মীর তোফায়েল হোসেন: কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার বিএমটি চূড়ান্ত পরীক্ষায় রাজশাহীর নগরীর বড়কুঠি এলাকার আইন কলেজ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব আব্দুর রাজ্জাকের সহযোগিতায় নকল সরবরাহ করতে গিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েন দুই কক্ষ পরিদর্শক ফজলে রাব্বী ও আব্দুল মান্নান। পরেরদিন বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয় ঘটনাটি। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের নজরে আসলেও অদৃশ্য শক্তির জোরে এখনও তারা দায়িত্ব পালন করছেন।
শুধু তাই নয়, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে তারা কৌশল পাল্টে উত্তরপত্র তৈরি করে তুলে দিচ্ছেন পরীক্ষার্থীদের হাতে। আর তা দেখে দেখে লিখেই জিপিএ -৫ আর গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে যাচ্ছেন তারা। মেধাবীদের পিছনে ফেলে নামিদামি কলেজে স্থান করে নিচ্ছেন শতভাগ নকল করে পাশ করা এসব শিক্ষার্থীরা। মাঝখানে নকল বাণিজ্য করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এই চক্রটি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরীক্ষার শুরু থেকেই কেন্দ্রের ভিতরেই প্রশ্ন দেখে বই কেটে উত্তরপত্র তৈরি করেন দায়িত্বে থাকা শিক্ষকরাই। পরে তা পকেটে পুরে কেন্দ্রের বাইরে নিয়ে নির্ধারিত ফটোকপির দোকানে শতশত কপি করে আবার ফিরে আসে কেন্দ্রে। পৌঁছে দেওয়া হয় পরীক্ষার্থীদের হাতে হাতে। যে কোনো পরিস্থিতি এড়াতে পাহারায় থাকেন কেন্দ্র পরিদর্শরা। আর এসবের নেতৃত্বে থাকেন কেন্দ্র সচিব। এসব সুযোগ সুবিধার জন্য পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেয় হয় নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি। আর এই টাকা ভাগ বাটোয়ারা হয় নীচ থেকে উপর পর্যন্ত। দীর্ঘদিন থেকেই চলছে এমন অপরাধ কর্মকাণ্ড। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই কি চলছে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড। তা না হলে বছরের পর বছর এমন নকল উৎসব হয় কি করে?
কেন্দ্র সচিব আব্দুল রাজ্জাক সময়ের কথা ২৪ ডটকমকে সে সময় জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রে নকলের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। পরীক্ষা কেন্দ্রে কোন প্রকার নকল হয় না বলেও তার দাবি। তিনি বলেন, যদি কিছু হয়ে থাকে তবে তা আমার জানা নেই। অন্য কেউ করতে পারে। তবে এমন ঘটনা ঘটলে আমি ব্যবস্থা নেব।
বিষয়টি নিয়ে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ আলী আকবর খান মুঠোফোনে জানান, হাতেনাতে নকল ধরার বিষয়ে আমি কিছু জানি না। কন্ট্রোলার সাহেব আমাকে বিষয়টি জানায়নি। বিষয়টি বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার হয়েছে জানালে তিনি বলেন, নিউজগুলো আমি দেখিনি অসুস্থ ছিলাম। আপনারা একটু জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানান। আমি এখনি খোঁজ নিচ্ছি। প্রয়োজনে একজন ভিজিটর পাঠাবো। কোন ভাবেই নকল করতে দেয়া যাবে না।
কিছুক্ষণ পর আবার তাঁকে ফোন দিলে সুর পাল্টিয়ে চেয়ারম্যান মোঃ আলী আকবর খান বলেন, আপনারা নিউজ করেছেন। কিন্তু আমি তাদের সাথে কথা বলেছি তারা আমাকে বলেছে এটা বাইরের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক, শিক্ষা অফিসার নিজে কেন্দ্রে গিয়েছিলেন। আর সাংবাদিকদেরতো পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রবেশ নিষেধ। তবে কক্ষ পরিদর্শকের হাতে নকল কেনো জানতে চাইলে তিনি বলেন, কক্ষ পরিদর্শককে আপনারা ধরেছিলেন? তাহলে বিষয়টা আমি দেখছি।
শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভালো কলেজে সুযোগ পেতে চূড়ান্ত পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা থাকে শিক্ষার্থীদের। উদ্বেগ উৎকণ্ঠা থাকে অভিভাবকদের মধ্যেও। অনেকেই ভালো ফলাফল করতে পারে না। ভালো কলেজে পড়ার সুযোগও হয় না অনেক শিক্ষার্থীর। কিন্তু সারাবছর পড়াশোনা না করে শুধু মাত্র নকল করে জিপিএ -৫ আর গোল্ডেন জিপিএ পেয়ে নামিদামি কলেজে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে এ ধরনের শিক্ষার্থীরা। বঞ্চিত হচ্ছে মেধাবীরা। আর এসব কাজে খোদ শিক্ষকরাই জড়িত। যা অত্যন্ত দুঃখ জনক। তারা বলেন এতে করে শিক্ষার মেরুদন্ড ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।