করা যাবে না।
সোমবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত রাজশাহী নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় এ পরামর্শক সভার আয়োজন করে বেসরকারী গবেষণা সংস্থা বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক)। সভায় বক্তারা বলেন, আইনে জমির শ্রেণি পরিবর্তন নিষিদ্ধ হলেও রাজশাহী জেলাজুড়ে প্রতিনিয়ত কৃষিজমি খনন করে ধানী জমিকে পুকুরে পরিণত করা হচ্ছে। প্রভাবশালীরা তাদের ক্ষমতার দাপটে কৃষকের কাছ থেকে জোর করেও ধানী জমি ইজারা নিয়ে পুকুর কাটছেন। কৃষকেরা অসহায় হয়ে পড়েছেন।
সভায় সিপিবির নেতা অজিত কুমার মণ্ডল নিজের এ রকম অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। জানান, পুঠিয়া উপজেলার শক্তিপাড়া গ্রামে তার কিছু ফসলী জমি ছিল। প্রভাবশালীরা এই জমির আশপাশের সব জমি ইজারা নিয়ে পুকুর কেটে ফেলে। কিন্তু তিনি জমি দিতে রাজি হননি। ৯ বছর ধরে এই জমি তিনি আঁকড়ে ধরে ছিলেন। কিন্তু একসময় আশপাশে পুকুর খননের কারণে তার জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বাধ্য হয়ে তাকেও ওই জমি পুকুর খননের জন্য ইজারা দিতে হয়েছে। প্রভাবশালীরা এখন মাছচাষ করছেন।
সভায় নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, আইনে পুকুর ভরাটে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পুকুর খনন করা হচ্ছে। বিলগুলোও এখন দখল হয়ে গেছে। উপজেলা পর্যায়ে দেখা যায়, ঘুরেফিরে একই ব্যক্তি উপজেলা প্রশাসনের নানা কমিটিতে আছেন। ফলে প্রশাসনের জবাবদীহিতা নিশ্চিত হয় না। তাই যারা যে বিষয়ে অভিজ্ঞ তাদের সেই বিষয়ের কমিটিতে রাখা দরকার।
সভায় আরও বক্তব্য দেন- জেলা কৃষক লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ তাজবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ওয়াজেদ আলী খান, জাতীয় পার্টির নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ডালিম, জেলা বাসদের সদস্য সচিব শামসুল আবেদীন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক দেবাশিষ প্রামানিক দেবু, কৃষক সমিতির রাজশাহী জেলার সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম পিয়ারুল, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষকফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সদস্য আব্বাস হোসেন, নারীনেত্রী রহিমা খাতুন, তানোর উপজেলা কৃষক সংগঠনের সভাপতি জায়েদুল ইসলাম প্রমুখ।
সভাপতিত্ব করেন স্বশিক্ষিত কৃষিবিজ্ঞানী ও বঙ্গবন্ধু পদকপ্রাপ্ত কৃষক নূর মোহাম্মদ। সভা পরিচালনায় ছিলেন গবেষক পাভেল পার্থ। সভায় বারসিকের অঞ্চলিক সমন্বয়ক শহিদুল ইসলামসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।