স্টাফ রিপোর্টার: পরিত্যক্ত একটি গাড়ি পড়ে আছে অফিসের সামনে। গাড়ির সামনের একটি যন্ত্রাংশে জমেছে বৃষ্টির পানি। সেই পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে এডিশ মশার লার্ভা। শনিবার সকালে রাজশাহী নগরীর রেলগেট এলাকায় এ দৃশ্য দেখা গেল জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের সামনে।
রাজশাহীতে কয়েকদিন ধরে অল্প অল্প বৃষ্টি হচ্ছে। এখানে-ওখানে জমছে পানি। সেখানে ডিম পাড়ছে এডিশ মশা। বেড়ে উঠছে এডিশের লার্ভা। তবে যারা এভাবে পানি জমিয়ে রাখছেন, তাদের বিরুদ্ধে চলছে না সিটি করপোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের কোন অভিযান।
যদিও গত জুলাইয়ে ঘোষণা দিয়ে ১৫ দিনের বিশেষ অভিযান শুরু করে রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক)। অভিযানে পানি জমিয়ে রাখায় কয়েকটি বেশকিছু দোকান মালিককে জরিমানা করা হয়। এরপর আর অভিযান চলেনি। এখন মশক শাখা শুধু লার্ভা ধ্বংসের কাজ করছে।
রাসিকের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মো. নুরুজ্জামান বলেন, ‘প্রতিটি ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পর্যায়ক্রমে ওষুধ ছিটিয়ে লার্ভা ধ্বংস করার কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু মানুষ যতদিন সচেতন না হবে ততদিন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। এখনও নগরবাসী নিজ নিজ বাড়ির আশপাশে কিংবা ছাদে পানি জমে থাকার ব্যাপারে উদাসীন। সবার উচিত সেটা খেয়াল রাখা যেন কোথাও পানি না জমে। যারা পানি জমিয়ে রাখছেন তাদের বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন অভিযান শুরু করলেও আপাতত তা বন্ধ। এটি আবারও শুরু করা দরকার।
জানতে চাইলে রাসিকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সিটি করপোরেশনে অনেক দিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পদে কেউ ছিলেন না। সচিব নিজেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা শুরু করেছিলেন। তাঁর বদলির পর অভিযান থেমে যায়। কয়েকদিন হলো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট যোগদান করেছেন। দ্রুতই আবার অভিযান শুরু হবে।’
এদিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে এখনও ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কমেনি। শনিবারও হাসপাতালটিতে ২০৩ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি ছিলেন। রাজশাহী ছাড়াও আশপাশের বিভিন্ন জেলায় তাদের বাড়ি। এই ২০৩ জনের মধ্যে ১৪০ জন নিজ নিজ জেলা ছেড়ে অন্য কোথাও যাননি। অর্থাৎ স্থানীয়ভাবেই তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে ডেঙ্গু মৌসুমের প্রথমদিকে ভর্তি হওয়া রোগীদের প্রায় সবাই ছিলেন ঢাকা থেকে আসা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শনিবার সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় এই হাসপাতালে নতুন ৪৪ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন নয়জন। চলতি মৌসুমে হাসপাতালটিতে ১ হাজার ৭৮১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এক মৌসুমেই এটিই হাসপাতালে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হওয়ার রেকর্ড।
এ পর্যন্ত ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১ হাজার ৫৬৯ জন ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর মারা গেছেন নয়জন। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ১ হাজার ৭৪ জনই আক্রান্ত হয়েছেন নিজ নিজ জেলায়। অন্যরা ঢাকায় আক্রান্ত হয়ে বাড়ি আসার পর হাসপাতালে ভর্তি হন।
হাসপাতালের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি আছেন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শরিফুল ইসলাম (২৫)। তার বাড়ি পাবনার বেড়া উপজেলায়। শরিফুলের মামা আমোদ আলী বলেন, ‘ভাগ্নে ঢাকায় একটা দোকানে কাজ করে। সেখান থেকে জ¦র নিয়ে এসেছে। হাসপাতালে ভর্তির পর জানা গেল ডেঙ্গু। এ পর্যন্ত চিকিৎসায় কোন সমস্যা হয়নি। ওষুধ-স্যালাইন সব হাসপাতাল থেকে দিচ্ছে।’
একই কথা জানালেন ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের রোগী মো. সিজানের (১৮) মামা ইকবাল হোসেন। তিনি জানান, তাদের বাড়ি মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায়। তার ভাগ্নে বাড়ি ছাড়া কোথাও যায়নি। বাড়িতেই সে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। হাসপাতাল থেকে তার সব ধরনের চিকিৎসা করা হচ্ছে।
হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এফএম শামীম আহম্মদ বলেন, ‘রোগী বেশি হলে ব্যবস্থাপনায় একটু সমস্যা হয়। কারণ, ডেঙ্গু রোগীকে একটু আলাদাভাবে মশারির ভেতরে রাখতে হয়। তাছাড়া অন্য কোন সমস্যা নেই। পর্যাপ্ত ওষুধ-স্যালাইন আছে। কিছুই রোগীর স্বজনকে কিনতে হচ্ছে না। সর্বোচ্চ সেবা দিতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’